ETV Bharat / state

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কারণ দ্রুত গতি নাকি সিগন্যালিংয়ে ত্রুটি ? - Kanchanjungha Express Accident

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 18, 2024, 9:33 PM IST

Updated : Jun 21, 2024, 12:15 PM IST

Cause of Kanchanjungha Express Accident: স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল দীর্ঘক্ষণ খারাপ ছিল ৷ তাহলে সিগন্যালিং ডিপার্টমেন্ট কী করছিল ? অথরিটি নিয়ে নিয়মবিরুদ্ধভাবে দ্রুত গতিতে চালাচ্ছিলেন মালবাহী ট্রেনের লোকোপাইলট ৷ তাঁর মৃত্যু হলেও বেঁচে গিয়েছেন সহকারী চালক ৷ রহস্যের সমাধান মিলবে তাঁর কাছ থেকে ?

Kanchanjungha Train Accident
ফাঁসিদেওয়ার কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা (ইটিভি ভারত)

জলপাইগুড়ি, 18 জুন: সিগন্যালিং ডিপার্টমেন্টের ব্যর্থতার কারণেই কি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে ধাক্কা মারল পণ্যবাহী ট্রেন ? নাকি পণ্যবাহী গাড়ির চালক দ্রুতগতিতে ট্রেন চালানোর পরিণতি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ? রেল দুর্ঘটনার তদন্তে প্রাথমিকভাবে এই প্রশ্নগুলি উঠে আসছে ৷ ঘটনাচক্রে পণ্যবাহী ট্রেনটির চালক অনিল কুমারের মৃত্যু হলেও বেঁচে গিয়েছেন সহকারী চালক মনু কুমার ৷ তাই কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে তাঁকে ৷ মনু কুমারের উত্তরেই লুকিয়ে আছে রেল দুর্ঘটনার কারণ, মনে করছেন প্রাক্তন রেল আধিকারিকরা ৷

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, 17 জুন ভোর 5.50 মিনিট থেকে 3 ঘণ্টা অটোমেটিক লক সিস্টেম বা স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং কাজ করছিল না ৷ তখন স্টেশন মাস্টারের জারি করা অথরিটি নিয়ে ট্রেন চালাচ্ছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং মালবাহী গাড়িটির চালকরা ৷ নিয়ম অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে অ্যাবসোলিউট ব্লক সিস্টেমে পরিবর্তিত করে ট্রেন চালানো হয় ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি ৷ কেন দ্রুত চালু করা হয়নি ? রেলের সিগন্যালিং ডিপার্মেন্ট কী করছিল ? তিন ঘণ্টা ধরে তারা কেন সিগন্যাল ঠিক করতে পারেনি ?

অ্যাবসোলিউট ব্লক সিস্টেম কী ?

অ্যাবসিলিউট ব্লক সিস্টেমে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। একটি স্টেশনে থেকে ট্রেন চালানো হলে সেই ট্রেনটি যতক্ষণ না পর্যন্ত পরের স্টেশনে পৌঁছবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্য ট্রেন চালানো হবে না ৷ ধরা যাক, দু'টি স্টেশন A ও B ৷ A থেকে ট্রেনটি ছেড়ে B-তে পৌঁছনোর পর সেই স্টেশন ছেড়ে চলে গেলে তখন পরের ট্রেনটি চালানো হবে ৷ শুধু তাই নয়, স্টেশন মাস্টারকে ফোন করে জানানে হবে যে ট্রেনটি B স্টেশন ছেড়েছে, তবেই চলবে পরের ট্রেন ৷

অন্যদিকে অথরিটিতে পরিষ্কার বলা ছিল, মালবাহী গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় 15 কিমির বেশি হবে না ৷ ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হবে এবং প্রতিটি সিগন্যালে দাঁড়িয়ে সবদিক দেখেশুনে তবে ট্রেন চালাতে হবে ৷ সেই নির্দেশ না মেনে দ্রুতগতিতে চলছিল মালগাড়ি ৷ যার ফলে আগের স্টেশনে ঢোকার আগে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে পিছন দিক থেকে ধাক্কা মারে মালগাড়িটি ৷ তাহলে কেন গতিবেগ বাড়ালেন মালবাহী গাড়ির চালক ?

17 জুন ভোর 5:50 থেকে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালে সমস্যা হয় ৷ ভোর 6:05 মিনিটে রাঙাপানি স্টেশন থেকে সিগন্যালিং ব্যবস্থা খারাপের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল ৷ স্বয়ংক্রিয় ব্লক সিস্টেম ব্যর্থ হলে তা থেকে অ্যাবসোলিউট ব্লক সিস্টেমে পরিবর্তিত করেই ট্রেন চালানো হয় ৷ কিন্তু সিগন্যালিং বিভাগ সেই সমস্যা তাড়াতাড়ি ঠিক করে ফেলতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাসী ছিল ৷ সেই জন্য অ্যাবসোলিউট ব্লক সিস্টেমও চালু করা হয়নি ৷ এদিকে সিগন্যালিং ডিপার্টমেন্ট তা মেরামত করা নিয়ে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি ৷ এইভাবে স্বয়ংক্রিয় ব্লক সিস্টেম বলবৎ থাকে ৷ কিন্তু এনিয়ে সিগন্যালিং বিভাগ নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করেনি ৷

Kanchanjungha Express Accident Cause
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় কন্টেনার উলটে গিয়েছে (ইটিভি ভারত)

ট্রেন নং DN 13174 কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (আগরতলা-শিয়ালদহ) স্টেশন মাস্টারের অথরিটি অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছিল এবং সামনের সিগন্যালে থেমেছিল ৷ ট্রেনটি রাঙাপানি ও চটেরহাট স্টেশনের মধ্যে ‘AS650’ নম্বর সিগন্যালে নির্ধারিত সময়ের জন্য থামে ৷

এদিকে জিএফসিজে কন্টেনার মালবাহী ট্রেনটি একই ভাবে অথরিটি নিয়েই রাঙাপানি স্টেশন থেকে ছাড়ে ৷ NC 9-এর গেটম্যান জানিয়েছেন (যা দুর্ঘটনার অবস্থানের প্রায় 1 কিমি আগে) কন্টেনার মালগাড়ি ট্রেনের গতি ছিল প্রায় 40-50 কিমি প্রতি ঘণ্টা ৷ যা রেলের প্রেসক্রাইব করা নিয়মের বিরুদ্ধে ৷ স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে রাঙাপানি স্টেশন দিয়ে মোট 7টি ডাউন ট্রেন গিয়েছে ৷ কিন্তু নিয়ম মেনে চলায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি ৷

জানা গিয়েছে, রাঙাপানি এলাকায় অটোমেটিক লক সিস্টেম 9 মাস আগে চালু হয়েছে ৷ 12 কিলোমিটারের মধ্যে 9টি সিগন্যাল রয়েছে ৷ রেলের স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা অচল ছিল ৷ তাহলে ট্র্যাকিং সিস্টেম কি ফেইল করেছিল ? কন্ট্রোল রুম কি কিছুই টের পায়নি ৷ অনুমান করা হচ্ছে প্রবল বৃষ্টি বা বজ্রপাতের কারণে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল সিস্টেম খারাপ হয়ে গিয়েছিল ৷ সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন চিফ কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি জনক কুমার গর্গ ৷

এছাড়া ট্রাফিক ইনস্পেকটর, স্টেশন মাস্টার, গেট ম্যান, লোকো ইনস্পেক্টরের ভূমিকা কী ছিল, তা দেখা হবে ৷ রেলের নিয়ম অনুযায়ী লিমিটেড স্পিডেই যাওয়া উচিত ছিল মালগাড়িটির ৷ কিন্তু তা হয়নি ৷ এই বিষয়টি জানা যাবে স্পিড মিটার পরীক্ষা করলে ৷ যদি ব্লক নিয়ে ট্রেন চালানো হত, তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না ৷ সিগন্যাল ফেলিওয়র আবার হিউম্যান ফেইলিওর দু'টি একসঙ্গে কীভাবে সম্ভব ?

Kanchanjungha Express Accident Cause
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা কেন ঘটল ? (ইটিভি ভারত)

সে সময় অপারেটিং ডিপার্টমেন্টের ভূমিকাই বা কী ছিল, সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকদের ৷ প্রশ্ন উঠছে লোকো পাইলট এবং সহকারী লোকো পাইলট কি ক্লান্ত ছিলেন ? রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, জিএফসিজে কন্টেনার মাল ট্রেনের লোকো পাইলট (LP) 17 জুন সকালে ট্রেন চালকের আসনে বসার আগে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিয়েছিল ৷ লোকো পাইলট অনিল কুমার 30 ঘণ্টারও বেশি সময় হেডকোয়ার্টারে বিশ্রাম নিয়েছিলেন ৷ সহকারী লোকো পাইলট মনু কুমারও 30 ঘণ্টার বেশি সদর দফতরের বিশ্রাম নিয়েছিলেন ৷ তাই ক্লান্তির কারণটি এখানে ফ্যাক্টর হচ্ছে না ৷

অটোমেটিক লক সিস্টেম কী ?

নতুম এই অটোমেটিক লক সিস্টেমে সিগন্যাল পেয়ে গেলেই একটি গাড়ির পিছনে একটি গাড়ি চলবে থাকবে ৷ এতে সিগন্যাল ঠিক থাকলে ট্রেনটি আগে যাওয়ার জন্য সবুজ সংকেত পাবে না ৷ সিগন্যাল না পেলে ট্রেনটি লাল সিগন্যাল দেখে দাঁড়িয়ে যাবে ৷ এই সিগন্যাল ব্যবস্থায় দু'টি ট্রেনকে কোনও ভাবেই কাছাকাছি আসতে দেবে না ৷ শুধু তাই নয়, কোনও গাড়ি বিকল হয়ে ট্র‍্যাকে দাঁড়িয়ে থাকলে তা ট্র‍্যাকিং সিস্টেমে ধরা পড়বে ৷ ফলে পিছন দিক থেকে আসতে থাকা ট্রেনটি লাল সিগন্যাল দেখে দাঁড় করিয়ে দেবে ৷

17 জুনের কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় অটোমেটিক লক সিস্টেম বা স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা খারাপ ছিল ৷ দীর্ঘক্ষণ তা কাজ না করলেও সিগন্যালিং দফতর তার মেরামতি কেন করল না ? তাদের অবহেলাতেই কি অ্যাবসোলিউট ব্লক সিস্টেম চালু করা গেল না ? অন্যদিকে মালবাহী গাড়ির চালকই বা কেন নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে 15 কিমির বেশি গতিবেগে ট্রেন চালাচ্ছিলেন ? ট্র্যাকিং সিস্টেম কী করছিল ? প্রাথমিক তদন্তে এই প্রশ্নগুলি উঠে আসছে ৷ অবহেলা একজনের নাকি সামগ্রিক ? রেল সেফটি কমিশনের তদন্ত বলছে ?

জলপাইগুড়ি, 18 জুন: সিগন্যালিং ডিপার্টমেন্টের ব্যর্থতার কারণেই কি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে ধাক্কা মারল পণ্যবাহী ট্রেন ? নাকি পণ্যবাহী গাড়ির চালক দ্রুতগতিতে ট্রেন চালানোর পরিণতি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ? রেল দুর্ঘটনার তদন্তে প্রাথমিকভাবে এই প্রশ্নগুলি উঠে আসছে ৷ ঘটনাচক্রে পণ্যবাহী ট্রেনটির চালক অনিল কুমারের মৃত্যু হলেও বেঁচে গিয়েছেন সহকারী চালক মনু কুমার ৷ তাই কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে তাঁকে ৷ মনু কুমারের উত্তরেই লুকিয়ে আছে রেল দুর্ঘটনার কারণ, মনে করছেন প্রাক্তন রেল আধিকারিকরা ৷

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, 17 জুন ভোর 5.50 মিনিট থেকে 3 ঘণ্টা অটোমেটিক লক সিস্টেম বা স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং কাজ করছিল না ৷ তখন স্টেশন মাস্টারের জারি করা অথরিটি নিয়ে ট্রেন চালাচ্ছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং মালবাহী গাড়িটির চালকরা ৷ নিয়ম অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে অ্যাবসোলিউট ব্লক সিস্টেমে পরিবর্তিত করে ট্রেন চালানো হয় ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি ৷ কেন দ্রুত চালু করা হয়নি ? রেলের সিগন্যালিং ডিপার্মেন্ট কী করছিল ? তিন ঘণ্টা ধরে তারা কেন সিগন্যাল ঠিক করতে পারেনি ?

অ্যাবসোলিউট ব্লক সিস্টেম কী ?

অ্যাবসিলিউট ব্লক সিস্টেমে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। একটি স্টেশনে থেকে ট্রেন চালানো হলে সেই ট্রেনটি যতক্ষণ না পর্যন্ত পরের স্টেশনে পৌঁছবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্য ট্রেন চালানো হবে না ৷ ধরা যাক, দু'টি স্টেশন A ও B ৷ A থেকে ট্রেনটি ছেড়ে B-তে পৌঁছনোর পর সেই স্টেশন ছেড়ে চলে গেলে তখন পরের ট্রেনটি চালানো হবে ৷ শুধু তাই নয়, স্টেশন মাস্টারকে ফোন করে জানানে হবে যে ট্রেনটি B স্টেশন ছেড়েছে, তবেই চলবে পরের ট্রেন ৷

অন্যদিকে অথরিটিতে পরিষ্কার বলা ছিল, মালবাহী গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় 15 কিমির বেশি হবে না ৷ ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হবে এবং প্রতিটি সিগন্যালে দাঁড়িয়ে সবদিক দেখেশুনে তবে ট্রেন চালাতে হবে ৷ সেই নির্দেশ না মেনে দ্রুতগতিতে চলছিল মালগাড়ি ৷ যার ফলে আগের স্টেশনে ঢোকার আগে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে পিছন দিক থেকে ধাক্কা মারে মালগাড়িটি ৷ তাহলে কেন গতিবেগ বাড়ালেন মালবাহী গাড়ির চালক ?

17 জুন ভোর 5:50 থেকে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালে সমস্যা হয় ৷ ভোর 6:05 মিনিটে রাঙাপানি স্টেশন থেকে সিগন্যালিং ব্যবস্থা খারাপের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল ৷ স্বয়ংক্রিয় ব্লক সিস্টেম ব্যর্থ হলে তা থেকে অ্যাবসোলিউট ব্লক সিস্টেমে পরিবর্তিত করেই ট্রেন চালানো হয় ৷ কিন্তু সিগন্যালিং বিভাগ সেই সমস্যা তাড়াতাড়ি ঠিক করে ফেলতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাসী ছিল ৷ সেই জন্য অ্যাবসোলিউট ব্লক সিস্টেমও চালু করা হয়নি ৷ এদিকে সিগন্যালিং ডিপার্টমেন্ট তা মেরামত করা নিয়ে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি ৷ এইভাবে স্বয়ংক্রিয় ব্লক সিস্টেম বলবৎ থাকে ৷ কিন্তু এনিয়ে সিগন্যালিং বিভাগ নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করেনি ৷

Kanchanjungha Express Accident Cause
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় কন্টেনার উলটে গিয়েছে (ইটিভি ভারত)

ট্রেন নং DN 13174 কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (আগরতলা-শিয়ালদহ) স্টেশন মাস্টারের অথরিটি অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছিল এবং সামনের সিগন্যালে থেমেছিল ৷ ট্রেনটি রাঙাপানি ও চটেরহাট স্টেশনের মধ্যে ‘AS650’ নম্বর সিগন্যালে নির্ধারিত সময়ের জন্য থামে ৷

এদিকে জিএফসিজে কন্টেনার মালবাহী ট্রেনটি একই ভাবে অথরিটি নিয়েই রাঙাপানি স্টেশন থেকে ছাড়ে ৷ NC 9-এর গেটম্যান জানিয়েছেন (যা দুর্ঘটনার অবস্থানের প্রায় 1 কিমি আগে) কন্টেনার মালগাড়ি ট্রেনের গতি ছিল প্রায় 40-50 কিমি প্রতি ঘণ্টা ৷ যা রেলের প্রেসক্রাইব করা নিয়মের বিরুদ্ধে ৷ স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে রাঙাপানি স্টেশন দিয়ে মোট 7টি ডাউন ট্রেন গিয়েছে ৷ কিন্তু নিয়ম মেনে চলায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি ৷

জানা গিয়েছে, রাঙাপানি এলাকায় অটোমেটিক লক সিস্টেম 9 মাস আগে চালু হয়েছে ৷ 12 কিলোমিটারের মধ্যে 9টি সিগন্যাল রয়েছে ৷ রেলের স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা অচল ছিল ৷ তাহলে ট্র্যাকিং সিস্টেম কি ফেইল করেছিল ? কন্ট্রোল রুম কি কিছুই টের পায়নি ৷ অনুমান করা হচ্ছে প্রবল বৃষ্টি বা বজ্রপাতের কারণে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল সিস্টেম খারাপ হয়ে গিয়েছিল ৷ সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন চিফ কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি জনক কুমার গর্গ ৷

এছাড়া ট্রাফিক ইনস্পেকটর, স্টেশন মাস্টার, গেট ম্যান, লোকো ইনস্পেক্টরের ভূমিকা কী ছিল, তা দেখা হবে ৷ রেলের নিয়ম অনুযায়ী লিমিটেড স্পিডেই যাওয়া উচিত ছিল মালগাড়িটির ৷ কিন্তু তা হয়নি ৷ এই বিষয়টি জানা যাবে স্পিড মিটার পরীক্ষা করলে ৷ যদি ব্লক নিয়ে ট্রেন চালানো হত, তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না ৷ সিগন্যাল ফেলিওয়র আবার হিউম্যান ফেইলিওর দু'টি একসঙ্গে কীভাবে সম্ভব ?

Kanchanjungha Express Accident Cause
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা কেন ঘটল ? (ইটিভি ভারত)

সে সময় অপারেটিং ডিপার্টমেন্টের ভূমিকাই বা কী ছিল, সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকদের ৷ প্রশ্ন উঠছে লোকো পাইলট এবং সহকারী লোকো পাইলট কি ক্লান্ত ছিলেন ? রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, জিএফসিজে কন্টেনার মাল ট্রেনের লোকো পাইলট (LP) 17 জুন সকালে ট্রেন চালকের আসনে বসার আগে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিয়েছিল ৷ লোকো পাইলট অনিল কুমার 30 ঘণ্টারও বেশি সময় হেডকোয়ার্টারে বিশ্রাম নিয়েছিলেন ৷ সহকারী লোকো পাইলট মনু কুমারও 30 ঘণ্টার বেশি সদর দফতরের বিশ্রাম নিয়েছিলেন ৷ তাই ক্লান্তির কারণটি এখানে ফ্যাক্টর হচ্ছে না ৷

অটোমেটিক লক সিস্টেম কী ?

নতুম এই অটোমেটিক লক সিস্টেমে সিগন্যাল পেয়ে গেলেই একটি গাড়ির পিছনে একটি গাড়ি চলবে থাকবে ৷ এতে সিগন্যাল ঠিক থাকলে ট্রেনটি আগে যাওয়ার জন্য সবুজ সংকেত পাবে না ৷ সিগন্যাল না পেলে ট্রেনটি লাল সিগন্যাল দেখে দাঁড়িয়ে যাবে ৷ এই সিগন্যাল ব্যবস্থায় দু'টি ট্রেনকে কোনও ভাবেই কাছাকাছি আসতে দেবে না ৷ শুধু তাই নয়, কোনও গাড়ি বিকল হয়ে ট্র‍্যাকে দাঁড়িয়ে থাকলে তা ট্র‍্যাকিং সিস্টেমে ধরা পড়বে ৷ ফলে পিছন দিক থেকে আসতে থাকা ট্রেনটি লাল সিগন্যাল দেখে দাঁড় করিয়ে দেবে ৷

17 জুনের কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় অটোমেটিক লক সিস্টেম বা স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা খারাপ ছিল ৷ দীর্ঘক্ষণ তা কাজ না করলেও সিগন্যালিং দফতর তার মেরামতি কেন করল না ? তাদের অবহেলাতেই কি অ্যাবসোলিউট ব্লক সিস্টেম চালু করা গেল না ? অন্যদিকে মালবাহী গাড়ির চালকই বা কেন নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে 15 কিমির বেশি গতিবেগে ট্রেন চালাচ্ছিলেন ? ট্র্যাকিং সিস্টেম কী করছিল ? প্রাথমিক তদন্তে এই প্রশ্নগুলি উঠে আসছে ৷ অবহেলা একজনের নাকি সামগ্রিক ? রেল সেফটি কমিশনের তদন্ত বলছে ?

Last Updated : Jun 21, 2024, 12:15 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.