ETV Bharat / state

পুজোর মুখে অসুর বৃষ্টি, নিম্নচাপের জেরে প্রতিমা সাপ্লাই নিয়ে চিন্তায় মৃৎশিল্পীরা - Durga Puja 2024 - DURGA PUJA 2024

Clay Artists Problem Before Durga Puja: ক্রমাগত বৃষ্টি ৷ পুজোর আগে তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন রাজ্যের মৃৎশিল্পীরা ৷ প্রতিমা শোকাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের ৷ গুণতে হচ্ছে বাড়তি গাঁটের কড়ি ৷ কবে রোদ উঠবে সেই আশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে সবাই ৷

West Bengal Potter Artist are in Problem
আকাশের মুখ ভারে চিন্তার ভাঁজ মৃৎশিল্পীদের কপালে (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 28, 2024, 6:22 PM IST

উস্থি ও মালদা, 28 সেপ্টেম্বর: কখনও রিমঝিম, কখনও আবার ঝমাঝম ৷ নিম্নচাপের জেরে টানা ধরে বৃষ্টি চলছে জেলায় জেলায় ৷ কখনও অল্প সময়ের জন্য, কখনও বা টানা 7-8 ঘণ্টা হচ্ছে বৃষ্টি ৷ এই বৃষ্টি কৃষকদের মুখে হাসি ফোটালেও মুখ ভার জেলার মৃৎশিল্পীদের ৷ হাতে আর বেশি সময় নেই ৷ তার আগেই প্রতিমা মণ্ডপে বা মন্দিরে পাঠাতে হবে ৷ বাধ্য হয়ে প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রতিমার গায়ের কাঁচা মাটি শুকোচ্ছেন শিল্পীরা ৷ জেলায় জেলায় সেই ছবিই ধরা পড়েছে স্টুডিয়োগুলিতে ৷

দক্ষিণ 24 পরগনার উস্থির মৃৎশিল্পী কর্ণ মাঝির কথায়, "বিগত 17 থেকে 18 বছর ধরে আমরা এই প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি । নিম্নচাপের কারণে যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে আমাদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে । যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে প্রতিমা তৈরি কঠিন হয়ে যাচ্ছে । ভালো রোদ উঠলে প্রতিমার মাটি ভালোভাবে শুকিয়ে যায় ।"

নিম্নচাপের জেরে প্রতিমা সাপ্লাই নিয়ে চিন্তায় মৃৎশিল্পীরা (ইটিভি ভারত)

পাশাপাশি আরেক মৃৎশিল্পী মৌসুম পাল বলেন, "বৃষ্টির জন্য প্রবল সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে আমাদের । বেশ কিছু প্রতিমা এখনও শুকয়নি । সপ্তাহখানেক রোদের দেখা পেলে প্রতিমা আরও সুন্দর হত ৷ এখন বৃষ্টি পড়লেই প্রতিমাকে চাপা দিয়ে রাখতে হচ্ছে । প্রতিমা সম্পূর্ণ করতে আমাদের গ্যাসের মাধ্যমে হিট দিয়ে শুকোনোর কাজ করতে হবে যদি বৃষ্টি না কমে । এর ফলে খরচা ও কিছুটা বাড়বে । কাঁচামালের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে ৷ প্রতিমার দর তেমনভাবে বাড়েনি। কার্যত নিম্নচাপের জেরে সত্যিই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি আমরা। আমাদের এই স্টুডিয়োতে মোট 28টি প্রতিমা রয়েছে ৷ সঠিক সময় প্রতিমা সম্পন্ন করে পুজো মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা এখন দিনরাত এক করে কাজ করছি । হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন রয়েছে ৷ বৃষ্টি যদি না কমে তাহলে বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের প্রতিমা সম্পন্ন করতে হবে ৷"

Clay Artist of West Bengal
বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে ভরসা প্লাস্টিক (ইটিভি ভারত)

মালদা শহরের প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী টুবাই হালদার বলছেন, "পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ নিম্নচাপের বৃষ্টি থামতেই চাইছে না ৷ একটানা বৃষ্টি চলছে ৷ যেসব প্রতিমার কাজ পরে শুরু করেছি, সেগুলির গায়ের মাটি শুকোচ্ছে না ৷ এখন ব্লো ল্যাম্প জ্বালিয়ে শুকোতে হচ্ছে ৷ খুব চাপে পড়ে গিয়েছি ৷ হাতে সময়ও আর বেশি নেই ৷ বৃষ্টি যদি সত্যিই আরও কয়েকদিন এভাবে চলে, তবে সব শেষ হয়ে যাবে ৷ প্রচণ্ড সমস্যায় পড়ে যাব ৷ আমার স্টুডিয়োয় বেশি জায়গা নেই ৷ তাই প্রতিমা বাইরে রাখতে হয় ৷ রাস্তার ধারে প্রতিমা রাখি ৷ বাইরে থাকা প্রতিমাগুলি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রেখেছি ৷ এবার মোট 13টি প্রতিমার অর্ডার নিয়েছি ৷ নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ করতে পারব কিনা জানি না ৷"

একই পরিস্থিতি পুরনো মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রশিলাদহ গ্রামের মণ্ডলপাড়ায় ৷ মৃৎশিল্পী সঞ্জয় মণ্ডল এবার 12টি প্রতিমার বরাত পেয়েছেন ৷ নিম্নচাপ চিন্তায় ফেলেছে তাঁকেও ৷ তাঁর কথায়, "12টা দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছি ৷ তার মধ্যে মহদিপুরে চারটা আর মানিকচকে একটা প্রতিমা যাবে ৷ বাকিগুলো মঙ্গলবাড়ি ও সাহাপুরের বিভিন্ন এলাকার ৷ সর্বোচ্চ দাম রেখেছি 35 হাজার টাকা ৷ একটি 25 হাজার আর বাকিগুলো 20 হাজার টাকার নীচে ৷ কিন্তু সমস্যায় ফেলে দিয়েছে এই আবহাওয়া ৷ প্রতিমার মাটি শুকোতেই পারছি না ৷ ছাউনির ভিতরে সব ঠাকুর রাখতে পারিনি ৷ বাইরে রাস্তার ধারে রাখতে হয়েছে ৷ বৃষ্টি থেমে রোদ না উঠলে ভয়ঙ্কর বিপদে পড়ে যাব ৷ তা না হলে গ্যাস দিয়ে মাটি শুকোতে হবে ৷ তাতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে ৷ এমনিতেই আমাদের মতো গ্রাম্য শিল্পীরা প্রতিমার দাম তেমন পান না ৷ তার উপর খরচ এভাবে বেড়ে গেলে হাতে কিছুই থাকবে না ৷"

জেলায় জেলায় মৃৎশিল্পীদের এমনই অবস্থা ৷ নিম্নচাপে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই ৷ নামি শিল্পীদের কথা অবশ্য আলাদা ৷ তাঁদের বড় স্টুডিয়ো রয়েছে ৷ অনেকের প্রতিমা ইতিমধ্যে মণ্ডপেও চলে গিয়েছে ৷ কিন্তু বাকিরা প্রত্যেকেই চাইছেন, বৃষ্টি এবার থামুক ৷ চড়া রোদ উঠুক ৷ নিশ্চিত হোক তাঁদের পেটের ভাত ৷

উস্থি ও মালদা, 28 সেপ্টেম্বর: কখনও রিমঝিম, কখনও আবার ঝমাঝম ৷ নিম্নচাপের জেরে টানা ধরে বৃষ্টি চলছে জেলায় জেলায় ৷ কখনও অল্প সময়ের জন্য, কখনও বা টানা 7-8 ঘণ্টা হচ্ছে বৃষ্টি ৷ এই বৃষ্টি কৃষকদের মুখে হাসি ফোটালেও মুখ ভার জেলার মৃৎশিল্পীদের ৷ হাতে আর বেশি সময় নেই ৷ তার আগেই প্রতিমা মণ্ডপে বা মন্দিরে পাঠাতে হবে ৷ বাধ্য হয়ে প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রতিমার গায়ের কাঁচা মাটি শুকোচ্ছেন শিল্পীরা ৷ জেলায় জেলায় সেই ছবিই ধরা পড়েছে স্টুডিয়োগুলিতে ৷

দক্ষিণ 24 পরগনার উস্থির মৃৎশিল্পী কর্ণ মাঝির কথায়, "বিগত 17 থেকে 18 বছর ধরে আমরা এই প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি । নিম্নচাপের কারণে যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে আমাদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে । যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে প্রতিমা তৈরি কঠিন হয়ে যাচ্ছে । ভালো রোদ উঠলে প্রতিমার মাটি ভালোভাবে শুকিয়ে যায় ।"

নিম্নচাপের জেরে প্রতিমা সাপ্লাই নিয়ে চিন্তায় মৃৎশিল্পীরা (ইটিভি ভারত)

পাশাপাশি আরেক মৃৎশিল্পী মৌসুম পাল বলেন, "বৃষ্টির জন্য প্রবল সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে আমাদের । বেশ কিছু প্রতিমা এখনও শুকয়নি । সপ্তাহখানেক রোদের দেখা পেলে প্রতিমা আরও সুন্দর হত ৷ এখন বৃষ্টি পড়লেই প্রতিমাকে চাপা দিয়ে রাখতে হচ্ছে । প্রতিমা সম্পূর্ণ করতে আমাদের গ্যাসের মাধ্যমে হিট দিয়ে শুকোনোর কাজ করতে হবে যদি বৃষ্টি না কমে । এর ফলে খরচা ও কিছুটা বাড়বে । কাঁচামালের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে ৷ প্রতিমার দর তেমনভাবে বাড়েনি। কার্যত নিম্নচাপের জেরে সত্যিই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি আমরা। আমাদের এই স্টুডিয়োতে মোট 28টি প্রতিমা রয়েছে ৷ সঠিক সময় প্রতিমা সম্পন্ন করে পুজো মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা এখন দিনরাত এক করে কাজ করছি । হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন রয়েছে ৷ বৃষ্টি যদি না কমে তাহলে বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের প্রতিমা সম্পন্ন করতে হবে ৷"

Clay Artist of West Bengal
বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে ভরসা প্লাস্টিক (ইটিভি ভারত)

মালদা শহরের প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী টুবাই হালদার বলছেন, "পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ নিম্নচাপের বৃষ্টি থামতেই চাইছে না ৷ একটানা বৃষ্টি চলছে ৷ যেসব প্রতিমার কাজ পরে শুরু করেছি, সেগুলির গায়ের মাটি শুকোচ্ছে না ৷ এখন ব্লো ল্যাম্প জ্বালিয়ে শুকোতে হচ্ছে ৷ খুব চাপে পড়ে গিয়েছি ৷ হাতে সময়ও আর বেশি নেই ৷ বৃষ্টি যদি সত্যিই আরও কয়েকদিন এভাবে চলে, তবে সব শেষ হয়ে যাবে ৷ প্রচণ্ড সমস্যায় পড়ে যাব ৷ আমার স্টুডিয়োয় বেশি জায়গা নেই ৷ তাই প্রতিমা বাইরে রাখতে হয় ৷ রাস্তার ধারে প্রতিমা রাখি ৷ বাইরে থাকা প্রতিমাগুলি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রেখেছি ৷ এবার মোট 13টি প্রতিমার অর্ডার নিয়েছি ৷ নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ করতে পারব কিনা জানি না ৷"

একই পরিস্থিতি পুরনো মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রশিলাদহ গ্রামের মণ্ডলপাড়ায় ৷ মৃৎশিল্পী সঞ্জয় মণ্ডল এবার 12টি প্রতিমার বরাত পেয়েছেন ৷ নিম্নচাপ চিন্তায় ফেলেছে তাঁকেও ৷ তাঁর কথায়, "12টা দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছি ৷ তার মধ্যে মহদিপুরে চারটা আর মানিকচকে একটা প্রতিমা যাবে ৷ বাকিগুলো মঙ্গলবাড়ি ও সাহাপুরের বিভিন্ন এলাকার ৷ সর্বোচ্চ দাম রেখেছি 35 হাজার টাকা ৷ একটি 25 হাজার আর বাকিগুলো 20 হাজার টাকার নীচে ৷ কিন্তু সমস্যায় ফেলে দিয়েছে এই আবহাওয়া ৷ প্রতিমার মাটি শুকোতেই পারছি না ৷ ছাউনির ভিতরে সব ঠাকুর রাখতে পারিনি ৷ বাইরে রাস্তার ধারে রাখতে হয়েছে ৷ বৃষ্টি থেমে রোদ না উঠলে ভয়ঙ্কর বিপদে পড়ে যাব ৷ তা না হলে গ্যাস দিয়ে মাটি শুকোতে হবে ৷ তাতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে ৷ এমনিতেই আমাদের মতো গ্রাম্য শিল্পীরা প্রতিমার দাম তেমন পান না ৷ তার উপর খরচ এভাবে বেড়ে গেলে হাতে কিছুই থাকবে না ৷"

জেলায় জেলায় মৃৎশিল্পীদের এমনই অবস্থা ৷ নিম্নচাপে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই ৷ নামি শিল্পীদের কথা অবশ্য আলাদা ৷ তাঁদের বড় স্টুডিয়ো রয়েছে ৷ অনেকের প্রতিমা ইতিমধ্যে মণ্ডপেও চলে গিয়েছে ৷ কিন্তু বাকিরা প্রত্যেকেই চাইছেন, বৃষ্টি এবার থামুক ৷ চড়া রোদ উঠুক ৷ নিশ্চিত হোক তাঁদের পেটের ভাত ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.