কলকাতা, 2 সেপ্টেম্বর: বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের শোক প্রস্তাবে আরজি কর নির্যাতিতার বিষয়ে কোনও উল্লেখ করল না রাজ্য সরকার ৷ শুধু শোকপ্রকাশ করা হল সদ্য প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে ৷ ফলে দু’দিনের বিশেষ অধিবেশনের শুরুতেই শাসক ও বিরোধীর মধ্যে লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি হল সোমবার ৷ রাজ্য উল্লেখ না করলেও প্রধান বিরোধী দল বিজেপির তরফে এই নিয়ে শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয় ৷ সঙ্গে নীরবতাও পালন করেন বিজেপি বিধায়করা ৷
উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণ বিরোধী কড়া আইন তৈরিতেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দু’দিনের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ এ দিন প্রথামাফিক শোক প্রস্তাব দিয়ে অধিবেশন শুরু হয় ৷ সেখানে শুধু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যু নিয়ে শোকপ্রকাশের বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল ৷
এই নিয়ে আপত্তি তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ তিনি দাবি তোলেন, আরজি করের নির্যাতিতার নামও যুক্ত হোক শোকপ্রস্তাবে ৷ অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আইনি জটিলতার কথা উল্লেখ করে সেই দাবি খারিজ করে দেন ৷ এই অবস্থায় কিছুটা হতাশ হয়ে দীর্ঘক্ষণ বিধানসভায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায় বিরোধী দলনেতা-সহ বিজেপি পরিষদীয় দলকে । অধিবেশন মুলতুবি হওয়ার পর বিধানসভা কক্ষের মধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজে এই শোক প্রস্তাব পাঠ করেন । এবং বিধানসভার মধ্যে দাঁড়িয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করেন ।
অধিবেশনের শেষে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ‘‘এই ঘটনাটি (আরজি করের চিকিৎক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুন) দুঃখজনক । আমরা কোনোভাবেই বিষয়টাকে সমর্থন করি না । কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও আইনি বাধা রয়েছে । যেহেতু নির্যাতিতার নাম বিধানসভার ভিতরে নেওয়া যায় না, তাই তাঁর নাম আমরা অন্তর্ভুক্ত করিনি ।’’ অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণার পর যেভাবে বিজেপি যেভাবে শোকপ্রস্তাব পাঠ করল, তা নিয়ে অধ্যক্ষকে প্রশ্ন করা হয় ৷
তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভার অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যাওয়ার পর তার ভেতরে কী করা হল, তা কোনোভাবেই রেকর্ডে যায় না ।’’ এদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় যেভাবে নামহীন ভাবে শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয় । এক্ষেত্রেও প্রয়োজনে সেই পথ অনুসরণ করা যেত ।’’
এই নিয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, অতীতে কখনোই এই ধরনের ঘটনায় রাজ্য বিধানসভায় আলোচনা হয়নি বা শোক প্রস্তাবেও আসেনি । এই অবস্থায় এই প্রস্তাবে কী নিয়ে আলোচনা হবে, তার উপর কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে । এমনকি দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ডের সময়ও রাজ্য বিধানসভায় তাঁর নামে শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয়নি ।
অন্যদিকে এ দিন শোক প্রস্তাবে বিজেপি বিধায়কেরা গলায় কালো উত্তরীয় নিয়ে বিধানসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন । তাঁদের মূল বক্তব্য ছিল, আরজিকরের ঘটনার পর সরকার সেটাকে ঢাকার চেষ্টা কর সেই কারণেই প্রতিবাদ । বিধানসভার অধিবেশনের পরেই বিধানসভার চৌহদ্দিতে এই নিয়ে নীরব প্রতিবাদ শুরু করেন বিজেপির সদস্যরা । তাঁদের প্রত্যেকের হাতে ছিল বিচার চেয়ে পোস্টার ।