সোদপুর, 24 ফেব্রুয়ারি: আরজি কর-কাণ্ডের আবহে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসকদের নিয়ে মেগা বৈঠক সেরেছেন ধনধান্য অডিটোরিয়ামে । সেই বৈঠক থেকে জুনিয়র এবং সিনিয়র ডাক্তার-সহ হাউস স্টাফদের বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি একগুচ্ছ ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । এবার সেই বেতন বৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করতে শোনা গেল আরজি করের নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের বাবাকে ।
এদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "ডাক্তারদের গায়ে হাত বুলিয়ে উনি বেতন বৃদ্ধি করে আরজি করের আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করছেন । যাতে ডাক্তাররা আন্দোলন না করেন । উনি এসব ভালোই জানেন । কী করে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করা যায় !"
এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এদিন আবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বিস্ফোরক দাবি করেছেন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা। তিনি বলেন, "উনি তো আমাদেরকেও টাকা দিয়ে আরজি কর-কাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন । চেয়েছিলেন যাতে আমরা টাকা নিয়ে মুখ বন্ধ করে দিই । কিন্তু, সেটা পারেননি । এখন ডাক্তারদের গায়ে হাত বুলিয়ে বেতন বৃদ্ধি করে তাঁদের আন্দোলন বিমুখ করার চেষ্টা করছেন । ওঁর নেতারাও তো বলতে শুরু করেছেন টাকা দিলে নাকি সবকিছুই হয় !"
এদিনের বৈঠকে আরজি কর-কাণ্ডের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তো সমবেদনা জানিয়েছেন নির্যাতিতার পরিবারকে ? এর উত্তরে নিহত চিকিৎসক ছাত্রীর বাবা বলেন, "উনি মুখে সমবেদনা জানান । আর পিছনে বলেন, যা করছি ভালো করছি । গত 14 বছরের শাসন ক্ষমতায় এটাই দেখে আসছি । উনি এভাবেই রাজ্য চালাচ্ছেন ।"
মুখ্যমন্ত্রী তো ডাক্তারদের আন্দোলনকে 'অরাজনৈতিক' বলছেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা বলেন, "ডাক্তার-রা তো রাজনৈতিক পতাকা নিয়ে আন্দোলন করেনি ! নিজেদের ক্ষমতায় আন্দোলন করেছেন । ডাক্তারদের শক্তি সম্পর্কে ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) কোনও ধারণা নেই । আমার মেয়েও তো ডাক্তার ছিল । তাই, আমি জানি ডাক্তারদের শক্তি সম্পর্কে । দিনের পর দিন ইন্টার্ন থাকাকালীন ডাক্তাররা চার থেকে পাঁচ দিন টানা ডিউটি করে যান । যাঁরা রাজনীতির ছাতার তলায় থাকেন, তাঁরা হয়তো ডিউটি করেন না ঠিক ভাবে ।"
আরজি কর-কাণ্ডের পরেও রাজ্য নারী নির্যাতন থেমে নেই ! একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে । কী বলবেন এই বিষয়ে ? এর উত্তরে নিহত চিকিৎসক তরুণীর বাবা বলেন, "আমার মেয়ে নিজের কর্মস্থলে সুরক্ষিত জায়গায় থেকেও মারা গিয়েছে । পৃথিবীতে আর কোথাও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই । এর পরেও আমরা মেয়ের মৃত্যুর বিচার পাইনি । অপরাধীরা সামনে আসেনি । উল্টে, অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে । ফলে, যা হওয়ার তাই ঘটছে । যত উনি (মুখ্যমন্ত্রী) এরকম করবেন, ততই এই ধরনের ঘটনা ঘটবে ।"
অপরাজিতা বিল প্রসঙ্গে কী বলবেন ? এর উত্তরে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা বলেন, "উনি বলেছেন সাত দিনের মধ্যে নাকি অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে ! সেটাই যদি হয়ে থাকে তাহলে 461 জন ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামির কেন এখনও ফাঁসি হল না ? কেনই বা সঞ্জয় রায়ের বিষয়ে হাইকোর্ট এখনও মামলা ঝুলে রয়েছে ? দু'মাস হয়ে গেল, কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না ।"
এদিকে, ছ'মাস পরেও আরজি করে চিকিৎসক ছাত্রীর মৃত্যুর ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পায়নি নির্যাতিতার পরিবার । যা ঘিরে বিতর্ক থেমে নেই । এই প্রসঙ্গে এদিন নিহত চিকিৎসক ছাত্রীর বাবা বলেন, "দু-একদিন অপেক্ষা করব ! তারপর যা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার তা আমরা নেব ।"