ETV Bharat / state

শিক্ষামন্ত্রীকে অপসারণের সুপারিশ, কী বলছেন প্রাক্তন রাজ্যপাল থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদরা? - BRATYA BASU

Bratya Basu Controversy: শিক্ষামন্ত্রীকে অপসারণের সুপারিশ ঘিরে তোলপাড় বিভিন্ন মহল। কে কী বলছেন তা জানতে বিশিষ্টদের সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত।

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 4, 2024, 10:45 PM IST

Updated : Apr 5, 2024, 7:49 AM IST

কলকাতা, 4 এপ্রিল: শিক্ষা দফতরকে সামনে রেখে বিশেষ করে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে সরকার এবং রাজভবনের সংঘাত সাম্প্রতিক অতীতে কোনও নতুন বিষয় নয়। কিন্তু নির্বাচন চলাকালীন রাজ্যপালের মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের সুপারিশ অবশ্যই নজিরবিহীন। খুব স্বাভাবিকভাবেই বৃহস্পতিবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী ময়দানে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

প্রশ্ন হল, বাস্তবে রাজ্যপাল এভাবে শিক্ষা মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করতে পারেন কি না। করলেও তা কতটা যুক্তিযুক্ত। এর উত্তর অবশ্য দিয়েছেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী। রাজভবন থেকে শিক্ষা মন্ত্রীর অপসারণের সুপারিশের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই নিয়ে মুখ খোলেন শিক্ষামন্ত্রী। সরাসরি তিনি রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন। সেখানে তিনি লেখেন, "আমি দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে যদি রাজ্যপালকে সরানোর সুপারিশ করতাম, তা হলে সেটা যেমন হাস্যকর হত, এটাও ঠিক তেমনই হাস্যকর।"

ব্রাত্য বসুর স্পষ্ট যুক্তি, তিনি যদি কোনও নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করে থাকেন, তাহলে তা নির্বাচন কমিশনের নজরে আনার অধিকার রয়েছে যে কোনও রাজনৈতিক দলের। কিন্তু রাজ্যপাল তা করছেন কেন? শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাখ্যা, এমনটি করে রাজ্যপাল শুধু নিজের পদের অপব্যবহার করছেন তাই নয় তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ও প্রকাশ্যে এনে ফেলছেন।

এক্ষেত্রে ব্রাত্যর বক্তব্য, "ভারতের সংবিধান অনুযায়ী কোনও রাজ্যের মন্ত্রীর অপসারণ বা নিয়োগের সুপারিশ করতে পারেন একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল শুধু নিজের আসল রংই দেখালেন না, নিজের সাংবিধানিক সীমাও লঙ্ঘন করলেন।"

অন্যদিকে ব্রাত্যর দাবি নস্যাৎ করে দিচ্ছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তিনি ইটিভি ভারতকে জানান, সংবিধান রাজ্যপালকে বেশ কিছু ক্ষমতা দিয়েছে। সেই সূত্রে তিনি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে যে কোনও বিষয়ে জবাব তলব করতে পারেন। প্রয়োজনে নথিও চাইতে পারেন। একইভাবে তিনি চাইলে কোনও মন্ত্রীর অপসারণের সুপারিশও করতে পারেন। কিন্তু সেই সুপারিশ বাস্তবায়িত করা না-করা সবটাই মুখ্যমন্ত্রীর উপর নির্ভর করে। ব্রাত্যকে খোঁচা দিয়ে তথাগত বলেন, "শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ব্রাত্যবাবুর সংবিধান সম্পর্কে আরও অবগত থাকা উচিত।সংবিধান ভালো করে পড়ুন। কার কী ক্ষমতা আছে সে বিষয়ে অবগত হন।"

প্রাক্তন রাজ্যপাল যখন এভাবে শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা করছেন, ঠিক তখন শিক্ষাক্ষেত্রে উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ বঙ্গের ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা অতীতে ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না। একইসঙ্গে তিনি মনে করছেন রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ শিক্ষাক্ষেত্রে একটা অচলাবস্থার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

এদিন ইটিভি ভারতকে তিনি বলেন, "একজন শিক্ষামন্ত্রী এই মুহূর্তে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তাঁকে অপসারণের সুপারিশ করছেন রাজ্যপাল। অথচ কয়েকদিন আগে পর্যন্ত জেলে থাকা একজন মন্ত্রীর অপসারণের সুপারিশ তিনি করেননি। প্রশ্নটা এখানেই, রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশ মতো মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান। সরকার চলে তাঁর নামে। এক্ষেত্রে একটা সংগত প্রশ্ন অবশ্যই থাকে যিনি সংবিধান অনুযায়ী নিয়োগ দেন তিনি কি তার অপসারণের সুপারিশ করতে পারেন না! যদিও এই আইন সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই।"

এদিন শিক্ষামন্ত্রীরও সমালোচনা করেছেন এই প্রবীণ শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, "আমি যতদূর শুনেছি ওয়েবকুপার যে সভাটি নিয়ে এই যাবতীয় ঘটনা সেটি উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে সংঘটিত করা হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যের কাছে সভা করার অনুমতি চাইলে তা তিনি যে তা দেবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রশ্নটা হল এই ধরনের সভা কি সত্যিই সমর্থনযোগ্য।"

আরও পড়ুন:

  1. নির্বাচনী বিধিভঙ্গ, ব্রাত্যকে সরানোর সুপারিশ রাজ্যপালের
  2. উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সংঘাত চলছেই, ফের রাজ্যের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে রাজ্যপাল

কলকাতা, 4 এপ্রিল: শিক্ষা দফতরকে সামনে রেখে বিশেষ করে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে সরকার এবং রাজভবনের সংঘাত সাম্প্রতিক অতীতে কোনও নতুন বিষয় নয়। কিন্তু নির্বাচন চলাকালীন রাজ্যপালের মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের সুপারিশ অবশ্যই নজিরবিহীন। খুব স্বাভাবিকভাবেই বৃহস্পতিবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী ময়দানে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

প্রশ্ন হল, বাস্তবে রাজ্যপাল এভাবে শিক্ষা মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করতে পারেন কি না। করলেও তা কতটা যুক্তিযুক্ত। এর উত্তর অবশ্য দিয়েছেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী। রাজভবন থেকে শিক্ষা মন্ত্রীর অপসারণের সুপারিশের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই নিয়ে মুখ খোলেন শিক্ষামন্ত্রী। সরাসরি তিনি রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন। সেখানে তিনি লেখেন, "আমি দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে যদি রাজ্যপালকে সরানোর সুপারিশ করতাম, তা হলে সেটা যেমন হাস্যকর হত, এটাও ঠিক তেমনই হাস্যকর।"

ব্রাত্য বসুর স্পষ্ট যুক্তি, তিনি যদি কোনও নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করে থাকেন, তাহলে তা নির্বাচন কমিশনের নজরে আনার অধিকার রয়েছে যে কোনও রাজনৈতিক দলের। কিন্তু রাজ্যপাল তা করছেন কেন? শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাখ্যা, এমনটি করে রাজ্যপাল শুধু নিজের পদের অপব্যবহার করছেন তাই নয় তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ও প্রকাশ্যে এনে ফেলছেন।

এক্ষেত্রে ব্রাত্যর বক্তব্য, "ভারতের সংবিধান অনুযায়ী কোনও রাজ্যের মন্ত্রীর অপসারণ বা নিয়োগের সুপারিশ করতে পারেন একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল শুধু নিজের আসল রংই দেখালেন না, নিজের সাংবিধানিক সীমাও লঙ্ঘন করলেন।"

অন্যদিকে ব্রাত্যর দাবি নস্যাৎ করে দিচ্ছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তিনি ইটিভি ভারতকে জানান, সংবিধান রাজ্যপালকে বেশ কিছু ক্ষমতা দিয়েছে। সেই সূত্রে তিনি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে যে কোনও বিষয়ে জবাব তলব করতে পারেন। প্রয়োজনে নথিও চাইতে পারেন। একইভাবে তিনি চাইলে কোনও মন্ত্রীর অপসারণের সুপারিশও করতে পারেন। কিন্তু সেই সুপারিশ বাস্তবায়িত করা না-করা সবটাই মুখ্যমন্ত্রীর উপর নির্ভর করে। ব্রাত্যকে খোঁচা দিয়ে তথাগত বলেন, "শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ব্রাত্যবাবুর সংবিধান সম্পর্কে আরও অবগত থাকা উচিত।সংবিধান ভালো করে পড়ুন। কার কী ক্ষমতা আছে সে বিষয়ে অবগত হন।"

প্রাক্তন রাজ্যপাল যখন এভাবে শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা করছেন, ঠিক তখন শিক্ষাক্ষেত্রে উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ বঙ্গের ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা অতীতে ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না। একইসঙ্গে তিনি মনে করছেন রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ শিক্ষাক্ষেত্রে একটা অচলাবস্থার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

এদিন ইটিভি ভারতকে তিনি বলেন, "একজন শিক্ষামন্ত্রী এই মুহূর্তে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তাঁকে অপসারণের সুপারিশ করছেন রাজ্যপাল। অথচ কয়েকদিন আগে পর্যন্ত জেলে থাকা একজন মন্ত্রীর অপসারণের সুপারিশ তিনি করেননি। প্রশ্নটা এখানেই, রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশ মতো মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান। সরকার চলে তাঁর নামে। এক্ষেত্রে একটা সংগত প্রশ্ন অবশ্যই থাকে যিনি সংবিধান অনুযায়ী নিয়োগ দেন তিনি কি তার অপসারণের সুপারিশ করতে পারেন না! যদিও এই আইন সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই।"

এদিন শিক্ষামন্ত্রীরও সমালোচনা করেছেন এই প্রবীণ শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, "আমি যতদূর শুনেছি ওয়েবকুপার যে সভাটি নিয়ে এই যাবতীয় ঘটনা সেটি উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে সংঘটিত করা হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যের কাছে সভা করার অনুমতি চাইলে তা তিনি যে তা দেবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রশ্নটা হল এই ধরনের সভা কি সত্যিই সমর্থনযোগ্য।"

আরও পড়ুন:

  1. নির্বাচনী বিধিভঙ্গ, ব্রাত্যকে সরানোর সুপারিশ রাজ্যপালের
  2. উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সংঘাত চলছেই, ফের রাজ্যের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে রাজ্যপাল
Last Updated : Apr 5, 2024, 7:49 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.