সোদপুর, 3 সেপ্টেম্বর: রাজ্য সরকারের 'ধর্ষণ বিরোধী বিল' পাশ নিয়ে মুখ খুললেন আরজি করে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা-মা । মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সোদপুরের বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতার মা বলেন,"এই বিলের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমি । ডাক্তারি পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কোনও বিভাজন করা উচিত নয় । মেয়েরা 12 ঘণ্টা ডিউটি করবে । ছেলেরা 24 ঘণ্টা ডিউটি করবে । এতে তো মেয়েদের আরও ছোট করা হচ্ছে । এই বৈষম্য কেন থাকবে ? তাই সরকারের এই বিলকে কোনওভাবেই সমর্থন করতে পারছি না ।"
স্ত্রী'র কথায় তাল মিলিয়ে এই বিলের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবাকেও । তাঁর কথায়,"ছেলে-মেয়ে প্রত্যেকেরই সমান অধিকার । সেখানে ছেলেরা বেশি কাজ করবে । মেয়েরা কম করবে । এটা করে তো উনি (মুখ্যমন্ত্রী) নিজেই বৈষম্য তৈরি করে দিচ্ছেন ছেলে-মেয়ের মধ্যে ! রাতে যদি কোনও মেয়েকে কাজের জন্য বেরোতে হয়, সে কী চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে বসে থাকবে ? এটা হয় নাকি ! আমি মনে করি এটা সরকারের অক্ষমতা । কারণ, প্রশাসন মেয়েদের সুরক্ষা দিতে পারছে না ।"
এরপরই সরকারের উদ্দেশ্যে কার্যত ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন,"দুর্নীতিকে প্রশয় না দিয়ে সেই দুর্নীতি কীভাবে সামনে আনা যায়, সেদিকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত সরকারের । সন্দীপ ঘোষের দুর্নীতি বিগত তিন বছর ধরে সামনে আনার চেষ্টা করেছিল অনেকেই । কিন্তু, তা আনা সম্ভব হয়নি । এর জবাব কে দেবে ? প্রশাসনকেই এর উত্তর দিতে হবে । সন্দীপ ঘোষ এভাবে দুর্নীতি না করলে আজকে আমার মেয়েকে মরতে হত না । উত্তালও হত না গোটা পৃথিবী ।"
সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবার বক্তব্য,"ও তো গ্রেফতার হয়েছে দুর্নীতি মামলায় । আমার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় তো ওকে ধরা হয়নি । সিবিআই দুর্নীতি এবং আমার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করছে । আশা করছি সিবিআইয়ের আধিকারিকরা শীঘ্রই বড়সড় সাফল্য পাবে ।"
তবে আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবার । এই প্রসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা বলেন,"24 থেকে 25 ঘণ্টা ধরে যেভাবে ডাক্তারি পড়ুয়াদের রাস্তায় বসিয়ে রাখা হয়েছে তা দেখে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি । ওরাও তো আমাদের পরিবারের সদস্য । ওদের জেদের কারণে পুলিশ কমিশনার বাধ্য হয়েছেন আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে । এটা ওদের নৈতিক জয় । পুলিশ কমিশনার পদত্যাগ করবেন কী না, সেটা প্রশাসনিক ব্যাপার । উনি যা ভালো বুঝেছেন সেটাই বলেছেন । আমরা সমসময় ছাত্রদের পাশে রয়েছি । বুধবার রাত দখলের অভিযানেও সামিল হব আমরা ।"
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো চিঠির কথা স্বীকার করে এদিন নির্যাতিতার বাবা বলেন, "চিঠি এখনও রাইসিনা হিলে পৌঁছয়নি । সবার কাছেই চিঠি পাঠানো হয়েছে । সেই চিঠির প্রাপ্তি আগে তাঁরা স্বীকার করুক । তারপর সবটাই প্রকাশ্যে আনা হবে । চিঠিতে মেয়ের মায়ের মনের কথা এবং মনের দুঃখ সবটাই রয়েছে । আপনারা জানতে পারবেন সঠিক সময়ে ।"