কৃষ্ণনগর, 7 অগস্ট: অনন্যায় মজেছেন কৃষ্ণনগরের মানুষজন ৷ অনন্যা কোনও রূপসী তনয়া নয় ৷ সে আদ্যপান্ত একটি যন্ত্রমানব অর্থাৎ, রোবট ৷ আর সেই রোবট অনন্যায় মজেছে কৃষ্ণনগরের মানুষ ৷ এই রোবটটি কৃষ্ণনগর শহরের একটি নামী রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করে ৷ রেস্তোরাঁর রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে সোজা গ্রাহকদের টেবিলে পৌঁছে যাচ্ছে অনন্যা ৷
তবে, অবশ্য কোন টেবিলে, কী খাবার ও তার পরিমাণ সব তাঁর মনিটরে আপলোড করে দিচ্ছেন রেস্তোরাঁর এক কর্মচারী ৷ সেই কমান্ড ফলো করে নির্দিষ্টি টেবিলে সুস্বাদু পদ নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছে রোবট অনন্যা ৷ তার আবার বিশেষত্ব রয়েছে, রেস্তোরাঁর ভিতরে ভিড়ভাট্টা দেখলেই থমকে যাচ্ছে সে ৷ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠছে, "আমি অনন্যা, খাবার নিয়ে যাচ্ছি ৷ আমাকে রাস্তা দিন ৷"
আরও বিশেষত্ব রয়েছে এই খাবার পরিবেশনকারী রোবটের ৷ রেস্তোরাঁয় কোনও গ্রাহকের জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালন করা হলে, খাবার ও কেক পরিবেশনের পর, গান গেয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছে অনন্যা ৷ এমন অভিনব কায়দায় খাবার পরিবেশন গ্রাহকদের বেশি করে টানছে ৷ আর তাই দিনের পর দিন ভিড় বেড়েই চলেছে কৃষ্ণনগরের ওই রেস্তোরাঁয় ৷
2013 সালে তিন মহিলা জাতীয় সড়কের ধারে এই রেস্তোরাঁ শুরু করেছিলেন ৷ একটি পেট্রোল পাম্পের পিছনে শুরু হয়েছিল রেস্তোরাঁটি ৷ গুটিগুটি পায়ে 11 বছর পূর্ণ করেছে ৷ এটি কৃষ্ণনগরে আজ একটি অভিজাত রেস্তোরাঁ হিসেবে পরিচিত ৷ কিন্তু, রোবটের নাম অনন্যা কেন ? এখানেও রয়েছে একটি কাহিনী ৷ যখন প্রথম রেস্তোরাঁটি শুরু হয়েছিল, সেই সময় তিনজন মহিলার মধ্যে একজনের নাম ছিল অনন্যা ৷ ওই তিনজনের মধ্যে দু’জন রেস্তোরাঁ থেকে সরে যান ৷ থেকে যান শুধুমাত্র অনন্যা ৷ আর অনন্যার হাত ধরেই আজ এই রেস্তোরাঁ পূর্ণতা ও পরিচিতি লাভ করেছে ৷ আর তাঁকে সম্মান জানাতেই অত্যাধুনিক এক রোবট পরিবেশকের নাম 'অনন্যা' রাখা হয়েছে ৷
এখনও পর্যন্ত মোট চারটি অনন্যা নামের রোবট সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রমাগত পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে ৷ রেঁস্তোরায় আসা গ্রাহকরা রোবট অনন্যার সঙ্গে ছবি তুলছেন ৷ ছোটরা আবার রোবট অনন্যার সঙ্গে মজাও করছে ৷ মহিলা পরিচালিত এই রেঁস্তোরার বর্তমান মূল আকর্ষণ 'অনন্যা' ৷ তবে, কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন এই রোবো শুধু খাবার ডেলিভারি নয়, পরবর্তী কালে হাউসকিপিং, ক্লিনিংয়ের মতো সব কাজ করবে ৷ একদম নিজস্ব টেকনিক্যাল টিমের তৈরি এই রোবো এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ৷
এই রোবো বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের ৷ অনন্যার কাজও খুবই প্রশংসিত হয়েছে স্থানীয় ভোজনরসিক থেকে শুরু করে বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের কাছে ৷ এটি রাজ্যের একমাত্র রেস্তোরাঁ, যেখানে এখন মহিলাদের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত রোবটিক্স টেকনোলজিতে চলছে খাবার পরিবেশন এবং ভোজনরসিক গ্রাহকদের মনোরঞ্জন ৷