বেলঘরিয়া, 17 জুলাই: বিতর্ক যেন লেগেই রয়েছে আড়িয়াদহের তালতলা স্পোর্টিং ক্লাবকে ঘিরে । কিছুদিন আগেই জয়ন্ত সিংয়ের 'মারকুটে' সেই ক্লাব সিল করে দিয়েছিল পুলিশ । সেই সিল-ই এবার ভাঙার অভিযোগ উঠল রাতের অন্ধকারে । তবে, কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে এই কাণ্ড ঘটাল তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে । এর পিছনে জয়ন্ত সিংয়ের কোনও সঙ্গীর হাত রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
ঘটনার জেরে বুধবার তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তর 24 পরগনার আড়িয়াদহের নওদা পাড়ায় । খবর পেয়ে এদিন বেলঘরিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুনরায় তালতলা স্পোর্টিং ক্লাব সিল করে দিয়ে আসে । কিন্তু, প্রশ্ন হল, পুলিশের করা সিল ভাঙার সাহস দেখাল কারা ! তাহলে কী ক্লাবের ভিতরে থাকা কোনও তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতেই সিল ভাঙা হয়েছিল ? নাকি তদন্তের মোড় অন্যদিকে ঘোরাতেই এই প্রচেষ্টা ? এমনই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে ।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এদিন সকালে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার প্রথমে নজরে আসে বিষয়টি । হঠাৎই তাঁরা লক্ষ্য করেন, এই ক্লাবের ভিতরে আলো জ্বলছে । সিল করা ক্লাবের ভিতরে আলো দেখে রীতিমতো হইচই পড়ে যায় এলাকায় । এরপরই খবর যায় পুলিশের কাছে । তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বেলঘরিয়া থানার পুলিশ । সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায়, গালা দিয়ে করা সিল ভেঙে দেওয়া হয়েছে । শুধু তাই নয়, ক্লাবের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গালার বিভিন্ন উপকরণও । এরপরই ফের ওই ক্লাব সিল করে দেওয়া হয় । এর নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছে সেই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর ।
প্রসঙ্গত, আড়িয়াদহে প্রথমে মা ও ছেলেকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর এবং তারপর একের পর এক নির্মম অত্যাচারের ভিডিয়ো সামনে আসায় রাতারাতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে আড়িয়াদহের তালতলা স্পোর্টিং ক্লাব । এই সমস্ত ঘটনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছে জয়ন্ত সিং ওরফে 'জায়ান্ট' এবং তাঁর ঠ্যাঙারে বাহিনীর । অভিযোগ, এই তালতলা স্পোর্টিং ক্লাবই ছিল জয়ন্তর আদালত । এখানেই নিয়ে এসে সাধারণ মানুষের উপর পৈশাচিক অত্যাচার চালানো হত । এই ক্লাবের ভিতরে এরকমই একটি নারকীয় অত্যাচারের ভিডিয়ো সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়ায় ।
চ্যাংদোলা করে মারধরের ঘটনারই পুনর্নির্মাণ করতে গত শুক্রবার তালতলা স্পোটিং ক্লাবে নিয়ে আসা হয় আড়িয়াদহ-কাণ্ডে ধৃত জয়ন্ত সিং ও তাঁর দুই শাগরেদ প্রসেনজিৎ দাস ওরফে লাল্টু এবং সুদীপ সাহা ওরফে গুড্ডুকে । পুনর্নির্মাণের নেতৃত্বে ছিলেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (বেলঘরিয়া) শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনজনকে ক্লাবের মধ্যে ঢুকিয়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় পুলিশ । ক্লাবের ভিতরেই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর । ক্লাবে কী ধরনের আড্ডা চলত ? সালিশি সভা কীভাবে করা হত ? সেই সমস্ত প্রশ্নেরই উত্তর সেদিন পুলিশ জানতে চায় জয়ন্ত ও তাঁর ওই দুই শাগরেদের কাছে ।
এদিকে, পুনর্নির্মাণের দিনে ক্লাবের ভিতর থেকে দু'টি লোহার রড এবং একটি ব্যাট উদ্ধার করে পুলিশ । প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, সেগুলি দিয়েই সালিশি সভায় মারধর করতেন আড়িয়াদহের 'বেতাজ বাদশা' জয়ন্ত সিং ও তাঁর গ্যাংঙের লোকজন । এরপরই ক্লাবের দরজায় তালা ঝুলিয়ে সিল করে দেয় পুলিশ ।