বারাসত, 8 সেপ্টেম্বর: আরজি কর-কাণ্ডের 24 দিন পর গ্রেফতার হয়েছেন হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ । টানা 15 দিন ধরে জেরা করার পর তাঁকে গ্রেফতার করেছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা । যদিও তাঁর গ্রেফতারি হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় ৷ তবু তাঁর গ্রেফতারিতে তাঁর পুরনো পাড়া বারাসতে খুশির জোয়ার ৷ আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ'র চরম শাস্তি চান সন্দীপের একসময়ের প্রতিবেশীরা । তাঁদের কথায়, "সন্দীপ ঘোষ অমানুষ, একজন নোংরা লোক ৷"
সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁর প্রাক্তন প্রতিবেশীরা ৷ তাঁদের দাবি, সিবিআই নয় ! জনতার হাতে সন্দীপ ঘোষকে তুলে দেওয়া হোক ৷ প্রতিবেশী এক মহিলা তো ক্ষোভের সুরে বলেই ফেললেন, "জনগণই শায়েস্তা করে দেবে সন্দীপ ঘোষের মতো নোংরা লোককে ! ওকে ঠিক করার জন্য মহিলারাই যথেষ্ট ।" উত্তর 24 পরগনার বারাসতের মতো বাংলার আপামর জনতাও চাইছেন, আরজি করের ঘটনায় অপরাধীদের যেন চরম শাস্তি হয় ।
শুধু আরজি কর হাসপাতালই নয়, সন্দীপ ঘোষের কর্মকাণ্ড ঘিরে বিতর্ক রয়েছে বারাসতেও । অভিযোগ, বারাসতের মল্লিক বাগানে থাকাকালীন সদ্য মা হওয়া নিজের স্ত্রীর পেটে লাথি মেরেছিলেন এই অর্থোপেডিক চিকিৎসক । সেসময় সন্দীপের হাত থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিলেন পাড়া প্রতিবেশীরাই । এরপর এক কাপড়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে 14 দিনের সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন সন্দীপের স্ত্রী ।
আরও অভিযোগ, একরোখা সন্দীপ সবসময় দুর্ব্যবহার করতেন প্রতিবেশীদের একাংশের সঙ্গে । তাঁর আচরণও ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ । প্রায় দশ বছর আগে বারাসতের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে সন্দীপ অন্যত্র চলে গেলেও আরজি করের নৃশংস হত্যা-কাণ্ডের পর থেকেই তাঁর নেতিবাচক মনোভাব এবং কুকীর্তি ঘুরেফিরে আসছে সেই প্রতিবেশীদের মুখে মুখে । এমনকি, সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারির পরও বারাসতে ফেলে আসা তাঁর বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ।
মঙ্গলবারও দেখা গেল প্রতিবেশীদের কেউ কেউ ভিড় করেছেন বারাসতে সন্দীপের পুরনো সেই বাড়ির সামনে । যদিও সেই বাড়িটির হাতবদল হয়েছে দশ বছর আগেই । সেখানে দাঁড়িয়েই সন্দীপ ঘোষের একসময়ের প্রতিবেশী ও সিপিএম নেতা মিহির চক্রবর্তী বলেন, "ও (সন্দীপ ঘোষ)-র মতো অমানুষ এই তল্লাটে একজনও ছিল না । আমার দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য বলব, যে এরকম একজন নিকৃষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়নি । তবে, স্ত্রী'র পেটে লাথি মেরে উনি যখন সেলাই ফাটিয়ে দিয়েছিলেন, তখন সেই খবর পেয়ে আমরা গিয়েছিলাম ওই মহিলাকে উদ্ধার করতে ।প্রথমে তো ঢুকতেই দেবে না বাড়িতে । পরে, ঝগড়াঝাঁটি করে ওনাকে বের করে আনি । সন্দীপ ঘোষের মতো একজন গুণধর ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ায় আমরা খুশি । কিন্তু, ও'র র্যাকেট যেভাবে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, সেই র্যাকেট ভাঙতে হবে । সেই সঙ্গে নির্যাতিতার মৃত্যুর প্রকৃত কারণও খুঁজে বের করে আসল অপরাধীদের সাজা দিতে হবে । সেটাই এখন চাইছেন বাংলার মানুষ ।"
একই সুর শোনা গিয়েছে সন্দীপের একসময়ের প্রতিবেশী দুলালচন্দ্র দাসের গলাতেও । তাঁর কথায়, "ওঁর স্বভাবই হল কুকীর্তি করে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া । বারাসতে যতদিন ছিলেন ততদিন মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে গিয়েছেন । শুধু গ্রেফতারি নয় ! আমরা চাই ওঁর কঠোর শাস্তিও হোক ।"