সোদপুর, 30 জানুয়ারি: আরজি কর-কাণ্ডে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে বারবার সিবিআইকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তরুণী চিকিৎসক ছাত্রীর পরিবারের । তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে তাঁরা যে মোটেই সন্তুষ্ট নন, তাও তারা বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন ৷ এবার তদন্তকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি সিবিআইয়ের ডিরেক্টরের কাছে নালিশ জানাল আরজি করে নিহত চিকিৎসক ছাত্রীর পরিবার । তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর কাছে লিখিত অভিযোগ করল তারা ।
বৃহস্পতিবার নিহত চিকিৎসক ছাত্রীর সোদপুরের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার । তখনই সুকান্তর হাতে সেই অভিযোগের চিঠি তুলে দেন আরজি করে তরুণী চিকিৎসক ছাত্রীর বাবা । কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে এদিন প্রায় এক ঘণ্টা এই বিষয়ে কথা হয় নির্যাতিতা ছাত্রী বাবা-মায়ের ।
এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে নিহত চিকিৎসক ছাত্রীর বাবা বলেন, "সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিযোগ আছে এদিন তা সুকান্ত মজুমদারকে জানিয়েছি । যাতে উনি আমাদের সেই অভিযোগপত্র পৌঁছে দেন উপর মহলে । সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের বিরুদ্ধে এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্র ওঁর মারফত সিবিআইয়ের ডিরেক্টরকে পাঠিয়েছি । উনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন ।" তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিয়ে এদিন নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পদ্ম শিবিরের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ।
তিনি বলেন, "পুলিশ ও সিবিআইয়ের একজন অফিসার সম্পর্কে তদন্ত নিয়ে পরিবারের যে অসন্তোষ আছে, সেটা ওঁরা আমাকে জানিয়েছেন । আমরাও তদন্তে দু-একজনের ভূমিকা নিয়ে খুশি নই । সেটাও পরিবারকে জানিয়েছি । সিবিআইয়ের একজন তদন্তকারী অফিসারের সম্পর্কে আদালতের রায়েই বলা হয়েছে, সিবিআই তদন্তে বাড়তি কিছু করেনি । কলকাতা পুলিশের তদন্তকেই ম্যাগনিফাইং গ্লাসের নীচে রেখে তদন্ত করছেন ।এই বিষয়টিও আমাদের নজরে এসেছে । মোদিজির মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে এই বিষয়গুলো উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছে দেব ।"
এদিনও প্রতিবেশী কাকু সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার অভিযোগ তোলেন নিহতের বাবা । তিনি বলেন, "ঘটনার দিন প্রতিবেশী সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশের ডিসি নর্থকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসে টাকা অফার করেছিলেন । একটা প্যাকেট দিতে চেয়েছিলেন । কী আছে জিজ্ঞাসা করতেই বলেছিলেন টাকা আছে । আমাদের কাজে লাগবে ।"
এদিকে, পরিবারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "যখন মেয়ের মৃতদেহের পাশে মা কাঁদছে, তখন প্রতিবেশী সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় হাসতে হাসতে তাঁর বাবাকে টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা করেছিলেন । তাই আমার মনে হয় এই নারকীয় ঘটনার পিছনে বৃহৎ ষড়যন্ত্র রয়েছে । চেস্ট মেডিসিনের অন্যান্য ডাক্তাররাও এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন ।"
যদিও নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী কাকু সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর স্পষ্ট জবাব, "নির্যাতিতার বাবা-মা আমাকে নিয়ে ছয় বার মন্তব্য বদলেছেন । আগে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা সেটা ওঁরা বলুন । আর আমার যা বক্তব্য সেটা আগেই আমি আদালত এবং সিবিআইকে জানিয়েছি । আগামী দিনেও আদালতকে সবটা জানাব । কোনও প্ররোচনায় পা দিয়ে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করব না ।"