আসানসোল, 6 জুন: জন্ম থেকেই কঠিন রোগ সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত আসানসোলের অমৃতা । হাঁটাচলা তো দূরের কথা, বসতে গেলেও অন্যের সাহায্য নিতে হয় তাঁকে । হাত,পা-সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অসাড় । ট্যাব নিয়ে পড়াশুনো করতে গেলেও, টাচ স্ক্রিনে নাক ঘষে তাঁকে ট্যাব বা মোবাইল চালাতে হয় । তারপরেও অমৃতা বলেন, "আমি সব পারি ।" হ্যাঁ, এই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । উচ্চমাধ্যমিকে দারুণ ফল করে এখন অমৃতার ইচ্ছে ইংরেজি নিয়ে পড়াশুনো করা । আগামী দিনে শিক্ষিকা হতে চান তিনি ৷
2005 সালে জন্ম আসানসোলের মহিশীলার বাসিন্দা অমৃতা ভৌমিকের । বাবা অমিত কুমার ভৌমিক বর্তমানে রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ৷ শারিরীকভাবে তিনিও অসুস্থ । মা মিলু ভৌমিক করোনায় মারা গিয়েছেন । এহেন পরিস্থিতিতে অমৃতার একমাত্র অবলম্বন জেঠিমা নীনা ভৌমিক । তিনিই এখন অমৃতার মায়ের মতো তাঁকে মানুষ করেছেন । চরম বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও অমৃতাকে এতদূর নিয়ে আসার যে কঠিন লড়াই তা বলতে গিয়ে বারবার গলা ধরে আসছিল নীনা ভৌমিকের ।
নীনা দেবীর কথায়, "জন্মের পর আমরা যখন লক্ষ্য করি ওর শরীর বেঁকে যাচ্ছে, তখনই ভয় পেয়ে আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে যাই । চেন্নাই গিয়ে জানতে পারি ও সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত । সেই থেকে লড়াই শুরু । মধ্যবিত্ত পরিবারে কতই আর খরচ করে এই রোগের চিকিৎসা করানো যায় ৷ পরবর্তীকালে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি এই রোগের প্রভাবে অমৃতার চোখ, কান, দাঁত সব আক্রান্ত । তবু চিকিৎসকদের চেষ্টায় চোখ, দাঁত পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে । কানে যদিও মেশিন দিতে হয় ।"
সেরিব্রাল পালসিদের জাতীয় তাইকোন্ডো চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয় মহারাষ্ট্রের রুদ্রর
শারীরীকভাবে নিজে কিছু করার ক্ষমতা নেই অমৃতার । হাত পায়ে কোনও বল নেই । তারপরেও নিজের চেষ্টায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল করেছেন তিনি । জড়ানো কণ্ঠেই অমৃতা কথা বলেছেন ইটিভি ভারতের সঙ্গে ৷ তিনি জানিয়েছেন, মাধ্যমিকে স্কুলে প্রথম হয়েছিলেন । উচ্চমাধ্যমিকে মাত্র 4 নম্বরের জন্য হাতছাড়া হয়েছে ফার্স্ট ডিভিশন ৷ তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল 296 । প্রিয় বিষয় ইংরেজিতে পেয়েছিলেন 70 ৷ তাই আগামীতে ইংরেজি নিয়ে পড়াশুনো করে শিক্ষিকা হতে চান অমৃতা ।
নিজে কলম ধরে লিখতে পারেন না । ঠোঁটে বইয়ের পাতা উলটে কিংবা নাক ঘষে মোবাইল বা ট্যাবে পড়তে হয় তাঁকে । কঠিন জীবন যুদ্ধ । ডামি রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল অমৃতাকে । নিজের শ্রেণির তুলনায় নিম্নশ্রেণির ছাত্রকে সহযোগী লেখক হিসেবে পেয়েছিলেন তিনি । অমৃতা হাসিমুখে বলেন, "সেই লেখককে উত্তর বোঝাতেই সময় চলে যায় । নইলে আরও বেশি নম্বর নিশ্চয় আসত ।"
খাটে ছড়ানো বিবেকানন্দের বই । বারবার পড়ার ঝোঁকে ঠোঁট দিয়ে বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছেন অমৃতা । আবার ট্যাবে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে আত্মীয় বন্ধুদের প্রয়োজনীয় উত্তর দিচ্ছেন । প্রতিবন্ধকতা তাঁকে আটকাতে পারেনি । তাই তো দৃপ্ত কণ্ঠে তিনি বলতে পারেন 'আমি নারী, আমি সব পারি ।'
ছবিতেই জীবনের রঙ খুঁজে নিয়েছেন সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত সুকল্প