ETV Bharat / state

ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণায় আমেরিকা কাঁপাচ্ছে রানিগঞ্জের সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলের প্রাক্তনী - ব্ল্যাকহোল

Black hole research: ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণায় আমেরিকায় একের পর এক সাফল্য পাচ্ছেন বাংলার বিজ্ঞানী তন্ময় চট্টোপাধ্যায় ৷ রানিগঞ্জের সরকারি স্কুলের বাংলা মাধ্যম স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 8, 2024, 1:30 PM IST

Updated : Feb 8, 2024, 8:15 PM IST

ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণায় আমেরিকা কাঁপাচ্ছে রানিগঞ্জের সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলের প্রাক্তনী

আসানসোল, 8 ফেব্রুয়ারি: রানিগঞ্জের সরকারি স্কুলে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা গ্রামের ছেলে আজ ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণায় বিশ্বের নজর কেড়েছে । কৃষ্ণ গহ্বরের রশ্মি নিয়ে গবেষণায় যেখানে সারা বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীরা গত 30-40 বছরে তেমন সফলতা পাননি, সেখানে একদা রানিগঞ্জের বাসিন্দা বাঙালি যুবক তন্ময় চট্টোপাধ্যায় দুরন্ত গতিতে ব্ল্যাকহোলের রহস্য উদঘাটনে এগিয়ে চলেছেন । ব্ল্যাকহোলের এক্স-রে, গামা-রে'র পোলারাইজেশনে এসেছে সাফল্য । জানা যাচ্ছে, ব্ল্যাকহোলের অনেক কিছুই ।

তন্ময় চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়াস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স এবং অ্যাস্ট্রো ফিজিক্সের বিজ্ঞানী । এই দুনিয়া কাঁপানো বিজ্ঞানীর পড়াশোনা শুরু হয়েছিল রানিগঞ্জের বাংলা মাধ্যম স্কুলে । ছোটবেলায় বাঁকুড়ার মেজিয়ার কাছে অর্ধগ্রাম এলাকার কালিকাপুরের বাসিন্দা ছিলেন তন্ময় ।

তাঁর মা বনানী চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে আসানসোলের চেলিডাঙা এলাকায় থাকেন । তিনি জানান, তাঁর স্বামী প্রয়াত গোবর্ধন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আসানসোল আদালতের আইনজীবী । ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য রানিগঞ্জ শহরে ভাড়া বাড়িতে চলে এসেছিলেন তাঁরা । সেখানেই বড় হয়ে ওঠা তন্ময়ের । রানিগঞ্জ বয়েজ হাইস্কুল থেকে 2005 সালে মাধ্যমিক পাশ করেন তন্ময় । 2008 সালে রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজ থেকে ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে গ্র‍্যাজুয়েশন করেন তিনি । এরপর বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে হাই এনার্জি ফিজিক্স নিয়ে স্নাতকোত্তর । পিএইচডি করতে 2010 সাল থেকে 2016 সাল পর্যন্ত ইসরোর রিসার্চ লাইব্রেরিতে ছিলেন তিনি । 2015 সাল থেকেই মহাকাশে পাঠানো ইসরোর অ্যাস্ট্রোস্যাট নিয়ে নানা কাজকর্মে যুক্ত হন । 2016 সালে পাড়ি দেন আমেরিকা । বর্তমানে স্ত্রী সুরভী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় আছেন ।

কৃষ্ণ গহ্বর নিয়ে তাঁর গবেষণার কথা বলতে গিয়ে তন্ময় জানালেন, "আমাদের গ্রুপ নাসার ফিউচার অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল স্পেস টেলিস্কোপে ইন্সট্রুমেন্টাল ডেভলপের কাজ করে । ভারতের ইসরোতে একমাত্র স্পেস টেলিস্কোপ 'অ্যাস্ট্রোস্যাট'-এর সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আছি । অ্যাস্ট্রোস্যাটের একটি যন্ত্র ক্যাডমিয়াম জিঙ্ক টেলিরাইড ইমেজারের মাধ্যমে আমরা পোলারাইজেশন মেপেছি 'সিগনাস এক্স ওয়ান' নামক একটি ব্ল্যাকহোলের । এই পোলারাইজেশন মাপার জন্য যে টেকনিকের দরকার, সেই টেকনিকগুলো আমি ডেভলপ করেছি আমার পিএইচডি'র সময় থেকে । এখনও সেই কাজ চলছে ।"

এই গবেষক আরও জানান, "2015 সালে অ্যাস্ট্রোস্যাট আসার পরে আমরা সিগনাস এক্স ওয়ান ব্ল্যাকহোল থেকে এক্স রে ও গামা রে ডাটা সংগ্রহ করি । সেই ডাটা থেকে নানা টেকনিকের মাধ্যমে আমরা সম্প্রতি পোলারাইজেশন মাপতে পেরেছি ।"

এই কাজের গুরুত্ব কী ?

এ বিষয়ে জানাতে গিয়ে তন্ময় চট্টোপাধ্যায় জানান, "পোলারাইজেশন হল একটি লাইটের প্যারামিটার । এক্স রে লাইটের পোলারাইজেশন মাপা খুবই কঠিন । গত 30-40 বছরে সেই কারণে এক্স-রে বা গামা-রে'তে পোলারাইজেশন মাপা হয়নি । কিন্তু এটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, এই পোলারাইজেশনের সাহায্যে ব্ল্যাকহোলের আশপাশে কী রয়েছে, জেট কীভাবে তৈরি হয়, সেখানে কী ঘটছে তা নিয়ে একটা ভালো আইডিয়া পাওয়া যায় ।"

সাফল্য বর্ণনা করতে গিয়ে তন্ময় জানান, "আমরা যেটা জানতে পেরেছি ব্ল্যাকহোল থেকে যে এক্স-রে, গামা-রে রেডিয়েশন সৃষ্টি হয় এবং ব্ল্যাকহোলে যে জেট আছে তাদের মধ্যে খুব সংযোগ রয়েছে । আমরা যা তথ্য পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে অ্যাস্ট্রোস্যাট থেকে আমরা আরও যা ডেটা পাব, তাতে ব্ল্যাকহোল নিয়ে একটা পরিস্কার চিত্র পাওয়া যাবে । পাশাপাশি জেট থিয়োরি অনেক উন্নতি হবে ।''

আসানসোলে চেলিডাঙার ফ্ল্যাটে মা বনানী চট্টোপাধ্যায়ও ছেলের কথা বলতে গিয়ে বারবার আবেগে ভেসেছেন । জানালেন, বছরে একাধিকবার ছেলে দেশে আসেন । খুব আনন্দ হয় তখন । তবে এত আনন্দের মাঝে একটা আপসোস থেকেই গেল বনানী দেবীর । বারবার আক্ষেপ করে শোনালেন সেই কথা, "ছেলের এই সাফল্য তন্ময়ের বাবা দেখে যেতে পারলেন না ৷"

আরও পড়ুন:

  1. আলিমুদ্দিনেও ঠাঁই মেলেনি, নিজের শিল্পঘরেই প্রয়াণ দিবসে জ্যোতিবাবুর প্রিয় মূর্তিতে মালা পরান স্রষ্টা
  2. চন্দ্রযানের সাফল্যে নাম উঠেছে রানিগঞ্জের যুবকের, খুশির হাওয়া পরিবারে
  3. চন্দ্রযান 3 মিশনের নেভিগেশন ক্যামেরা টিমে উত্তরপাড়ার জয়ন্ত, গর্বিত পরিবার

ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণায় আমেরিকা কাঁপাচ্ছে রানিগঞ্জের সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলের প্রাক্তনী

আসানসোল, 8 ফেব্রুয়ারি: রানিগঞ্জের সরকারি স্কুলে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা গ্রামের ছেলে আজ ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণায় বিশ্বের নজর কেড়েছে । কৃষ্ণ গহ্বরের রশ্মি নিয়ে গবেষণায় যেখানে সারা বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীরা গত 30-40 বছরে তেমন সফলতা পাননি, সেখানে একদা রানিগঞ্জের বাসিন্দা বাঙালি যুবক তন্ময় চট্টোপাধ্যায় দুরন্ত গতিতে ব্ল্যাকহোলের রহস্য উদঘাটনে এগিয়ে চলেছেন । ব্ল্যাকহোলের এক্স-রে, গামা-রে'র পোলারাইজেশনে এসেছে সাফল্য । জানা যাচ্ছে, ব্ল্যাকহোলের অনেক কিছুই ।

তন্ময় চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়াস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স এবং অ্যাস্ট্রো ফিজিক্সের বিজ্ঞানী । এই দুনিয়া কাঁপানো বিজ্ঞানীর পড়াশোনা শুরু হয়েছিল রানিগঞ্জের বাংলা মাধ্যম স্কুলে । ছোটবেলায় বাঁকুড়ার মেজিয়ার কাছে অর্ধগ্রাম এলাকার কালিকাপুরের বাসিন্দা ছিলেন তন্ময় ।

তাঁর মা বনানী চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে আসানসোলের চেলিডাঙা এলাকায় থাকেন । তিনি জানান, তাঁর স্বামী প্রয়াত গোবর্ধন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আসানসোল আদালতের আইনজীবী । ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য রানিগঞ্জ শহরে ভাড়া বাড়িতে চলে এসেছিলেন তাঁরা । সেখানেই বড় হয়ে ওঠা তন্ময়ের । রানিগঞ্জ বয়েজ হাইস্কুল থেকে 2005 সালে মাধ্যমিক পাশ করেন তন্ময় । 2008 সালে রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজ থেকে ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে গ্র‍্যাজুয়েশন করেন তিনি । এরপর বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে হাই এনার্জি ফিজিক্স নিয়ে স্নাতকোত্তর । পিএইচডি করতে 2010 সাল থেকে 2016 সাল পর্যন্ত ইসরোর রিসার্চ লাইব্রেরিতে ছিলেন তিনি । 2015 সাল থেকেই মহাকাশে পাঠানো ইসরোর অ্যাস্ট্রোস্যাট নিয়ে নানা কাজকর্মে যুক্ত হন । 2016 সালে পাড়ি দেন আমেরিকা । বর্তমানে স্ত্রী সুরভী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় আছেন ।

কৃষ্ণ গহ্বর নিয়ে তাঁর গবেষণার কথা বলতে গিয়ে তন্ময় জানালেন, "আমাদের গ্রুপ নাসার ফিউচার অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল স্পেস টেলিস্কোপে ইন্সট্রুমেন্টাল ডেভলপের কাজ করে । ভারতের ইসরোতে একমাত্র স্পেস টেলিস্কোপ 'অ্যাস্ট্রোস্যাট'-এর সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আছি । অ্যাস্ট্রোস্যাটের একটি যন্ত্র ক্যাডমিয়াম জিঙ্ক টেলিরাইড ইমেজারের মাধ্যমে আমরা পোলারাইজেশন মেপেছি 'সিগনাস এক্স ওয়ান' নামক একটি ব্ল্যাকহোলের । এই পোলারাইজেশন মাপার জন্য যে টেকনিকের দরকার, সেই টেকনিকগুলো আমি ডেভলপ করেছি আমার পিএইচডি'র সময় থেকে । এখনও সেই কাজ চলছে ।"

এই গবেষক আরও জানান, "2015 সালে অ্যাস্ট্রোস্যাট আসার পরে আমরা সিগনাস এক্স ওয়ান ব্ল্যাকহোল থেকে এক্স রে ও গামা রে ডাটা সংগ্রহ করি । সেই ডাটা থেকে নানা টেকনিকের মাধ্যমে আমরা সম্প্রতি পোলারাইজেশন মাপতে পেরেছি ।"

এই কাজের গুরুত্ব কী ?

এ বিষয়ে জানাতে গিয়ে তন্ময় চট্টোপাধ্যায় জানান, "পোলারাইজেশন হল একটি লাইটের প্যারামিটার । এক্স রে লাইটের পোলারাইজেশন মাপা খুবই কঠিন । গত 30-40 বছরে সেই কারণে এক্স-রে বা গামা-রে'তে পোলারাইজেশন মাপা হয়নি । কিন্তু এটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, এই পোলারাইজেশনের সাহায্যে ব্ল্যাকহোলের আশপাশে কী রয়েছে, জেট কীভাবে তৈরি হয়, সেখানে কী ঘটছে তা নিয়ে একটা ভালো আইডিয়া পাওয়া যায় ।"

সাফল্য বর্ণনা করতে গিয়ে তন্ময় জানান, "আমরা যেটা জানতে পেরেছি ব্ল্যাকহোল থেকে যে এক্স-রে, গামা-রে রেডিয়েশন সৃষ্টি হয় এবং ব্ল্যাকহোলে যে জেট আছে তাদের মধ্যে খুব সংযোগ রয়েছে । আমরা যা তথ্য পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে অ্যাস্ট্রোস্যাট থেকে আমরা আরও যা ডেটা পাব, তাতে ব্ল্যাকহোল নিয়ে একটা পরিস্কার চিত্র পাওয়া যাবে । পাশাপাশি জেট থিয়োরি অনেক উন্নতি হবে ।''

আসানসোলে চেলিডাঙার ফ্ল্যাটে মা বনানী চট্টোপাধ্যায়ও ছেলের কথা বলতে গিয়ে বারবার আবেগে ভেসেছেন । জানালেন, বছরে একাধিকবার ছেলে দেশে আসেন । খুব আনন্দ হয় তখন । তবে এত আনন্দের মাঝে একটা আপসোস থেকেই গেল বনানী দেবীর । বারবার আক্ষেপ করে শোনালেন সেই কথা, "ছেলের এই সাফল্য তন্ময়ের বাবা দেখে যেতে পারলেন না ৷"

আরও পড়ুন:

  1. আলিমুদ্দিনেও ঠাঁই মেলেনি, নিজের শিল্পঘরেই প্রয়াণ দিবসে জ্যোতিবাবুর প্রিয় মূর্তিতে মালা পরান স্রষ্টা
  2. চন্দ্রযানের সাফল্যে নাম উঠেছে রানিগঞ্জের যুবকের, খুশির হাওয়া পরিবারে
  3. চন্দ্রযান 3 মিশনের নেভিগেশন ক্যামেরা টিমে উত্তরপাড়ার জয়ন্ত, গর্বিত পরিবার
Last Updated : Feb 8, 2024, 8:15 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.