বর্ধমান, 4 সেপ্টেম্বর: সরিয়ে দেওয়া হল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে ৷ আরজি কর-কাণ্ডে তাঁর নাম নিয়ে চর্চা শুরু হওয়ার পর থেকেই আন্দোলনকারীদের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র রোষের সৃষ্টি হয়েছিল ৷ তাঁকে কিছুতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যাতে ঢুকতে না-দেওয়া হয়, কর্তৃপক্ষের কাছে সেই আর্জি জানিয়েছিলেন ছাত্ররা ৷ তাঁদের আর্জি মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ ৷ বিতর্ক এড়াতেই তড়িঘড়ি চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে কাকদ্বীপে বদলি করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে ।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র প্যাথলজিস্ট ডা. বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে ডায়মন্ডহারবারের কাকদ্বীপ এসডিএই অ্যান্ড এমএসএসএইচ-এ স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল বাংলা থেকে সারা দেশ । সেই ঘটনার দিন বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস সেখানে কী করছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নানা মহলে । এরপর গতকাল তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় ।
আরজি কর-কাণ্ডের দিন লাল জামার পাশাপাশি নীল জামা পরা কে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তা নিয়ে নতুন করে জট পাকিয়েছে । আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সন্দেহ, ঘটনার দিন নীল জামা পরে আরজি কর মেডিক্যালে উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস । বর্ধমান মেডিক্যালের সিনিয়র চিকিৎসক বীরূপাক্ষ বিশ্বাস । প্রশ্ন ওঠে, বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসক হয়ে তিনি সেদিন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কেন গিয়েছিলেন । এই প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা । তার জেরেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে ।
ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেটের অন্যতম মাথা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অভীক দে-কে । অভীক দে-র পাশাপাশি বিরূপাক্ষ বিশ্বাস যাতে কোনওভাবেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না-পারেন সেই দাবি তুলে সরব হয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা । তাঁরা ওই দু'জন-সহ মোট 15 জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছেন অধ্যক্ষের কাছে ।
আন্দোলনকারী চিকিৎসক গৌরাঙ্গ প্রামাণিক বলেন, "আমরা একাধিক দাবি নিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছি ৷ এরমধ্যে আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি, যাতে অভীক দে ও বিরূপাক্ষ বিশ্বাস কোনওভাবেই কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না-পারেন । আমাদের দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছে । দেখা যাক, আগামী দিনে কী হয় । সেই মতো আমরা সিদ্ধান্ত নেব ।"
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ছাত্রদের বেশকিছু দাবিদাওয়া ছিল । তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে । তাঁদের দাবি আমরা মেনেছি । বেশ কয়েকজনের মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ।"
অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিসেক সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "থ্রেট, দুর্নীতি, ক্রাইম সিনে থাকার অভিযোগ থেকে সব জায়গায় এঁদের বিরুদ্ধে জনমত ও জনরোষ তৈরি হচ্ছে । সেই কারণেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে । ওঁদের এই মুহূর্তে সিবিআই বা জেল হেফাজতে নিয়ে যাতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, আমরা সেটাই করেছি । আশা করি, কাকদ্বীপের চিকিৎসক ও জুনিয়র চিকিৎসকরা উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন ।"