আসানসোল, 21 মে: বেআইনি কয়লাপাচার-কাণ্ডে চার্জ গঠন করা গেল না ৷ মঙ্গলবার চূড়ান্ত চার্জ গঠনের কথা থাকলেও দুই অভিযুক্ত জয়দেব মণ্ডল এবং নারায়ণ খারকা গরহাজির থাকায় চার্জ গঠন করা যায়নি ৷ পাশাপাশি, কেন এই মামলার তদন্তে এত দেরি হচ্ছে ? সে বিষয়ে প্রশ্ন তুললেন সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ৷ অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এদিন আদালতে দাবি করেন, তাঁরা এখনও পর্যন্ত চার্জশিটের কপি পাননি ৷ চার্জশিটের কপি না-পেলে সেখানে কী লেখা আছে ? তা না-জানা গেলে চার্জ গঠনের ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হতে পারে বলেও মঙ্গলবার আদালতে জানান তাঁরা ৷ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী 3 জুলাই হবে ৷
মঙ্গলবার বেআইনি কয়লাপাচার-কাণ্ডের চার্জ গঠনের দিন ছিল ৷ এখনও যে দু’টি চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই, সেখানে মোট 43 জন অভিযুক্তের নাম ছিল ৷ সেই 43 জনের মধ্যে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাজি-সহ মোট 39 জন এদিন আদালতে হাজির হয়েছিলেন ৷ দুই অভিযুক্ত জয়দেব মণ্ডল এবং নারায়ণ খারকা উপস্থিত ছিলেন না ৷ বাকি দু’জন গুরুপদ মাজি এবং সিআইএসএফ জওয়ান মুকেশ কুমার তিহাড়ে জেলে বন্দি ৷ উল্লেখ্য, অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র এখনও পলাতক ৷ তিনি বিদেশে গা ঢাকা দিয়ে আছেন বলে খবর ৷
তবে, অভিযুক্ত জয়দেব মণ্ডল এবং নারায়ণ খারকার অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিচারক ৷ তাঁরা কোর্টে কেন অনুপস্থিত ? বিচারক তা তাঁদের আইনজীবীদের কাছে জানতে চান ৷ ওই দুই অভিযুক্তের আইনজীবীরা জানান, দু’জনেই অসুস্থ ৷ সেই কারণেই চার্জ গঠনের শুনানিতে উপস্থিত থাকতে পারেননি ৷ যা শুনে বেজায় ক্ষুব্ধ হন বিচারক ৷ তিনি উল্লেখ করেন, "এই দু’জনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল একটাই শর্তে ৷ যখনই আদালতে তলব করা হবে, তাঁদের উপস্থিত থাকতে হবে ৷ যে কোনও পরিস্থিতিতে তাঁরা আদালতের নির্দেশ পালনে বাধ্য ৷ এভাবে অসুস্থ রয়েছে বলে দু’টো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দিলে চলবে না ৷ এই দু’জনের জন্য বাকিরা উপস্থিত থাকলেও চার্জ গঠন করা যাচ্ছে না ৷ পরবর্তী শুনানির দিন অবশ্যই তাঁদের কোর্টে আসতে হবে ৷ অসুস্থ থাকলে প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে ৷"
তবে, কয়লাপাচার-কাণ্ডে সিবিআই-এর তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও এদিন ক্ষোভপ্রকাশ করেন সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ৷ সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক উমেশ কুমারের কাছে বিচারক জানতে চান, "এই তদন্ত প্রক্রিয়া আর কতদিন চলবে ? আর কি সিবিআই কোনও নতুন করে চার্জশিট জমা দেবে ?"
উমেশ কুমার জানিয়েছেন, আরও একটি চার্জশিট জমা করা হবে ৷ বিচারক পুনরায় প্রশ্ন করেন, তারপরেও কি কোনও চার্জশিট জমা করার সম্ভাবনা রয়েছে ? উত্তরে উমেশ কুমার জানান, দিতেও পারে ৷ পাশাপাশি, আরও নতুন নাম এফআইআরে জুড়তে পারে ৷ এরপরেই ক্ষুব্ধ হন বিচারক ৷ তিনি প্রশ্ন করেন, "প্রায় আড়াই বছর ধরে এই তদন্ত চলছে ৷ এতদিন পর্যন্ত এফআইআরে নাম কেন আসেনি ? কতদিন চলবে এই তদন্ত প্রক্রিয়া ? সত্তরোর্ধ্ব মানুষজন তিন মাসের উপর জেল খেটেছেন ৷ তাঁদের অধিকার রয়েছে বিচার পাওয়ার ৷ তদন্ত প্রক্রিয়া এত দীর্ঘায়িত কেন ?
অভিযুক্তদের আইনজীবীরাও আদালতে এদিন দাবি করেন, তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হোক ও শুনানি শুরু হোক ৷ অন্যদিকে, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, তাঁরা কেউই এখনও চার্জশিটের কপি হাতে পাননি ৷ যার প্রেক্ষিতে, বিচারক তাদের আদালত থেকে সফট কপি সংগ্রহ করতে বলেন ৷ কিন্তু, প্রায় পঁচিশ হাজার পাতার এই চার্জশিটের সফট কপি নেওয়ার ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা হতে পারে বলে আইনজীবীরা বিচারককে জানান ৷ যদিও শেষ পর্যন্ত কোর্ট থেকে সফট কপি দেওয়া হবে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে ৷
পরবর্তী শুনানির তারিখ 3 জুলাই ধার্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ৷ সেই তারিখে সমস্ত অভিযুক্তদের তিনি হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ যদি কেউ উপস্থিত না-থাকেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন সিবিআই আদালতের বিচারক ৷
আরও পড়ুন: