আলিপুরদুয়ার, 1 অগস্ট: পর্যটকের অভাবে সংকটে ভিস্তাডোম । ট্যুরিস্ট স্পেশাল ট্রেনটির বিকল্প রুটের ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রেল । এবার তবে কোন রুটে চলবে এই ভিস্তাডোম ?
পর্যটক স্পেশাল ভিস্তাডোমে মিলছে না যাত্রী । লোকসানের বোঝা টানতে হচ্ছে রেলকে । এমন অবস্থায় পর্যটক স্পেশাল ভিস্তাডোম ট্রেনের রুট বদলের চিন্তাভাবনা করছে রেল দফতর । ভাবা হচ্ছে, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ভিস্তাডোম সেবক, মালবাজার হয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে লাটাগুড়ি আসবে । এরপর সেখান থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত যাবে ।
2021 সালের 28 অগস্ট থেকে প্রথম যাত্রা শুরু করে আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশনের প্রথম ট্যুরিস্ট স্পেশাল ভিস্তাডোম । নিউ জলপাইগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার জাংশন পর্যন্ত প্রথমে সপ্তাহে তিন দিন এই ট্রেন চলত । পরে ওই বছরই 22 নভেম্বর থেকে এই ট্রেন সপ্তাহে সাত দিনই চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেল ।
মহানন্দা, চাপড়ামারি, বক্সা, জলদাপাড়া বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে চলা এই পর্যটক স্পেশাল ভিস্তাডোম ট্রেন প্রথম প্রথম ভিড়ে ঠাসা থাকত । চা-বাগান ও বনাঞ্চলের বুক চিড়ে চলত এই ট্রেন ৷ আর ট্রেনের দুই দিকের সাদা কাচের ভেতর থেকে বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার অনাবিল আনন্দ উপভোগ করতেন পর্যটকরা । কিন্তু এখন আর সেভাবে যাত্রী উঠছে না এই ট্রেনে । আর সেই কারণে ভিস্তাডোমের রুট বদলের চিন্তাভাবনা করছে রেল ।
লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব জানান, ডুয়ার্সের পর্যটন কেন্দ্র গরুমারা, লাটাগুড়ি হয়ে হেরিটেজ টাউন কোচবিহার পর্যন্ত ভিস্তাডোম চালানোর দাবি দীর্ঘদিনের । ডুয়ার্স রুটে যদি পর্যটক না-হয়, তাহলে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে মালবাজার, চালসা, লাটাগুড়ি হয়ে নিউ কোচবিহার পর্যন্ত ভিস্তাডোম চালালে এই এলাকার পর্যটকরা যেমন কোচবিহার ঘুরে দেখতে পারবেন, তেমনই আবার লাটাগুড়িতেও চলে আসতে পারবেন । তাতে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়বে ।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার অমরজিৎ গৌতম বলেন, “ভিস্তাডোমে আমরা বর্তমানে সেভাবে যাত্রী পাচ্ছি না । রেল যেমন পরিষেবার বিষয়টি দেখে, তেমনই রেল কমার্শিয়ালের বিষয়টাও দেখে । যদি কোনও ট্রেনে যাত্রী না-হয়, তাহলে বিকল্প রুটে ট্রেনটি চালানো হবে । আমরা চাইছি, যে রুটে যাত্রী বেশি হবে সেই রুটে ট্রেনটি চালাব । যে কারণে এই ট্রেনটিকে কোন রুটে চালানো যায় সেটা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে । তবে পর্যটনস্থল লাটাগুড়ি রুটটি প্রথম পছন্দের মধ্যে রয়েছে । এখনও সিদ্ধান্ত কিছু হয়নি । ট্রেনের সময়সূচি নিয়েও আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে ।"
এদিকে, রেলের অবাস্তব সময়সূচির কারণেই এই ট্রেনে যাত্রী উঠছে না বলে অভিযোগ পর্যটন ব্যবসায়ীদের । পর্যটন ব্যবসায়ীদের আরও অভিযোগ, ডুয়ার্স রুট বাদ দিয়ে এই ট্রেন চালালে আরও কম যাত্রী হবে ।
আলিপুরদুয়ার জেলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মানব বক্সি বলেন, "এই ট্রেন সকাল সাতটায় এনজেপি থেকে ছাড়ে । কলকাতা থেকে ট্রেনে আসা কোনও পর্যটকই ওই দিন এই ট্রেন ধরতে পারেন না । এই ট্রেন ধরতে হলে বাইরের পর্যটকদের একদিন শিলিগুড়িতে থাকতে হয় । এই সময়সূচি চূড়ান্ত অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক । সেই কারণে এই ট্রেন যাত্রী পাচ্ছে না । এই ট্রেনটা যেদিন চালু হয়েছিল, তার দুদিন পরেই আমরা ডিআরএমকে ডেপুটেশন দিয়েছিলাম আলিপুরদুয়ার জেলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ৷ এই ট্রেনের সময়সূচি নিয়ে বলেছিলাম । যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই ট্রেনটি চালু হয়েছিল সেটি মহৎ উদ্দেশ্য ছিল । এই মুহূর্তে রুট পরিবর্তন না করাটাই ভালো । তাছাড়া রেল যদি ট্যুর অপারেটরদের ইনসেন্টিভ দিয়ে প্যাকেজের ব্যবস্থা করে তাহলেও পর্যটক বাড়তে পারে ।"
আলিপুরদুয়ার জেলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের কোঅর্ডিনেটর তমাল গোস্বামী জানান, "রুটটা শিলিগুড়ি থেকে শুরু হচ্ছে দেখে এই ট্রেনের টিকিটের হার কমে আসছে । পর্যটকরা এটার থেকে ইন্টারেস্ট হারাচ্ছে । এই ট্রেনটা যদি আমি উপভোগ করতে চাই তাহলে আমাকে সকালবেলা এই ট্রেনটিতে উঠতে হবে । অর্থাৎ সিকিম, দার্জিলিং, অথবা কলকাতা থেকে যখন আমি এনজেপিতে ঢুকছি, তখন তো আমি এই ট্রেনটি পাচ্ছি না ৷ সেক্ষেত্রে তো আমাকে নাইট স্টে করতে হচ্ছে, সেটা তো এক্সট্রা খরচ । এই ট্রেনটা এতগুলো অভয়ারণ্যের কোর এলাকার ভেতর দিয়ে যায়, আমরা যখন এমনি ইন্টারসিটি ট্রেনে যাতায়াত করি, তখন আমরা হরিণ, বাইসন, হাতি দেখতে পারি । ডুয়ার্সের অতীব সুন্দর বনাঞ্চল ও চাবাগান নিয়ে তৈরি নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্যই এই ট্রেন । কিন্তু এই অভয়ারণ্যগুলোকে অ্যাভয়েড করে ট্রেনটিকে যদি চ্যাংড়াবান্ধা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে এটা ডেস্টিনেশন কভার করা হচ্ছে না । আবার একটা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে ।"
ভিস্তাডোম নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে সকাল 7.20 মিনিটে ছেড়ে দুপুর একটায় পৌঁছয় আলিপুরদুয়ার জাংশন । ভাড়া 840 টাকা, চেয়ার কারের টিকিটের ভাড়া 310 টাকা । আলিপুরদুয়ার জাংশন থেকে দুপুর দুটোয় ছেড়ে নিউ জলপাইগুড়ি পৌছয় 7.10 মিনিটে । প্রথমে সপ্তাহে তিনদিন শুক্র, শনি ও রবিবার চলত এই ট্যুরিস্ট স্পেশাল ট্রেনটি । এখন প্রতিদিনই চলে ৷ আলিপুরদুয়ার, রাজাভাতখাওয়া, হাসিমারা, মাদারিহাট, চালসা, নিউ মাল, সেবক, শিলিগুড়ি জাংশন ও নিউ জলপাইগুড়িতে স্টপেজ দেওয়া হয় ভিস্তাডোমের । এই রুটই কি অপরিবর্তিত থাকবে ? নাকি অন্য কোনও আঁকাবাঁকা পথে পাড়ি জমাবে ভিস্তাডোম, তা সময়ই বলবে ৷