দুর্গাপুর, 14 নভেম্বর: খড়ের ছাউনি ৷ তার উপর প্লাস্টিক চাপানো ৷ তাতে অজস্র ফুটো ৷ নড়বড়ে মাটির দেওয়ালে খুঁটির ঠেকনা দেওয়া ৷ পাননি কেন্দ্র বা রাজ্যের আবাস যোজনার ঘর ৷ অগত্যা সন্তানদের সঙ্গে জীবন হাতে করে কুঁড়ে ঘরে বাস দম্পতির ৷ তাঁদের সঙ্গে ওই ঘরেই থাকে ছাগলছানারাও ।
অভিযোগ, আবাসের তালিকায় নেই সততা ৷ সেই কারণে তালিকায় নাম না থাকায় দম্পতির এই হাল ৷ বাগদি পরিবারের করুণ জীবনযাত্রার ছবি ধরা পড়েছে কাঁকসার বিদবিহারে । দ্রুত ওই ব্যক্তির নাম আবাস তালিকায় তোলা না হলে পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিস ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিজেপি । ঘটনাটি শোনার পর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রশাসনের ।
এর আগে কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনার টাকা থেকেও এই পরিবার বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ ৷ এবার আবাস যোজনার টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার ৷ বাংলা আবাস যোজনা নামে গরিবদের বাড়ি করার জন্য এই টাকা দেওয়া হবে ৷ তাতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে ৷ এবার পশ্চিম বর্ধমান জেলায়ও একই ছবি দেখা গেল ৷
বাগদি পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের আবাস তালিকায় রয়েছে প্রভাবশালীদের থেকে শুরু করে বিত্তবানদের নাম ৷ কিন্তু সেই তালিকা থেকে সত্যিকারের যোগ্য ব্যক্তিরা বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ ৷ তাঁদের মধ্যে একজন হলেন কাঁকসার বিদবিহারের শিবপুর বাগান পাড়ার বাসিন্দা হিরু বাগদি ৷ বাড়িতে রয়েছে তাঁর দুই সন্তান ও স্ত্রী । দিনমজুরের কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালান তিনি । হিরু বাগদির দাবি, আবাসের পাকা বাড়ির জন্য একাধিকবার আবেদন করেছেন তিনি । তবু এবারে বাংলা আবাস যোজনার তালিকায়ও নাম নেই তাঁর ।
হিরু বাগদির বাড়ির বেহাল দশা ৷ নিচু বাড়ি ৷ বৃষ্টি হলেই জল জমে যায় ৷ সেসময় অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিতে হয় পরিবারকে ৷ ঝড়ে ঘর দোলে ৷ যখন তখন বাড়ি ভেঙে ঘটতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা । সেই আশঙ্কাতেই প্রহর গুনছে পরিবার ।
হিরু বাগদি বলেন,"বাড়ি করার মতো সামর্থ্য নেই । তাই কোনওরকমে এই কুঁড়ে ঘরেই দিন কাটাচ্ছি । আমাদের সঙ্গে ছাগলগুলোও থাকে । ঝড় হলেই ঘর এমন নড়ে মনে হয় ভেঙে চাপা পড়ে যাবে । তাই আমি আবাস যোজনায় যাতে একটি পাকা বাড়ি পাই তার আবেদন করেছিলাম । এবারের তালিকায়ও দেখি আমার নাম নেই ৷ এলাকার যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে, যাঁরা প্রভাবশালী, তাঁদেরই নাম রয়েছে । আমাদের মতো অসহায় মানুষদের নাম নেই আবাসের তালিকায় । চরম আতঙ্কের মধ্যেই আমরা রাত কাটাই । সরকারের কাছে আমার আর্জি, আমাকে একটা ঘর দেওয়া হোক ।"
এই ঘটনায় প্রশাসনের সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "বিডিও অফিস থেকে যাঁরা সমীক্ষা করছেন তাঁরা দ্রুত এই অসহায় হারু বাগদির নাম আবাসের তালিকায় না তুললে, আমরা আন্দোলনে নামব । বিডিও আর পঞ্চায়েত কার্যালয়, একসঙ্গে ঘেরাও করা হবে । কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে, আর বাংলার সরকার এই নিয়ে দুর্নীতি করবে ৷ ছেড়ে কথা বলা হবে না ।"
পালটা কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নবকুমার সামন্ত বলেন, "বিরোধীদের বিরোধিতা করাই কাজ । কিন্তু আমাদের চূড়ান্ত তালিকা এখনও ঘোষণা হয়নি । রাজ্য সরকার যোগ্যদের আবাসের বাড়ি দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত সমীক্ষা করছে ব্লক প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে । বিদবিহারের হারু বাগদিও যাতে আবাসের বাড়ি পায় সেদিকেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।"