জলপাইগুড়ি, 3 জুলাই: 'ওল খেয়ো না ধরবে গলা' বা 'যেমন বুনো ওল তেমনই বাঘা তেঁতুল'... ওলের মতো সবজি গৃহিণীদের রান্নাঘরে যেমন কদর পায় তেমনই বাংলার প্রবাদেও জায়গা পায় ৷ এহেন ওলকেই এবার গিনেস বুকে নাম লেখাতে প্রস্তুত জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়ার বাসিন্দা সুমন্ত মিশ্র ৷ নানা উচ্চতার সবজি ফলিয়ে নাম লিখিয়েছেন লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে ৷ এবার 14.7 ফুটের ওল গাছ চাষ করে তাক লাগালেন কৃষি বিজ্ঞানে ৷
কৃষি গবেষণায় তাক জলপাইগুড়ির বাসিন্দার (ইটিভি ভারত) কৃষি গবেষক সুমন্ত মিশ্র বলেন, "আমার চারকাঠার ওপরে জমি। বাড়ি বানানোর পর যে জায়গা রয়েছে সেখানেই আমি অনেক কিছু ফসল চাষ করেছি। এখন আমার বাড়িতে যে ওল গাছ আছে, তার উচ্চতা 14.7 ফুট, যা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের দাবিদার। সাধারণ ওল গাছ হয়ে থাকে 4 থেকে 5 ফুটের। ইন্টারনেটে ওল গাছের সর্বোচ্চ উচ্চতা এখনও পর্যন্ত 12 ফুট দেখিয়েছে ৷ চলতি বছর 14 এপ্রিল ওল গাছ চাষ করেছি ৷ এর মধ্যেই সেই গাছের উচ্চতা 14 ফুট ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ডঃ বিপ্লব দাস ও কেন্দ্রীয় সরকারের মোহিতনগরে অবস্থিত সেন্ট্রাল প্ল্যান্টেশন ক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (CPCR) প্রিন্সিপাল-সায়েন্টিস্ট অরুণ সিট ওল গাছ দেখে মাপজোখ করেছেন।"
তিনি আরও বলেন, "স্বাভাবিক ভাবেই গিনেস বুকে নাম তোলার দাবিদার আমি। লিমকা বুকে আমার অনেক ফসলের রেকর্ড হয়েছে। তবে গিনেস বুকে এই ফসলের নাম তুলতে চাই ৷ তবে সে ক্ষেত্রে সরকারের সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয় ৷ আমি উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে 21টি ভ্যারাইটি ফসলের রেজিষ্ট্রেশনের আবেদন করেছি। আশা করি, ভারত সরকারের রেজিষ্ট্রেশন পাব। আমি চাই, আগামিদিনে কৃষকদের পরামর্শ দিতে। অল্প খরচে, অল্প জায়গায় কীভাবে ফসল ফলানো যায় এটাই আমরা লক্ষ্য।"
ইতিমধ্যেই সুমন্ত মিশ্রের লিমকা বুক অব রেকর্ডসে রয়েছে দীর্ঘ লঙ্কাগাছ ও তুলো গাছের নাম ৷ তাঁর চাষ করা লঙ্কা গাছের উচ্চতা 32 ফুট ও তুলো গাছের উচ্চতা 37 ফুট ৷ তিনি যে আখ গাছ চাষ করেছেন তার উচ্চতা 44 ফুট ৷ এছাড়াও বাড়ির ছাদে মাচা বানিয়ে একাধিক ভালো জাতের আম ফলিয়েছেন ৷ ইতিমধ্যেই সুমন্তের মিশ্রের তিনটি চাষের ফলন ভারত সরকারের রেজিষ্ট্রেশন পেয়েছে ৷ যার মধ্যে রয়েছে ম্যাংগো কুইন (সীমা), কটন কুইন (সীমা), চিলি কুইন (সীমা) ৷ প্রতিটি ফলন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সুকান্ত বাবু নিজের স্ত্রীর নাম উল্লেখ করেছেন ৷ যার জন্য আপ্লুত সীমা মিশ্র ৷
তিনি জানান, দীর্ঘদিন থেকে তাঁর স্বামী এই কাজ করে আসছেন। তাঁর নামেই তিনটি ফসল কেন্দ্রীয় সরকারের রিজিস্ট্রেশন পেয়েছে। এটা তাঁর জীবনে বিরাট পাওনা। উল্লেখ্য, গবেষক সুমন্ত মিশ্র 11টি ভ্যারাইটির মধ্যে ধান,বেগুন,পেঁয়াজ, চাল কুমড়োর রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেছেন। এর আগে বাড়ির ছাদে মাচা করে 1700টি লাউ-সহ একটি পটল গাছে 5 ক্যুইন্টাল পটল ফলিয়েছিলেন । শহরাঞ্চলে বাড়ির অল্প জায়গায়, স্বল্প খরচে মাটিতে ও ছাদে কীভাবে ফসল ফলানো যায় সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন জলপাইগুড়ির সুমন্ত মিশ্র।