ETV Bharat / state

শান্তিপুরের তাঁত অতীত, বাজার কাঁপাচ্ছে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি শাড়ি - শান্তিপুরের তাঁত

Saree From Water Hyacinth: কচুরিপানা দিয়ে শান্তিপুরে 400 শাড়ি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে, যা সাড়া ফেলেছে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলিতে । এই কাজকে দেখতে বাইরের রাজ্য থেকে আসছে প্রতিনিধিরা ৷ তবে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য উভয় সরকারকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আবেদন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ৷

Saree From Water Hyacinth
কচুরিপানার শাড়ি
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 22, 2024, 7:36 PM IST

শান্তিপুরের তাঁত অতীত, বাজার কাঁপাচ্ছে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি শাড়ি

শান্তিপুর, 22 ফেব্রুয়ারি: শাড়িতেই অপরূপা নারী ৷ তবে তাঁত সিল্কের শাড়ি এখন অতীত, কারণ ইতিমধ্যে বাজার কাঁপাতে এসে গিয়েছে কচুরিপানার শাড়ি ৷ না না কচুরিপানা ডিজাইনের শাড়ি নয়, কচুরিপানা থেকে তৈরি শাড়ি ৷ ভাবছেন কচুরিপানা দিয়ে আবার শাড়ি, সেটাও সম্ভব ৷ হ্যাঁ এই রাজ্যের মানুষই তা সম্ভব করে তুলেছে ৷

পুকুর থেকে ডোবায় জন্মায় কচুরিপানা ৷ এই কচুরিপানা তেমন কোনও কাজে লাগে না ৷ তবে জল নষ্ট করে দেয় ৷ তাই সেই কচুরিপানাকে তুলে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আর তাঁর সেই পরামর্শ মেনে আগেই কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাগ তৈরি করতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের মানুষকে ৷ এবার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কচুরিপানা দিয়ে শাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিল ৷

শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ির নাম জগত বিখ্যাত ৷ সেই শান্তিপুরেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে এখন তৈরি হচ্ছে কচুরিপানা দিয়ে শাড়ি ৷ শান্তিপুরের বিভিন্ন ডোবা ও পুকুর পরিষ্কারের পর কচুরিপানাগুলি সংগ্রহ করা হয় ৷ সেগুলির গোড়া এবং পাতা ফেলে দিয়ে প্রধান কাণ্ড কিংবা পাতার মোটা ডাটা থেকে আঁশ ছাড়ানো হয় ৷ পরে সেই আঁশ শুকিয়ে সেখান থেকে তন্তু পাওয়া যায় । তবে এগুলো সরাসরি সুতো হিসেবে নয়, পশ্চিমবঙ্গে স্পিনিং মিলের সংখ্যা কম থাকার কারণে বিভিন্ন রাজ্যের মিল থেকে সুতো তৈরি করে নিয়ে এসে শাড়ি তৈরি হয় । তবে অন্যান্য সুতোর সঙ্গে মিশিয়ে শাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় সর্বাধিক 25 শতাংশ এই কচুরিপানার সুতো ৷

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে বনগাঁর এক উদ্যোক্তা কৌশিক মণ্ডল নদিয়ার শান্তিপুর এলাকার বেশ কিছু তাঁতি-সহ সারা বাংলার বিভিন্ন জেলার পরিবেশ রক্ষা এবং নতুন ধরনের চিন্তা ভাবনা সম্পন্ন মানুষজনকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন স্বচ্ছতা পুকারে নামে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন । যদিও সে সময় নদী পরিষ্কার তাদের প্রধান এবং অন্যতম কাজ ছিল । আর সেই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা প্রথম লক্ষ্য করেন, কোন কাজে লাগে না কচুরিপানা ৷ তবে মাছ চাষের ক্ষেত্রে হোক বা নদীপথে যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে । সেগুলি পরিষ্কার করার জন্য কৃষকদের অযাচিত ব্যয় করতে হয় ৷ অন্যদিকে সেগুলো পুকুরের কিংবা জলাশয়কে নষ্ট করে ।

টাটা কোম্পানির প্রাক্তন কর্মচারী গৌরব কুমার আনন্দ এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে পরামর্শদাতা হিসেবে যোগ দেওয়ার পরই তিনি কচুরিপানা দিয়ে কিছু করার চিন্তাভাবনা করেন । কৌশিক মণ্ডল বলেন, "টেকসই ও ক্রেতাদের ক্ষমতার উপর নজর রেখে এভাবেই প্রায় 400 শাড়ি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে । যা সাড়া ফেলে দিয়েছে ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলিতে । তাদের সংগঠনকে পুরস্কৃতও করা হয়েছে এই উৎপাদনের জন্য ।" আগামিদিনে অত্যন্ত কম মূলধনের এই ব্যবসায় অনেকেই আগ্রহী হবে বলে তিনি দাবি করেছেন । তবে এই কাজকে আরও বড় পরিসরে করা যাবে যদি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য উভয় সরকার সহযোগিতার হাত বাড়ায় ৷ তারই আবেদন জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৷

শান্তিপুরে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজ দেখতে এসেছেন ছত্রিশগড় রাজ্যের জব্বলপুর এলাকা থেকে এনইউএলএম'র সিটি মিশন ম্যানেজার শ্বেতা সোনি । তিনি বলেন, "আমরা পুরুষ-মহিলাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্প কিংবা ব্যবসায়িক স্বনির্ভরতায় সহযোগিতা করে থাকি । সোশাল মিডিয়ায় কচুরিপানার এই শাড়ি দেখার পর নিজে এসে স্বচক্ষে দেখে গেলাম ৷ আগামিদিনে রাজ্যে ফিরে গিয়ে সেখানে এ ধরনের একটি প্রকল্প করার চিন্তাভাবনা রয়েছে ।"

এর পাশাপাশি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়া সুদূর মুম্বই থেকে অর্পণা গায়করের নেতৃত্বে আট ছাত্রছাত্রীর একটি দল এসেছে এখানে ৷ তাঁরাও জানাচ্ছেন, অত্যন্ত যুগোপযোগী এই প্রকল্প থেকে আগামিদিনে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে । তবে শুধু শাড়ি নয়, এই ফাইবার বা তন্তু নানান কাজে লাগানো সম্ভব ৷ অন্যদিকে এই কচুরিপানা সংগ্রহের ফলে বর্ষাকালে উপকৃত হবেন বহু মৎস্যজীবী থেকে শুরু করে নদী এবং বিভিন্ন জল পথে যাতায়াত মাধ্যমের কর্মীরাও ।

আরও পড়ুন:

  1. চপের পর কচুরিপানা শিল্প ! শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের পরামর্শ মমতার
  2. মমতার কচুরিপানা শিল্প নিয়ে মোদির রাজ্যে মালদার দুই ছাত্র
  3. ডেঙ্গি আটকাতে পুকুরকে কচুরিপানা মুক্ত করার পরামর্শ মন্ত্রীর

শান্তিপুরের তাঁত অতীত, বাজার কাঁপাচ্ছে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি শাড়ি

শান্তিপুর, 22 ফেব্রুয়ারি: শাড়িতেই অপরূপা নারী ৷ তবে তাঁত সিল্কের শাড়ি এখন অতীত, কারণ ইতিমধ্যে বাজার কাঁপাতে এসে গিয়েছে কচুরিপানার শাড়ি ৷ না না কচুরিপানা ডিজাইনের শাড়ি নয়, কচুরিপানা থেকে তৈরি শাড়ি ৷ ভাবছেন কচুরিপানা দিয়ে আবার শাড়ি, সেটাও সম্ভব ৷ হ্যাঁ এই রাজ্যের মানুষই তা সম্ভব করে তুলেছে ৷

পুকুর থেকে ডোবায় জন্মায় কচুরিপানা ৷ এই কচুরিপানা তেমন কোনও কাজে লাগে না ৷ তবে জল নষ্ট করে দেয় ৷ তাই সেই কচুরিপানাকে তুলে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আর তাঁর সেই পরামর্শ মেনে আগেই কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাগ তৈরি করতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের মানুষকে ৷ এবার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কচুরিপানা দিয়ে শাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিল ৷

শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ির নাম জগত বিখ্যাত ৷ সেই শান্তিপুরেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে এখন তৈরি হচ্ছে কচুরিপানা দিয়ে শাড়ি ৷ শান্তিপুরের বিভিন্ন ডোবা ও পুকুর পরিষ্কারের পর কচুরিপানাগুলি সংগ্রহ করা হয় ৷ সেগুলির গোড়া এবং পাতা ফেলে দিয়ে প্রধান কাণ্ড কিংবা পাতার মোটা ডাটা থেকে আঁশ ছাড়ানো হয় ৷ পরে সেই আঁশ শুকিয়ে সেখান থেকে তন্তু পাওয়া যায় । তবে এগুলো সরাসরি সুতো হিসেবে নয়, পশ্চিমবঙ্গে স্পিনিং মিলের সংখ্যা কম থাকার কারণে বিভিন্ন রাজ্যের মিল থেকে সুতো তৈরি করে নিয়ে এসে শাড়ি তৈরি হয় । তবে অন্যান্য সুতোর সঙ্গে মিশিয়ে শাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় সর্বাধিক 25 শতাংশ এই কচুরিপানার সুতো ৷

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে বনগাঁর এক উদ্যোক্তা কৌশিক মণ্ডল নদিয়ার শান্তিপুর এলাকার বেশ কিছু তাঁতি-সহ সারা বাংলার বিভিন্ন জেলার পরিবেশ রক্ষা এবং নতুন ধরনের চিন্তা ভাবনা সম্পন্ন মানুষজনকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন স্বচ্ছতা পুকারে নামে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন । যদিও সে সময় নদী পরিষ্কার তাদের প্রধান এবং অন্যতম কাজ ছিল । আর সেই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা প্রথম লক্ষ্য করেন, কোন কাজে লাগে না কচুরিপানা ৷ তবে মাছ চাষের ক্ষেত্রে হোক বা নদীপথে যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে । সেগুলি পরিষ্কার করার জন্য কৃষকদের অযাচিত ব্যয় করতে হয় ৷ অন্যদিকে সেগুলো পুকুরের কিংবা জলাশয়কে নষ্ট করে ।

টাটা কোম্পানির প্রাক্তন কর্মচারী গৌরব কুমার আনন্দ এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে পরামর্শদাতা হিসেবে যোগ দেওয়ার পরই তিনি কচুরিপানা দিয়ে কিছু করার চিন্তাভাবনা করেন । কৌশিক মণ্ডল বলেন, "টেকসই ও ক্রেতাদের ক্ষমতার উপর নজর রেখে এভাবেই প্রায় 400 শাড়ি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে । যা সাড়া ফেলে দিয়েছে ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলিতে । তাদের সংগঠনকে পুরস্কৃতও করা হয়েছে এই উৎপাদনের জন্য ।" আগামিদিনে অত্যন্ত কম মূলধনের এই ব্যবসায় অনেকেই আগ্রহী হবে বলে তিনি দাবি করেছেন । তবে এই কাজকে আরও বড় পরিসরে করা যাবে যদি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য উভয় সরকার সহযোগিতার হাত বাড়ায় ৷ তারই আবেদন জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৷

শান্তিপুরে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজ দেখতে এসেছেন ছত্রিশগড় রাজ্যের জব্বলপুর এলাকা থেকে এনইউএলএম'র সিটি মিশন ম্যানেজার শ্বেতা সোনি । তিনি বলেন, "আমরা পুরুষ-মহিলাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্প কিংবা ব্যবসায়িক স্বনির্ভরতায় সহযোগিতা করে থাকি । সোশাল মিডিয়ায় কচুরিপানার এই শাড়ি দেখার পর নিজে এসে স্বচক্ষে দেখে গেলাম ৷ আগামিদিনে রাজ্যে ফিরে গিয়ে সেখানে এ ধরনের একটি প্রকল্প করার চিন্তাভাবনা রয়েছে ।"

এর পাশাপাশি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়া সুদূর মুম্বই থেকে অর্পণা গায়করের নেতৃত্বে আট ছাত্রছাত্রীর একটি দল এসেছে এখানে ৷ তাঁরাও জানাচ্ছেন, অত্যন্ত যুগোপযোগী এই প্রকল্প থেকে আগামিদিনে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে । তবে শুধু শাড়ি নয়, এই ফাইবার বা তন্তু নানান কাজে লাগানো সম্ভব ৷ অন্যদিকে এই কচুরিপানা সংগ্রহের ফলে বর্ষাকালে উপকৃত হবেন বহু মৎস্যজীবী থেকে শুরু করে নদী এবং বিভিন্ন জল পথে যাতায়াত মাধ্যমের কর্মীরাও ।

আরও পড়ুন:

  1. চপের পর কচুরিপানা শিল্প ! শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের পরামর্শ মমতার
  2. মমতার কচুরিপানা শিল্প নিয়ে মোদির রাজ্যে মালদার দুই ছাত্র
  3. ডেঙ্গি আটকাতে পুকুরকে কচুরিপানা মুক্ত করার পরামর্শ মন্ত্রীর
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.