রায়গঞ্জ, 8 অগস্ট: 'কৃষ্ণা, রায়গঞ্জের লোকজন কি চা খাওয়া ছেড়ে দিলো নাকি !' বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর খবর শোনার পর এই কথাই শুধু বারবার মনে পড়ছে জেলার সিপিএম নেত্রী কৃষ্ণা সেনগুপ্তের।
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের চিনি ছাড়া লাল চা পান করতেই পছন্দ করতেন। সাংগঠনিক কাজে অথবা দলের জনসভায় এই জেলায় তিনি এলেই এই লাল চা বানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পড়তো তাঁর উপর। 'ব্র্যান্ড বুদ্ধ'-তে কার্যত মোহিত হয়েই তাঁকে অনুকরণ করে একই কায়দায় চা খাওয়া অভ্যাস করেছেন তিনি দীর্ঘদিন আগে থেকে। বৃহস্পতিবার সকালে সেই লাল চায়ের কাপ নিয়ে টিভি খুলেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর তা আর মুখে তোলা হয়নি সত্তরোর্ধ্ব অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-নেত্রীর।
এদিন দুপুরে রায়গঞ্জ শহরের কুমারডাংগি এলাকায় তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সকালের তৈরি লাল চায়ের কাপ টেবিলেই পড়ে আছে। কৃষ্ণা সেনগুপ্ত বলেন, "ছাত্রজীবন থেকেই আমি বাম রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ি। রায়গঞ্জ কলেজের ছাত্র সংসদের পদ সামলে পরবর্তীতে জেলার যুব ফেডারেশনের দায়িত্ব পাই। 1992 সালে জেলাভাগের পর পার্টির নির্দেশে মহিলা সংগঠনের দায়িত্ব নিতে হয়। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের পাশাপাশি সেই দায়িত্ব আজও চলছে।"
যুব সংগঠনের দায়িত্বে থাকার সময় থেকেই জেলায় সাংগঠনিক কাজে অথবা দলের জনসভায় জ্যোতি বসু ও পরবর্তীতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এলেই দলের পক্ষ থেকে খাওয়াদাওয়ার দেখভাল করার দায়িত্ব তাঁকেই দেওয়া হতো। সেই সূত্রেই এদের দু'জনকেই অনেক কাছ থেকে দেখেছেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, "জ্যোতি বসুর রাশভারি ইমেজের জন্য কিছুটা ভয়ই পেতাম। সেই জায়গায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন অনেক খোলামেলা। প্রথমবার ডেকে আমার নাম জেনেছিলেন। ব্যস, তারপর থেকে নাম ধরেই ডাকতেন। প্রথম দিনই জেনে নিয়েছিলাম কী ধরনের চা তিনি পছন্দ করেন। কড়া করে চিনি ছাড়া লাল চা তিনি পছন্দ করতেন। তা ঘনঘন খেতেন। সেইমতোই চা বানিয়ে রেডি থাকতাম। অসম্ভব মার্জিত, আপাত গম্ভীর হলেও খুব মজার কথা বলতেন। চা দিতে একটু দেরি হলেই বলতেন, 'কৃষ্ণা রায়গঞ্জের লোকজন কি চা খাওয়া ছেড়ে দিলো !'"
এদিন সকালে ওনার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকে ওই কথাই কানে বাজছে তাঁর। ওনাকে অনুকরণ করেই তিনি দীর্ঘদিন আগে থেকে তাঁর মতো চা খাওয়া অভ্যাস করেছেন। এদিনও সকালে চায়ের কাপ নিয়ে বসে টিভি খুলেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ শুনে সেই চা আর খেতে পারেননি কৃষ্ণা সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, "লাল চা খাওয়ার পরই সিগারেট খাওয়া বুদ্ধবাবুর অভ্যাস ছিল। একবার সাহস করে বলে ফেলেছিলাম, সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে। হাতের জ্বলন্ত সিগারেট দেখিয়ে মজা করে বলেছিলেন, 'এটা তো জ্বালিয়ে ফেলেছি। ফেলে দিলে অপচয় হবে।' অসুস্থতার জন্য দীর্ঘদিন জেলায় আসতে পারেননি। কিন্তু এখনো মনে হচ্ছে, ওই ডাক যদি আবার একবার শুনতে পেতাম।কড়া লাল চা নিয়ে সাথে সাথেই হাজির হয়ে যেতাম।"