ব্যান্ডেল, 14 জুন: বিছানায় শুয়ে থাকতে বলা হয় 68 বছরের বৃদ্ধাকে ৷ তাঁর হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয় ৷ এরপর বৃদ্ধার সঙ্গে খোশ মেজাজে গল্প করতে করতে সোনা গয়না-সহ টাকা নিজেদের ব্যাগে ভরতে থাকে দুষ্কৃতীরা ৷ একজন তো আবার গৃহকর্ত্রীর বিছানার পাশে বসে থাকতে না পেরে ঘুমিয়েই পড়ে ভোরের দিকে । এমনই বিচিত্র ডাকাতির ঘটনার সাক্ষী হলেন হুগলির ব্যান্ডেলের বাসিন্দা রেণুরানি পাল।
তিনি বলেন, "দুষ্কৃতীদের বয়স খবুই কম ছিল । নেশা করেছিল প্রত্যেকেই । একজন তো ঘুমিয়েও পড়েছিল বিছানায় । অপর এক ডাকাত তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে এবং তারা বলছিল, এখানে ঘুমোতে এসেছিস । পরে কোনোক্রমে উঠে সকলে মিলে জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেয় ৷"
রেণুরানি পালের কথায়, "এইরকম ডাকাতির ঘটনা আমার সঙ্গে আগে কখনও ঘটেনি । স্বাভাবিকভাবেই তাই কথা বলছিলাম ডাকাত দলের সঙ্গে । সকলেরই মুখ খোলা ছিল । আমি ওদের বলছিলাম, আমাকে না মেরে টিভি থেকে যা খুশি দরকার তোদের নিয়ে যা ৷ আমার স্বামী কবে মারা গিয়েছে, ক’টা মেয়ে, মেয়ের কোথায় বিয়ে হয়েছে, জামাই কী করে, সে সব নানা কথা জিজ্ঞাসা করছিল । আমার কানের দুল খুলতে পারছিল না ৷ আমি আবার নিজেই খুলে দিলাম ৷"
জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার ভোর রাতে ব্যান্ডেলের নলডাঙার একটি বাড়িতে ৷ ওই বাড়িতে 68 বছরের বৃদ্ধা রেণুরানি পাল একাই থাকেন । তাঁর স্বামী মৃত্যু হয়েছে অনেকদিন আগে ৷ দুই মেয়েরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে । বৃদ্ধা ওইদিন শৌচালয়ে গিয়েছিলেন ৷ সেই সুযোগে ভোর রাতে ঘরে ঢুকে আসে চারজন ডাকাত । অন্ধকারে মাথায় ওয়াচ লাইট নিয়ে ঘরে মধ্যে চেয়ারে বসে থাকে তারা । ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে উঠে গৃহকর্ত্রী চার মূর্তিকে দেখে ভয় পেয়ে যান । প্রথমে ডাকাতরা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় । পরে ওই বৃদ্ধাকে বেঁধে রেখে যথেচ্ছ লুটপাট চালায় ঘরে ।
দীর্ঘ 45 মিনিট ধরে এই ডাকাতি চলে । এরপর বৃদ্ধাকে বেঁধে রেখে তাঁর সোনার গয়না ও পেনশনের নগদ 36 হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীর দল । বৃদ্ধার দাবি, ডাকাত দলের প্রত্যেকের বসয় 22 থেকে 24 বছরের মধ্যে । নেশা করে ডাকাতি করতে এসেছিল তারা । গল্প করছিল বৃদ্ধার সঙ্গে । যদিও আশেপাশের কেউই বিষয়টি টের পায়নি ৷ পরে ডাকাতরা চলে গেলে কোনোক্রমে রেণুরানি হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে পাশের বাড়ির লোকজনকে ডাকাডাকি করে । খবর দেওয়া হয় চুঁচুড়া থানার পুলিশকে । পুলিশ এসে বৃদ্ধার সঙ্গে কথাবার্তা বলে তদন্ত শুরু করেছে । পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, স্থানীয় দুষ্কৃতীদের কাজ এটা ।
যদিও এই ঘটনায় আতঙ্কিত সকলেই ৷ বৃদ্ধার পাশের বাড়িতেই তাঁর আত্মীয়রা থাকেন । দু'মাস বৃদ্ধা বাড়িতে ছিলেন না । মুম্বইয়ের ছোট মেয়ের কাছে ছিলেন । সেখান থেকে ফিরেই এই কাণ্ড ঘটল তাঁর সঙ্গে ৷ বৃদ্ধার আত্মীয় মিতা পাল বলেন, "আমরা পাশে থাকলেও কিছু টের পাইনি । আগে কোনোদিন এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি ।" কোদালিয়া-2 গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শুভঙ্কর রাহা বলেন, "বড় রাস্তাগুলোতে পুলিশ টহল দেয় ৷ কিন্তু ভিতরে রাস্তাগুলোতে পুলিশ যায় না । এর আগে পুরনো কোদালিয়ায় এ ধরনের একটি ঘটনা হয়েছিল ৷ তবে নলডাঙ্গায় এই প্রথম এই ঘটনা ঘটল । দুষ্কৃতীদের ধরুক পুলিশ ৷ টহল বাড়ুক এটাই চাইব ।"