হাড়োয়া, 21 অক্টোবর: টিকিট পেয়েও স্বস্তি মিলল না হাড়োয়ার তৃণমূল প্রার্থী রবিউল ইসলামের । প্রার্থী হওয়ার 24 ঘণ্টার মধ্যেই পোস্টার পড়ল তাঁর বিরুদ্ধে । হাড়োয়া বিধানসভার শাসন অঞ্চলে শাসকদলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ছেয়ে গিয়েছে একের পর এক পোস্টার ।
সেই সমস্ত পোস্টারের কোনওটায় বলা হয়েছে, 'হাড়োয়া বিধানসভার উপনির্বাচনে ভূমিপুত্রকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় জনগণ !' আবার কোনওটায় দাবি করা হয়েছে, 'হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রে কোনও বহিরাগত প্রার্থী চায় না তৃণমূল কংগ্রেস ।' পোস্টারের নীচে লেখা, তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীবৃন্দ ৷ এই পোস্টারকে ঘিরে অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক শিবির । যদিও, হাড়োয়ার তৃণমূল প্রার্থী একে গুরুত্ব দিতে নারাজ ৷ তবে এ নিয়ে শাসক শিবিরকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা ৷
প্রয়াত সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের ছেড়ে যাওয়া হাড়োয়া কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থীপদ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই দ্বন্দ্ব বাড়ছিল তৃণমূলের অন্দরে । বিশেষ করে এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে স্থানীয় নেতৃত্বের কাউকে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন তৃণমূলের একাংশ । প্রার্থী হওয়ার প্রবল দাবিদার বেশকিছু নাম নিয়েও চলছিল চর্চা ।
সূত্রের খবর, হাড়োয়া কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে এবারে একাধিক আবেদন জমা পড়েছিল তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে । তার মধ্যে ছিল প্রয়াত সাংসদের পরিবারের নামও । তবে প্রয়াত হাজি নুরুলের বড় ছেলে আনারুল ইসলাম এবং মেজো ছেলে রবিউল ইসলামকে প্রার্থী করা নিয়ে একসময় পরিবারের মধ্যেই দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছিল বলে অভিযোগ ।
এতকিছুর পরেও শেষ পর্যন্ত সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের পরিবারের উপরই আস্থা রাখেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব । আনারুলের পরিবর্তে অবশ্য টিকিট মেলে সাংসদের মেজো ছেলে রবিউলের । সেই আবহেই সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছিল একটি ফ্লেক্স । তাতে লেখা, "আসন্ন 121 হাড়োয়া বিধানসভার উপনির্বাচনে হাড়োয়া বিধানসভার ভূমিপুত্রকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় হাড়োয়া বিধানসভার সাধারণ জনগণ ।"
হাড়োয়ার নাগরিক সমাজের নামে সেই ফ্লেক্স ছাপানো হয়েছিল । যদিও সেখানে কারও নাম উল্লেখ ছিল না । তৃণমূল বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করার পরেই আবারও এই মর্মে পোস্টার পড়ল হাড়োয়ার শাসনে । এ দিকে, শাসন অঞ্চলে যে পোস্টার ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে, তাতে স্পষ্টত জানানো হয়েছে, দলীয় প্রার্থী হিসাবে রবিউল ইসলামকে মানছেন না তাঁরা । নীচুতলার কমিটির সঙ্গে আলোচনা না-করেই টাকার বিনিময়ে বহিরাগত প্রার্থী দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকদের কেউ কেউ ।
যদিও, বিষয়টিতে আমল দিতে চাননি হাড়োয়ার তৃণমূল প্রার্থী রবিউল ইসলাম । তাঁর কথায়, "ভূমিপুত্রকে প্রার্থী হিসেবে দাবি থাকতেই পারে । এটা তেমন কোনও বড় ব্যাপার নয় । পরিবার বড় হলে এই ধরনের ঘটনা আকছার ঘটে থাকে । এটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয় নয় । দিনের শেষে সকলেই আমরা তৃণমূল পরিবারের । নির্বাচনের সময় দেখবেন, দলের সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আমাকে জেতানোর জন্য । সকলকে সঙ্গে নিয়েই আমি কাজ করতে চাই ।"
অন্যদিকে, পোস্টার বিতর্কে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী সিপিএম । এই বিষয়ে সিপিএমের জেলা নেতা আহমেদ আলি খান বলেন, "উপনির্বাচন হোক অথবা পঞ্চায়েত, সব নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হতে গেলে লাখ লাখ টাকা জমা করতে হয় পার্টি তহবিলে । এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি । তবে এখন যাঁরা ভূমিপুত্রের দাবিতে আওয়াজ তুলছেন, কিছুদিন পর দেখা যাবে তাঁরাও চুপ হয়ে গিয়েছেন । কারণ সকলেই পঞ্চায়েতে লুট করে খাচ্ছেন ।"