কলকাতা, 12 অগস্ট: আরজি কর হাসপাতালে তরুণী ডাক্তারি পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি । আজ থেকে হাসপাতালের জরুরি পরিষেবায় চিকিৎসা করা থেকেও তাঁরা হাত তুলে নিয়েছেন । আর তার ফলে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে ৷ কর্মবিরতির কারণে রোগীর মৃত্যুও হয়েছে বলে দাবি আত্মীয়দের ৷
এক রোগীর অভিযোগ, এই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের স্বজনের । বারাসত থেকে তাঁরা এসেছেন আরজি কর হাসপাতালে । প্রায় 5 দিন ধরে ভর্তি ছিলেন তাঁদের রোগী । পরিবারের অভিযোগ, "প্রথমে চিকিৎসা হয়েছে । কিন্তু তারপর আর কিছু হয়নি । এরই মধ্যে আজ রাত 9টা নাগাদ আমাদের রোগী মারা গিয়েছে । কিন্তু মর্গে দেহ যাওয়ার পর জানতে পারছি কাগজে ভুল ছিল । মৃত্যুর পর প্রায় 6 ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে । এঁরা আন্দোলন করতে গিয়ে রোগীদের পরিষেবা দিতেই ভুলে গিয়েছে ।"
পরিষেবা না-পেয়ে এমনই অসহায় পরিস্থিতি হাসপাতালে আসা অন্যান্যদেরও ৷ হাসপাতালগুলির বাইরে থমথমে মুখে বসে রয়েছেন রোগীর বাড়ির লোকেরা । আদেও কি হচ্ছে চিকিৎসা ? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁদের মনে । গর্ভবতী মেয়েকে নিয়ে আজ ভোরে আরজি কর হাসপাতালে এসেছেন দক্ষিণদাড়ির এক পরিবার । অন্তঃসত্ত্বার বৃদ্ধা মায়ের অভিযোগ, "রাতেই জল ভেঙে গিয়েছিল ৷ ভোর 5 টায় এসেছি । এখনও চিকিৎসার কী হল জানি না । কোনও খবর হল কি না তাও জানি না । বিকেল হয়ে গেল । এখনও মেয়ের কোনও খোঁজ পেলাম না ।"
আরজি করের বাইরেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন রাজারহাটের এক মা । তাঁর ছেলে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ৷ কিছুদিন আগেই অস্ত্রোপচার হচ্ছে ৷ তবে তারপরেও মাথায় জল জমে যাওয়ায় মাঝে মাঝেই হাসপাতালে আনতে হচ্ছে, সেই জল বের করার জন্য ৷ কিন্তু জানি না আদেও ওর চিকিৎসা হচ্ছে কি না ৷"
ভাঙড় থেকে হাসপাতালে এসেছে আর এক পরিবার ৷ তাদের আত্মীয়ের কোমরের হাড় ভেঙেছে । কিন্তু বৃহস্পতিবার ভর্তি করা হলেও সোমবার পর্যন্ত হয়নি অস্ত্রোপচার ।"
তাঁদের কর্মবিরতির জন্য সাধারণ মানুষকে যে প্রবল সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা ৷ তবে চিকিৎসা করার মতো পরিবেশ তৈরি করে দিতে সাধারণ মানুষকেও তাঁদের দাবিতে সরব হওয়ার জন্য তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন ৷
জুনিয়র ডাক্তার শুভেন্দু মল্লিক বলেন, "আমাদের এখন কিছু করার নেই । আমরাও রোগীদের পরিষেবা দিতে চাই । কিন্তু আগে চিকিৎসা করার মতো সুব্যবস্থা দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে । আমরা চাই রোগীর পরিবারও আমাদের পাশে দাঁড়াক ।" জরুরি বিভাগে তাঁরা কাজ না-করলেও এই বিভাগ সম্পূর্ণ বন্ধ নয় বলে জানান তিনি । তাঁর কথায়, "জুনিয়র চিকিৎসকেরা জরুরি বিভাগে পরিষেবা বন্ধ রেখেছে, কিন্তু সেখানে আমাদের সিনিয়ররা চিকিৎসা করছেন ।"