ETV Bharat / state

তিলোত্তমায় রথযাত্রায় বহমান বনেদিয়ানা, কোথাও হয় হরির লুঠ-কোথাও রথ তৈরির ভার পুরীর কারিগরের - RATHA YATRA 2024

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 5, 2024, 6:43 PM IST

Updated : Jul 5, 2024, 7:13 PM IST

KOLKATA RATHA YATRA HISTORY : জানবাজারের রানি রাসমনি বা কলকাতার সাবর্ণ চৌধুরীর বাড়ি- কলকাতার বুকে আজও ধুমধাম করে ঐতিহ্যের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে রথযাত্রা উৎসব ৷ তারই সুলুক সন্ধান দিল ইটিভি ভারত ৷

RATH YATRA HISTORY IN KOLKATA
রথযাত্রা উৎসব 2024 (ইটিভি ভারত)

কলকাতা, 5 জুলাই: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তার অন্যতম রথযাত্রা। পুরীতে রথযাত্রার আড়ম্বর চোখে পড়লেও বঙ্গের রথও বহু প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী। শ্রীরামপুরের 'মাহেশ' ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথযাত্রা। এমনকী, কলকাতার বহু বনেদি বাড়ির রথও অনেকটাই পুরনো। শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে জানবাজার, কলকাতার রথযাত্রার সুলুক সন্ধান দিলেন আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক শুভদীপ রায় চৌধুরী।

রানি রাসমণির বাড়ির রথযাত্রা

রানি রাসমণির বাড়ির পুরনো রথটি ছিল রুপোর তৈরি। 186 বছর আগে সেটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল 1 লক্ষ 22 হাজার 115 টাকা। রথের সঙ্গে ছিল দু’টি ঘোড়া, একটি সারথি এবং চারটি পরী। সেগুলিও ছিল রুপোর। এই বাড়ির রথযাত্রা শুরু হয় 1838 সালে। জানা গিয়েছে, রথযাত্রা উপলক্ষে সেই সময় জুঁই ফুলের মালা কেনা হত কম করে আড়াই থেকে তিন মণ ওজনের। আগে জানবাজারে রাসমণির বাড়িতে হলেও এখন এই রথযাত্রা হয় দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে। রাসমণির গৃহদেবতা রঘুনাথ জিউকে কেন্দ্র করেই এই রথযাত্রা পালিত হয়।

RATH YATRA 2024
রথযাত্রা উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি (ইটিভি ভারত)


বড়িশার সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের রথযাত্রা

বড়িশার সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের রথও বহু প্রাচীন। 1719 সালে বড়িশায় রায় চৌধুরী পরিবারের রথযাত্রা শুরু করেন রায় কৃষ্ণদেব মজুমদার চৌধুরী। সেই সময় 9 চূড়াবিশিষ্ট রথে শালগ্রামশিলা নিয়ে যাওয়ার চল ছিল। পরে 1911 সালে বড়বাড়িতে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্রহ এবং একটি ত্রিতল রথ প্রতিষ্ঠা করা হয়। 1934 থেকে চতুর্ধা বিগ্রহগুলিকে হীরালাল বসুর বাড়িতে (মাসির বাড়ি) নিয়ে যাওয়া হয়। 1984 সালে সর্বজনীন সহযোগিতায় পুরী থেকে কারিগর এনে নতুন রথ নির্মাণ করা হয়।

শোভাবাজার রাজবাড়ির রথযাত্রা

শোভাবাজার রাজবাড়িতে আবার রথের দিনই দুর্গা প্রতিমার কাঠামো পুজো হয়। পাশাপাশি শালগ্রাম শিলাকে রথে অধিষ্ঠান করিয়ে ঠাকুরদালানেই সেই রথ টানা হয়। প্রাচীন রীতি মেনে আজও দুর্গার মূল কাঠামোকে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়। আর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনার পাশাপাশি পুজো হয় জগন্নাথদেবেরও।

RATH YATRA 2024
ব্যস্ত কারিগররা (ইটিভি ভারত)

বউবাজারের গোবিন্দ সেন লেনের রথযাত্রা

বউবাজার অঞ্চলে গোবিন্দ সেন লেনে জগন্নাথ বিগ্রহ ও রথ প্রতিষ্ঠা করেন চুনিমণি দাসী। পাঁচ চূড়াবিশিষ্ট ত্রিতল এই রথে এখনও সাবেকী শিল্পের ছোঁয়া দেখা যায়। রথের চার দিকে আছে চারটি পুতুল এবং রথের গায়ে আঁকা আছে দেব-দেবীর ছবি। কথিত আছে, এক বার পুরীর নব কলেবরের সময় অবশিষ্ট এক খণ্ড নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছিল ভগবান জগন্নাথ। আর এই বিগ্রহের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত আছেন শালগ্রাম শিলা। পরিবার সূত্রে খবর, স্নানযাত্রার পরে হয় বিগ্রহের অঙ্গরাগ। আগে রথের দিন এবং উল্টোরথের দিন পথে জগন্নাথ বেরোতেন। এখন আর রথ রাস্তায় বেরোয় না। তাই বাড়ির উঠোনেই রথ টানা হয়।

RATH YATRA 2024
রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রাস্তায় মানুষের ঢল (ইটিভি ভারত)
দর্জিপাড়ায় রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়ির রথযাত্রাদর্জিপাড়ায় রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে রাজরাজেশ্বরের রথযাত্রা। বলাবাহুল্য, তিনিই এই বাড়ির কূলদেবতা। রীতি অনুযায়ী, রথের দিন সকালে চামর দিয়ে বাতাস করতে করতে তিন বার রথকে ঘোরানো হয়। পুজোয় করবী ফুল দিয়ে হোম করা হয়। রথ উপলক্ষে দেওয়া হয় হরির লুঠ। রথের আর এক ঐতিহ্য ইলিশ বরণ। নোড়ার উপর জোড়া ইলিশ রেখে ছোট মাছটির মাথায় সিঁদুর দেওয়া হয়। পরে ধান-দূর্বা দিয়ে মাছ দু’টিকে বরণ করা হয়, এও এক প্রাচীন রীতি।

কলকাতা, 5 জুলাই: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তার অন্যতম রথযাত্রা। পুরীতে রথযাত্রার আড়ম্বর চোখে পড়লেও বঙ্গের রথও বহু প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী। শ্রীরামপুরের 'মাহেশ' ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথযাত্রা। এমনকী, কলকাতার বহু বনেদি বাড়ির রথও অনেকটাই পুরনো। শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে জানবাজার, কলকাতার রথযাত্রার সুলুক সন্ধান দিলেন আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক শুভদীপ রায় চৌধুরী।

রানি রাসমণির বাড়ির রথযাত্রা

রানি রাসমণির বাড়ির পুরনো রথটি ছিল রুপোর তৈরি। 186 বছর আগে সেটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল 1 লক্ষ 22 হাজার 115 টাকা। রথের সঙ্গে ছিল দু’টি ঘোড়া, একটি সারথি এবং চারটি পরী। সেগুলিও ছিল রুপোর। এই বাড়ির রথযাত্রা শুরু হয় 1838 সালে। জানা গিয়েছে, রথযাত্রা উপলক্ষে সেই সময় জুঁই ফুলের মালা কেনা হত কম করে আড়াই থেকে তিন মণ ওজনের। আগে জানবাজারে রাসমণির বাড়িতে হলেও এখন এই রথযাত্রা হয় দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে। রাসমণির গৃহদেবতা রঘুনাথ জিউকে কেন্দ্র করেই এই রথযাত্রা পালিত হয়।

RATH YATRA 2024
রথযাত্রা উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি (ইটিভি ভারত)


বড়িশার সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের রথযাত্রা

বড়িশার সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের রথও বহু প্রাচীন। 1719 সালে বড়িশায় রায় চৌধুরী পরিবারের রথযাত্রা শুরু করেন রায় কৃষ্ণদেব মজুমদার চৌধুরী। সেই সময় 9 চূড়াবিশিষ্ট রথে শালগ্রামশিলা নিয়ে যাওয়ার চল ছিল। পরে 1911 সালে বড়বাড়িতে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্রহ এবং একটি ত্রিতল রথ প্রতিষ্ঠা করা হয়। 1934 থেকে চতুর্ধা বিগ্রহগুলিকে হীরালাল বসুর বাড়িতে (মাসির বাড়ি) নিয়ে যাওয়া হয়। 1984 সালে সর্বজনীন সহযোগিতায় পুরী থেকে কারিগর এনে নতুন রথ নির্মাণ করা হয়।

শোভাবাজার রাজবাড়ির রথযাত্রা

শোভাবাজার রাজবাড়িতে আবার রথের দিনই দুর্গা প্রতিমার কাঠামো পুজো হয়। পাশাপাশি শালগ্রাম শিলাকে রথে অধিষ্ঠান করিয়ে ঠাকুরদালানেই সেই রথ টানা হয়। প্রাচীন রীতি মেনে আজও দুর্গার মূল কাঠামোকে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়। আর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনার পাশাপাশি পুজো হয় জগন্নাথদেবেরও।

RATH YATRA 2024
ব্যস্ত কারিগররা (ইটিভি ভারত)

বউবাজারের গোবিন্দ সেন লেনের রথযাত্রা

বউবাজার অঞ্চলে গোবিন্দ সেন লেনে জগন্নাথ বিগ্রহ ও রথ প্রতিষ্ঠা করেন চুনিমণি দাসী। পাঁচ চূড়াবিশিষ্ট ত্রিতল এই রথে এখনও সাবেকী শিল্পের ছোঁয়া দেখা যায়। রথের চার দিকে আছে চারটি পুতুল এবং রথের গায়ে আঁকা আছে দেব-দেবীর ছবি। কথিত আছে, এক বার পুরীর নব কলেবরের সময় অবশিষ্ট এক খণ্ড নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছিল ভগবান জগন্নাথ। আর এই বিগ্রহের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত আছেন শালগ্রাম শিলা। পরিবার সূত্রে খবর, স্নানযাত্রার পরে হয় বিগ্রহের অঙ্গরাগ। আগে রথের দিন এবং উল্টোরথের দিন পথে জগন্নাথ বেরোতেন। এখন আর রথ রাস্তায় বেরোয় না। তাই বাড়ির উঠোনেই রথ টানা হয়।

RATH YATRA 2024
রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রাস্তায় মানুষের ঢল (ইটিভি ভারত)
দর্জিপাড়ায় রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়ির রথযাত্রাদর্জিপাড়ায় রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে রাজরাজেশ্বরের রথযাত্রা। বলাবাহুল্য, তিনিই এই বাড়ির কূলদেবতা। রীতি অনুযায়ী, রথের দিন সকালে চামর দিয়ে বাতাস করতে করতে তিন বার রথকে ঘোরানো হয়। পুজোয় করবী ফুল দিয়ে হোম করা হয়। রথ উপলক্ষে দেওয়া হয় হরির লুঠ। রথের আর এক ঐতিহ্য ইলিশ বরণ। নোড়ার উপর জোড়া ইলিশ রেখে ছোট মাছটির মাথায় সিঁদুর দেওয়া হয়। পরে ধান-দূর্বা দিয়ে মাছ দু’টিকে বরণ করা হয়, এও এক প্রাচীন রীতি।
Last Updated : Jul 5, 2024, 7:13 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.