লাভপুর, 11 নভেম্বর: বালি মাফিয়াদের থাবা থেকে বাদ গেল না তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'হাঁসুলি বাঁক'। লাভপুরের কুয়ে নদী থেকে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে দেদার বালি তোলা হচ্ছে । নজর নেই প্রশাসনের, এমনই অভিযোগ । এই ঐতিহ্যবাহী হাঁসুলি বাঁককে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে ৷ তার আগেই দেখা যাচ্ছে বালির তোলার 'উপকথা'।
লাভপুরের তৃণমূল-কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী বলেন, "এটা অত্যন্ত দুঃখজনক শুধু নয়, বিরক্তিকর বিষয়ও ৷ ওখানে সরকারি ভাবে একটা পর্যটন কেন্দ্র হবে, সৌন্দর্যায়ন করা হবে ৷ সেই রকম একটা সময়ে যদি এই ভাবে বালি ওঠে, বাঁকটাই হয় তো হারিয়ে যাবে ৷ আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করব বিষয়টি যাতে অবিলম্বে বন্ধ করা যায় ।"
প্রখ্যাত সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস 'হাঁসুলি বাঁকের উপকথা'। 1946 সাল থেকে 1951 সালে গ্রামবাংলার জনজীবন, জমিদারি ব্যবস্থাকে নিয়ে এই উপন্যাস ৷ এই উপন্যাসে স্থান পাওয়া লাভপুরের কুয়ে নদীর সেই বাঁক আজও বিদ্যমান । ঐতিহ্যবাহী এই বাঁককে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । ইতিমধ্যেই 1 কোটি 25 লক্ষ টাকার প্রস্তাবনাও দেওয়া হয়েছে ।
কিন্তু, বালি মাফিয়াদের হাত থেকে বাদ গেল না তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই 'হাঁসুলি বাঁক'। কুয়ে নদীর এই বাঁক থেকে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে দেদার বালি তোলা হচ্ছে ৷ নজর নেই প্রশাসনের, এমনই অভিযোগ । প্রকাশ্য দিনের আলোয় ট্রাক্টরের পর ট্রাক্টর নদী গর্ভে নেমে বালি তুলে নিয়ে যাচ্ছে ৷ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাঁসুলি বাঁকটি । এই মর্মে লাভপুরের বিডিও-র কাছে একাধিক বার অভিযোগ জমা পড়েছে ৷ কিন্তু, কোনও কাজ হয়নি ৷
প্রসঙ্গত, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন লেখনীতে স্থান পাওয়া ঐতিহ্যবাহী কোপাই নদী থেকে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বালি তোলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের ৷ এই কোপাই নদীই সতীপীঠের অন্যতম কংকালীতলা পার হওয়ার পর কুয়ে নদী নাম নিয়ে বয়ে চলেছে ৷ সেই কুয়ে নদীতে লাভপুরের কাছে একটি বাঁক রয়েছে । যে বাঁকটির নাম 'হাঁসুলি বাঁক' দিয়েছেন সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় । তবে এই কুয়ে নদী থেকে নিয়মবহির্ভূত ভাবে বালি তোলার জন্য প্রতিবছর বর্ষায় বন্যার শিকার হয় লাভপুরের একাধিক গ্রাম ৷
লাভপুরের বিডিও শিশুতোষ প্রামাণিক বলেন, "এই অভিযোগ আমরা পেয়েছি যে, হাঁসুলি বাঁক থেকে বালি তোলা হচ্ছে ৷ আমাদের একটা কমিটি আছে, আমরা ভিজিট করব ৷ যদি সত্যি হয়, আইনানুগ যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হবে ৷ ওখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে, তাই হাঁসুলি বাঁকের যে আকার, সেটা যাতে বজায় থাকে তা দেখতে হবে ।"