কলকাতা, 17 জুলাই: গরিবের পাতে সুষম আহার বলতে যা বোঝায়, তা হল ডিম। আর সেই ডিম এখন মহার্ঘ। মাসখানেক ধরেই ডিমের দামে রীতিমতো হাতে ছ্যাঁকা লাগছে । কোথাও পোল্ট্রির ডিম জোড়া বিকচ্ছে 14 টাকা, কোথাও আবার 15 টাকা। মাসখানেক আগেও যা ছিল 11 থেকে 12 টাকা জোড়া ৷
ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের তরফে জানা গিয়েছে, মূলত দুটি কারণে পোল্ট্রির ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ প্রথমটা হল ডিমের চাহিদা বৃদ্ধি ৷ মাসদু'য়েক আগেও ডিমের যোগান অনুযায়ী চাহিদা কম ছিল ৷ তাই তখন দামটাও কম ছিল ৷ এরপর এই একমাসে ডিমের চাহিদা বেড়েছে ৷ তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে ৷
দ্বিতীয় কারণ হল, পোল্ট্রি মুরগির খাবার যেমন জোয়ার-বাজরার জোগান ৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পোল্ট্রি মুরগির খাবার বিদেশে রফতানি হয়ে যাচ্ছে ৷ তার ফলে দেশের পোল্ট্রি চাষিদের অনেক চড়া দামে সেই খাবার কিনতে হচ্ছে ৷ কিন্তু যদি মুরগির খাবার বিদেশ রফতানি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে উৎপাদন খরচ কমে যাবে ৷ সেক্ষেত্রে ডিমের দাম কমে যাবে ৷ শ্রাবণ মাসে উত্তর ভারত জুড়ে অনেকেই আমিষ খাবার খান না ৷ এর ফলে ডিমের জোগান এক থাকলেও চাহিদা কমবে । তখন দাম সামান্য কমলেও কমতে পারে। এই প্রসঙ্গে পোল্ট্রি ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের তরফে মদন মোহন মাইতি বলেন, "পোল্ট্রি মুরগির খাবার এখান থেকে রফতানি করে দেওয়া হচ্ছে বিদেশে । ফলে এখানে বেশি দামে পোল্ট্রি মুরগির খাবার চাষিদের কিনতে হচ্ছে। খরচ বেড়ে যাচ্ছে । 5 টাকা 90 পয়সা করে ডিম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন পোল্ট্রি চাষিরা ৷ ডিমের দাম কমালে মাঠে মারা যাবেন তাঁরা । ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাঁদের । শ্রাবণ মাসে ডিমের চাহিদা কমলে দাম খানিকটা পড়বে।"
ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের দাবি, যখন ডিমের চাহিদা ও দাম কম অর্থাৎ সাড়ে 5 থেকে 6 টাকায় যাচ্ছিল তখন পোল্ট্রি মুরগি চাষিরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছিলেন ৷ সেজন্য চাহিদা বৃদ্ধি পেতে তারা ডিমে বেশি লাভের মুখ দেখছেন ৷ এখন দেড় টাকা লাভ রেখে চাষিরা ডিম বিক্রি করছেন ৷ তাই খুচরো বাজারে ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ চাষিদের হাত থেকে ডিম আসে বড় ক্রেতাদের কাছে ৷ তাঁদের কাছ থেকে সেই ডিম কেনে ডিসট্রিবিউটার ৷ তাঁদের কাছে থেকে আবার আসে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ৷ সেখান থেকে খুচরো বাজারে ডিম আসে ৷
বর্তমান বাজারদর অনুসারে, পোল্ট্রি ডিম জোড়া 14-15 টাকা বিকচ্ছে ৷ যা মাসখানেক আগেও ছিল 11-12 টাকা জোড়া । হাসের ডিম ছিল 16 টাকা জোড়া। এখন তা বেড়ে হয়েছে 20 টাকা। বাজারে চাহিদা ও জোগান সমান আছে এই মুহূর্তে। তাতেই এই দাম। জোগান কমলে আরও দাম বাড়ার আশঙ্কা।
সবজির বাজারদরে হাত পোড়ার সঙ্গেই এবার ডিম কিনতেও ছ্যাঁকা লাগছে আমআদমির। মহম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, "সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে । ডিম সাড়ে 5 টাকা ছিল মাস দুয়েক আগেও ৷ সেটাই বেড়ে এখন 7 টাকা প্রতি পিস কিনতে হচ্ছে। মাছ, মাংস যা দাম নিয়মিত খাওয়া সম্ভব নয়। তবে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে একমাত্র নিয়মিত কিনে খেতে পারি ডিমটা। সেটার দামও এখন বেড়ে চলেছে।"
মালতি পালের কথা, "কী খাব ? সবজির দাম বেশি, আলু-পেঁয়াজের দাম বেশি। মাছ মাংসের দাম বেশি । ডিমও এখন বেশি দামে কিনে খেতে হচ্ছে । দিদি সবজির জন্য লোকজন ও পুলিশ বাজারে পাঠাচ্ছে ৷ ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু করছে না কেন ! এইভাবে দাম বাড়তে থাকলে ডিমও আর খেতে পারব না। বাচ্চাগুলোকে খাওয়াতে পারব না ।"
সবজির বাজার আগুন হওয়াতে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকদিন আগে নবান্নে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বৈঠক থেকেই সবজির দর আমজনতার সাধ্যের মধ্যে আনতে 10 দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন । তারপরেই ময়দানে নামে টাস্ক ফোর্স ৷ অভিযানের পর সবজির দাম কিছুটা হাতের নাগালে এলেও ফের টাস্ক ফোর্স যেতেই চড়া হয় দর ।
এখনও প্রতিদিন সবজির দামের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে । কখনও মানিকতলা বাজার, কখনও কাঁকুরগাড়ি ভিআইপি বাজার, আবার কোলে মার্কেট থেকে মুচি বাজারেরও হানা দিচ্ছেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। তবে সবজির দাম নিয়ে এত হইচইয়ের মাঝেই হাতের নাগালের বাইরে গিয়েছে অল্প পয়সায় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সুস্বাদু খাবারের প্রধান উপাদান ডিম ।