উস্থি ও মালদা, 28 সেপ্টেম্বর: কখনও রিমঝিম, কখনও আবার ঝমাঝম ৷ নিম্নচাপের জেরে টানা ধরে বৃষ্টি চলছে জেলায় জেলায় ৷ কখনও অল্প সময়ের জন্য, কখনও বা টানা 7-8 ঘণ্টা হচ্ছে বৃষ্টি ৷ এই বৃষ্টি কৃষকদের মুখে হাসি ফোটালেও মুখ ভার জেলার মৃৎশিল্পীদের ৷ হাতে আর বেশি সময় নেই ৷ তার আগেই প্রতিমা মণ্ডপে বা মন্দিরে পাঠাতে হবে ৷ বাধ্য হয়ে প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রতিমার গায়ের কাঁচা মাটি শুকোচ্ছেন শিল্পীরা ৷ জেলায় জেলায় সেই ছবিই ধরা পড়েছে স্টুডিয়োগুলিতে ৷
দক্ষিণ 24 পরগনার উস্থির মৃৎশিল্পী কর্ণ মাঝির কথায়, "বিগত 17 থেকে 18 বছর ধরে আমরা এই প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি । নিম্নচাপের কারণে যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে আমাদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে । যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে প্রতিমা তৈরি কঠিন হয়ে যাচ্ছে । ভালো রোদ উঠলে প্রতিমার মাটি ভালোভাবে শুকিয়ে যায় ।"
পাশাপাশি আরেক মৃৎশিল্পী মৌসুম পাল বলেন, "বৃষ্টির জন্য প্রবল সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে আমাদের । বেশ কিছু প্রতিমা এখনও শুকয়নি । সপ্তাহখানেক রোদের দেখা পেলে প্রতিমা আরও সুন্দর হত ৷ এখন বৃষ্টি পড়লেই প্রতিমাকে চাপা দিয়ে রাখতে হচ্ছে । প্রতিমা সম্পূর্ণ করতে আমাদের গ্যাসের মাধ্যমে হিট দিয়ে শুকোনোর কাজ করতে হবে যদি বৃষ্টি না কমে । এর ফলে খরচা ও কিছুটা বাড়বে । কাঁচামালের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে ৷ প্রতিমার দর তেমনভাবে বাড়েনি। কার্যত নিম্নচাপের জেরে সত্যিই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি আমরা। আমাদের এই স্টুডিয়োতে মোট 28টি প্রতিমা রয়েছে ৷ সঠিক সময় প্রতিমা সম্পন্ন করে পুজো মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা এখন দিনরাত এক করে কাজ করছি । হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন রয়েছে ৷ বৃষ্টি যদি না কমে তাহলে বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের প্রতিমা সম্পন্ন করতে হবে ৷"
মালদা শহরের প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী টুবাই হালদার বলছেন, "পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ নিম্নচাপের বৃষ্টি থামতেই চাইছে না ৷ একটানা বৃষ্টি চলছে ৷ যেসব প্রতিমার কাজ পরে শুরু করেছি, সেগুলির গায়ের মাটি শুকোচ্ছে না ৷ এখন ব্লো ল্যাম্প জ্বালিয়ে শুকোতে হচ্ছে ৷ খুব চাপে পড়ে গিয়েছি ৷ হাতে সময়ও আর বেশি নেই ৷ বৃষ্টি যদি সত্যিই আরও কয়েকদিন এভাবে চলে, তবে সব শেষ হয়ে যাবে ৷ প্রচণ্ড সমস্যায় পড়ে যাব ৷ আমার স্টুডিয়োয় বেশি জায়গা নেই ৷ তাই প্রতিমা বাইরে রাখতে হয় ৷ রাস্তার ধারে প্রতিমা রাখি ৷ বাইরে থাকা প্রতিমাগুলি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রেখেছি ৷ এবার মোট 13টি প্রতিমার অর্ডার নিয়েছি ৷ নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ করতে পারব কিনা জানি না ৷"
একই পরিস্থিতি পুরনো মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রশিলাদহ গ্রামের মণ্ডলপাড়ায় ৷ মৃৎশিল্পী সঞ্জয় মণ্ডল এবার 12টি প্রতিমার বরাত পেয়েছেন ৷ নিম্নচাপ চিন্তায় ফেলেছে তাঁকেও ৷ তাঁর কথায়, "12টা দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছি ৷ তার মধ্যে মহদিপুরে চারটা আর মানিকচকে একটা প্রতিমা যাবে ৷ বাকিগুলো মঙ্গলবাড়ি ও সাহাপুরের বিভিন্ন এলাকার ৷ সর্বোচ্চ দাম রেখেছি 35 হাজার টাকা ৷ একটি 25 হাজার আর বাকিগুলো 20 হাজার টাকার নীচে ৷ কিন্তু সমস্যায় ফেলে দিয়েছে এই আবহাওয়া ৷ প্রতিমার মাটি শুকোতেই পারছি না ৷ ছাউনির ভিতরে সব ঠাকুর রাখতে পারিনি ৷ বাইরে রাস্তার ধারে রাখতে হয়েছে ৷ বৃষ্টি থেমে রোদ না উঠলে ভয়ঙ্কর বিপদে পড়ে যাব ৷ তা না হলে গ্যাস দিয়ে মাটি শুকোতে হবে ৷ তাতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে ৷ এমনিতেই আমাদের মতো গ্রাম্য শিল্পীরা প্রতিমার দাম তেমন পান না ৷ তার উপর খরচ এভাবে বেড়ে গেলে হাতে কিছুই থাকবে না ৷"
জেলায় জেলায় মৃৎশিল্পীদের এমনই অবস্থা ৷ নিম্নচাপে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই ৷ নামি শিল্পীদের কথা অবশ্য আলাদা ৷ তাঁদের বড় স্টুডিয়ো রয়েছে ৷ অনেকের প্রতিমা ইতিমধ্যে মণ্ডপেও চলে গিয়েছে ৷ কিন্তু বাকিরা প্রত্যেকেই চাইছেন, বৃষ্টি এবার থামুক ৷ চড়া রোদ উঠুক ৷ নিশ্চিত হোক তাঁদের পেটের ভাত ৷