ETV Bharat / state

আলাদা রাজ্য হোক বা না হোক, বঞ্চনা থেকে মুক্তি চায় উত্তরবঙ্গ - Separate State Controversy

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 31, 2024, 9:59 AM IST

Updated : Jul 31, 2024, 8:54 PM IST

Separate State Controversy: বাংলাভাগ নিয়ে ফের রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে ৷ সুকান্ত মজুমদার উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে জোড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ৷ এই নিয়ে সুকান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন আরেক বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় ৷ কিন্তু আলাদা রাজ্যের দাবিতে অনড় কেপিপি ৷ যদিও প্রত্যেকেই উত্তরবঙ্গের বঞ্চনার অবসান চান ৷

Separate State Controversy
রাজ্য হোক না না হোক, বঞ্চনা থেকে মুক্তি চায় উত্তরবঙ্গ (ইটিভি ভারত)

জলপাইগুড়ি, 31 জুলাই: পশ্চিমবঙ্গকে কি ভেঙে দু’টুকরো করে দেওয়া উচিত ! উত্তরবঙ্গকে কি আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে দেওয়াটা ঠিক হবে ? নাকি উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া উচিত পশ্চিমবঙ্গের উত্তররের এই অংশকে !

গত কয়েকদিন ধরে এই নিয়েই নানা আলোচনা চলছে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ৷ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও ৷ বিজেপি বাংলা ভাগ করতে চায়, এই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ অন্যদিকে বিজেপির তরফেও বাংলা ভাগ না করার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছে ৷ তবে গেরুয়া শিবিরের ‘নানা মুনির নানা মত’ মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যেই চলে আসছে ৷ ফলে বিতর্ক থেমে যাওয়ার বদলে বরং বাড়ছে ৷

বঞ্চনা থেকে মুক্তি চায় উত্তরবঙ্গ (ইটিভি ভারত)

আর এই বিতর্কের মাঝেই উত্তরবঙ্গের বঞ্চনার অভিযোগ বারবার সামনে চলে আসছে ৷ অনেকে বলছে, বিষয়টি আজকের নয়৷ দীর্ঘদিনের ৷ সেই কারণেই কখনও কামতাপুর, কখনও কোচবিহার, বা কখনও গোর্খাল্যান্ডের রাজ্যের দাবি উঠেছে ৷

উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গ থেকে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রী পরিষদে জায়গা পেয়েছেন সুকান্ত মজুমদার ৷ তাঁকে দু’টি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে ৷ তার মধ্যে একটি উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়ন বিষয়ক ৷ সেই কারণে তিনি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দেন ৷ পরে সেই কথা নিজেই জানান সুকান্ত ৷

তার পরই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা ভাগের চক্রান্ত করার অভিযোগ তোলা হয় ৷ বঙ্গ-বিজেপির তরফে সেই অভিযোগ খারিজ করার প্রক্রিয়া যখন চলছে, সেই সময় রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ তথা গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অনন্ত মহারাজ দাবি করেন কোচবিহারকে আলাদা রাজ্য করে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ ফলে বিতর্ক আরও বাড়ে ৷

ইতিমধ্যে লোকসভায় ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার সাংসদ নিশিকান্ত দুবে একটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব রাখেন ৷ প্রস্তাবিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বাংলার দুই জেলা মালদা ও মুর্শিদাবাদকে রাখার কথা বলেন ৷ এর পরই এই নিয়ে বিজেপি আরও কোণঠাসা হয় ৷ তৃণমূল আরও বেশি করে সরব হয় ৷ বাংলায় বিজেপি বিরোধী আরও বেশ কয়েকটি দলও এই নিয়ে সরব হয় ৷

এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপির আরও এক সাংসদ ৷ তিনি জলপাইগুড়ির জয়ন্তকুমার রায় ৷ তিনি বলছেন, ‘‘আমরা সুকান্ত মজুমদারের প্রস্তাবকে দুশো শতাংশ সমর্থন করি । উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত । আর ইচ্ছে করেই বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে । রাজ্য সরকার বঞ্চিত করে রেখেছে । আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি । আমরা চাই উত্তরবঙ্গের সার্বিক বিকাশ হোক ।’’

উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপর তাঁর আস্থা নেই বলে সোজাসুজি জানাচ্ছেন এই বিজেপি সাংসদ ৷ তিনি উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন ৷ তাঁর মতে, ‘‘এখানকার মানুষের উন্নতির জন্য উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো যে সুবিধা পাচ্ছে, আমাদেরও পাওয়া দরকার । তা পেলে দীর্ঘদিনের রাজ্য সরকারের বঞ্চনা থেকে মানুষ বাঁচবে ।’’

পাশাপাশি তিনি কামতাপুরি, গোর্খাল্যান্ড বা গ্রেটার কোচবিহারের আন্দোলন নিয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ৷ দীর্ঘদিনের বঞ্চনার কারণেই এই আন্দোলন হচ্ছে বলে জয়ন্ত রায়ের দাবি ৷ তাই তিনি চাইছেন এই বঞ্চনার অবসান ৷ তিনি বলেন, ‘‘সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে আছি । উত্তর-পূর্ব ভারতে উন্নয়ন কী কী হয়েছে দেখে আসতে হবে । উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ জুড়ে গেলে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বাড়বে । সেক্ষেত্রে রাজ্যের তুলনায় কেন্দ্র বেশি বরাদ্দ করবে ৷ রাজ্য সরকারের সুবিধা হবে ।’’

তবে জয়ন্ত-সুকান্তর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নন কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির সভাপতি অমিত রায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গকে নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি আমাদের আছে । উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ জুড়ে কোনও লাভ হবে না । আমাদের দাবি যতক্ষণ না পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব । আমাদের দল আলাদা রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করে আসছে ৷’’

তবে পূর্ণরাজ্যের বদলে যদি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, তাতেও আপত্তি নেই কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির এই নেতার ৷ তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে জুড়ে দেওয়ার পক্ষে তিনি নন বলেই জানিয়েছেন ৷ পাশাপাশি তাঁর মতে, 2026 সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই সুকান্ত মজুমদার এই বক্তব্য রেখেছেন বলে জানিয়েছেন ৷

অমিত রায়ের দাবি, ‘‘উত্তরবঙ্গকে নিয়ে আলাদা কামতাপুর রাজ্য চাই । আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি আলাদা রাজ্য । এখানকার উন্নতি আলাদা রাজ্য হলেই হবে । এটাই একমাত্র পথ । কেন্দ্র সরকারকে এখানকার ভূমিপত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতে হবে । এরপরে এর সমস্যার সমাধান করতে হবে । যদি তারা আমাদের সঙ্গে বসে তাহলেই তাদের আমরা বিশ্বাস করব নতুবা তাদের বিশ্বাস করব না ।’’

উত্তরবঙ্গ যে বঞ্চিত, সেই বিষয়টি স্বীকার করেননি জলপাইগুড়িতে তৃণমূল পরিচালিত তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য ৷ তবে উত্তরবঙ্গের জন্য আরও উন্নয়নের প্রয়োজন, তা মেনে নিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ বিভেদ নয় ৷ আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ৷ আমরা বাংলাতেই থাকব ৷ আমরা সরকারের কাছে আশা রাখব, উন্নয়নের যে যে জায়গাগুলিতে আমরা পিছিয়ে আছি, সেগুলি যেন ত্বরান্বিত হয় ৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘যে অভিযোগ উঠছে, তা উঠলেও মিলিয়ে দেখতে হবে যে আমরা কোথায় ছিলাম আর কোথায় আছি ৷ গত 13 বছরে তৃণমূলের সরকার উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের নতুন পথ তৈরি করেছে ৷ উন্নয়নের তো কোনও শেষ হয় না ৷ আশা করব যে রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গের জন্য আরও উন্নয়ন করবে ৷’’

এতো গেল রাজনৈতিক নেতাদের কথা ৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ কী বলছেন ? জলপাইগুড়ির এক প্রবীণ নাগরিক প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গ যে বঞ্চিত এটা বাস্তব সত্য ৷ কারণ, উত্তরবঙ্গে দীর্ঘদিন কোনও মেডিক্যাল কলেজ হয়নি ৷ যেগুলি হয়েছে, সেগুলো ভালো মানের হয় ৷ এইমস হওয়ার কথা ছিল, সেটাও হয়নি ৷ যে প্রস্তাব সুকান্ত মজুমদার রেখেছেন, তা সমর্থনযোগ্য ৷ কারণ, ভৌগলিক কারণে অনুপ্রবেশ একটা বড় সমস্যা ৷ এটা বন্ধ করার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের কতটা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে ৷ তাই কেন্দ্র যদি এই এলাকা সংযুক্ত করে এবং যথাযথ অর্থ খরচ হয়, তাহলে উত্তরবঙ্গবাসীর উপকার হবে ৷’’

অন্যদিকে গৌতম দাস নামে আরও একজন বলেন, ‘‘উন্নয়নের নিরিখে দক্ষিণবঙ্গের থেকে উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত ৷ উত্তরবঙ্গবাসী এর থেকে মুক্তি চায় ৷ সবাই চায় উন্নয়ন হোক ৷ তাই উন্নয়নের স্বার্থে যদি আলাদা রাজ্য হয় বা কেন্দ্রের অধীনে যেতে হয় অথবা অন্য কোনও কমিটির অধীনে যেতে হয়, তাহলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই ৷’’ একই মত জলপাইগুড়ির আরও এক বাসিন্দা স্বপন সরকারের ৷ তিনি বলেন, ‘‘আলাদা রাজ্য চাই ৷ কারণ, বরাবর বঞ্চিত হয়ে রয়েছি ৷ আলাদা রাজ্য হলে অনেক উন্নতি হবে ৷’’

ফলে এই বিতর্কের জল শেষপর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, উত্তরবঙ্গের মানুষ যে বঞ্চনার অভিযোগ তুলছেন, তার সমাধান কীভাবে হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা ৷ কীভাবে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়, সেটাই এখন দেখার !

জলপাইগুড়ি, 31 জুলাই: পশ্চিমবঙ্গকে কি ভেঙে দু’টুকরো করে দেওয়া উচিত ! উত্তরবঙ্গকে কি আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে দেওয়াটা ঠিক হবে ? নাকি উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া উচিত পশ্চিমবঙ্গের উত্তররের এই অংশকে !

গত কয়েকদিন ধরে এই নিয়েই নানা আলোচনা চলছে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ৷ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও ৷ বিজেপি বাংলা ভাগ করতে চায়, এই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ অন্যদিকে বিজেপির তরফেও বাংলা ভাগ না করার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছে ৷ তবে গেরুয়া শিবিরের ‘নানা মুনির নানা মত’ মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যেই চলে আসছে ৷ ফলে বিতর্ক থেমে যাওয়ার বদলে বরং বাড়ছে ৷

বঞ্চনা থেকে মুক্তি চায় উত্তরবঙ্গ (ইটিভি ভারত)

আর এই বিতর্কের মাঝেই উত্তরবঙ্গের বঞ্চনার অভিযোগ বারবার সামনে চলে আসছে ৷ অনেকে বলছে, বিষয়টি আজকের নয়৷ দীর্ঘদিনের ৷ সেই কারণেই কখনও কামতাপুর, কখনও কোচবিহার, বা কখনও গোর্খাল্যান্ডের রাজ্যের দাবি উঠেছে ৷

উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গ থেকে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রী পরিষদে জায়গা পেয়েছেন সুকান্ত মজুমদার ৷ তাঁকে দু’টি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে ৷ তার মধ্যে একটি উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়ন বিষয়ক ৷ সেই কারণে তিনি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দেন ৷ পরে সেই কথা নিজেই জানান সুকান্ত ৷

তার পরই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা ভাগের চক্রান্ত করার অভিযোগ তোলা হয় ৷ বঙ্গ-বিজেপির তরফে সেই অভিযোগ খারিজ করার প্রক্রিয়া যখন চলছে, সেই সময় রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ তথা গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অনন্ত মহারাজ দাবি করেন কোচবিহারকে আলাদা রাজ্য করে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ ফলে বিতর্ক আরও বাড়ে ৷

ইতিমধ্যে লোকসভায় ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার সাংসদ নিশিকান্ত দুবে একটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব রাখেন ৷ প্রস্তাবিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বাংলার দুই জেলা মালদা ও মুর্শিদাবাদকে রাখার কথা বলেন ৷ এর পরই এই নিয়ে বিজেপি আরও কোণঠাসা হয় ৷ তৃণমূল আরও বেশি করে সরব হয় ৷ বাংলায় বিজেপি বিরোধী আরও বেশ কয়েকটি দলও এই নিয়ে সরব হয় ৷

এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপির আরও এক সাংসদ ৷ তিনি জলপাইগুড়ির জয়ন্তকুমার রায় ৷ তিনি বলছেন, ‘‘আমরা সুকান্ত মজুমদারের প্রস্তাবকে দুশো শতাংশ সমর্থন করি । উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত । আর ইচ্ছে করেই বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে । রাজ্য সরকার বঞ্চিত করে রেখেছে । আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি । আমরা চাই উত্তরবঙ্গের সার্বিক বিকাশ হোক ।’’

উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপর তাঁর আস্থা নেই বলে সোজাসুজি জানাচ্ছেন এই বিজেপি সাংসদ ৷ তিনি উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন ৷ তাঁর মতে, ‘‘এখানকার মানুষের উন্নতির জন্য উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো যে সুবিধা পাচ্ছে, আমাদেরও পাওয়া দরকার । তা পেলে দীর্ঘদিনের রাজ্য সরকারের বঞ্চনা থেকে মানুষ বাঁচবে ।’’

পাশাপাশি তিনি কামতাপুরি, গোর্খাল্যান্ড বা গ্রেটার কোচবিহারের আন্দোলন নিয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ৷ দীর্ঘদিনের বঞ্চনার কারণেই এই আন্দোলন হচ্ছে বলে জয়ন্ত রায়ের দাবি ৷ তাই তিনি চাইছেন এই বঞ্চনার অবসান ৷ তিনি বলেন, ‘‘সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে আছি । উত্তর-পূর্ব ভারতে উন্নয়ন কী কী হয়েছে দেখে আসতে হবে । উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ জুড়ে গেলে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বাড়বে । সেক্ষেত্রে রাজ্যের তুলনায় কেন্দ্র বেশি বরাদ্দ করবে ৷ রাজ্য সরকারের সুবিধা হবে ।’’

তবে জয়ন্ত-সুকান্তর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নন কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির সভাপতি অমিত রায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গকে নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি আমাদের আছে । উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ জুড়ে কোনও লাভ হবে না । আমাদের দাবি যতক্ষণ না পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব । আমাদের দল আলাদা রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করে আসছে ৷’’

তবে পূর্ণরাজ্যের বদলে যদি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, তাতেও আপত্তি নেই কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির এই নেতার ৷ তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে জুড়ে দেওয়ার পক্ষে তিনি নন বলেই জানিয়েছেন ৷ পাশাপাশি তাঁর মতে, 2026 সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই সুকান্ত মজুমদার এই বক্তব্য রেখেছেন বলে জানিয়েছেন ৷

অমিত রায়ের দাবি, ‘‘উত্তরবঙ্গকে নিয়ে আলাদা কামতাপুর রাজ্য চাই । আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি আলাদা রাজ্য । এখানকার উন্নতি আলাদা রাজ্য হলেই হবে । এটাই একমাত্র পথ । কেন্দ্র সরকারকে এখানকার ভূমিপত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতে হবে । এরপরে এর সমস্যার সমাধান করতে হবে । যদি তারা আমাদের সঙ্গে বসে তাহলেই তাদের আমরা বিশ্বাস করব নতুবা তাদের বিশ্বাস করব না ।’’

উত্তরবঙ্গ যে বঞ্চিত, সেই বিষয়টি স্বীকার করেননি জলপাইগুড়িতে তৃণমূল পরিচালিত তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য ৷ তবে উত্তরবঙ্গের জন্য আরও উন্নয়নের প্রয়োজন, তা মেনে নিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ বিভেদ নয় ৷ আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ৷ আমরা বাংলাতেই থাকব ৷ আমরা সরকারের কাছে আশা রাখব, উন্নয়নের যে যে জায়গাগুলিতে আমরা পিছিয়ে আছি, সেগুলি যেন ত্বরান্বিত হয় ৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘যে অভিযোগ উঠছে, তা উঠলেও মিলিয়ে দেখতে হবে যে আমরা কোথায় ছিলাম আর কোথায় আছি ৷ গত 13 বছরে তৃণমূলের সরকার উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের নতুন পথ তৈরি করেছে ৷ উন্নয়নের তো কোনও শেষ হয় না ৷ আশা করব যে রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গের জন্য আরও উন্নয়ন করবে ৷’’

এতো গেল রাজনৈতিক নেতাদের কথা ৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ কী বলছেন ? জলপাইগুড়ির এক প্রবীণ নাগরিক প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গ যে বঞ্চিত এটা বাস্তব সত্য ৷ কারণ, উত্তরবঙ্গে দীর্ঘদিন কোনও মেডিক্যাল কলেজ হয়নি ৷ যেগুলি হয়েছে, সেগুলো ভালো মানের হয় ৷ এইমস হওয়ার কথা ছিল, সেটাও হয়নি ৷ যে প্রস্তাব সুকান্ত মজুমদার রেখেছেন, তা সমর্থনযোগ্য ৷ কারণ, ভৌগলিক কারণে অনুপ্রবেশ একটা বড় সমস্যা ৷ এটা বন্ধ করার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের কতটা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে ৷ তাই কেন্দ্র যদি এই এলাকা সংযুক্ত করে এবং যথাযথ অর্থ খরচ হয়, তাহলে উত্তরবঙ্গবাসীর উপকার হবে ৷’’

অন্যদিকে গৌতম দাস নামে আরও একজন বলেন, ‘‘উন্নয়নের নিরিখে দক্ষিণবঙ্গের থেকে উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত ৷ উত্তরবঙ্গবাসী এর থেকে মুক্তি চায় ৷ সবাই চায় উন্নয়ন হোক ৷ তাই উন্নয়নের স্বার্থে যদি আলাদা রাজ্য হয় বা কেন্দ্রের অধীনে যেতে হয় অথবা অন্য কোনও কমিটির অধীনে যেতে হয়, তাহলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই ৷’’ একই মত জলপাইগুড়ির আরও এক বাসিন্দা স্বপন সরকারের ৷ তিনি বলেন, ‘‘আলাদা রাজ্য চাই ৷ কারণ, বরাবর বঞ্চিত হয়ে রয়েছি ৷ আলাদা রাজ্য হলে অনেক উন্নতি হবে ৷’’

ফলে এই বিতর্কের জল শেষপর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, উত্তরবঙ্গের মানুষ যে বঞ্চনার অভিযোগ তুলছেন, তার সমাধান কীভাবে হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা ৷ কীভাবে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়, সেটাই এখন দেখার !

Last Updated : Jul 31, 2024, 8:54 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.