ETV Bharat / state

ইটবৃষ্টি-অগ্নিসংযোগে আক্রান্ত পুলিশ, নবান্নের দোরগোড়ায় বিক্ষোভ; ব্যাকফুটে লালবাজার - Nabanna Abhijan

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 27, 2024, 8:34 PM IST

Updated : Aug 27, 2024, 10:28 PM IST

Nabanna Abhijan: পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এমনই নানা ঘটনার ছবি দেখা গেল নবান্ন অভিযানে ৷ আক্রান্ত হলেন বেশকয়েকজন পুলিশকর্মী ৷ এদিকে, কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নবান্নের প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল বিক্ষোভ ৷ সবমিলিয়ে দিনশেষে ব্যাকফুটে লালবাজার ৷

ETV BHARAT
নবান্নের দোরগোড়ায় বিক্ষোভ, ব্যাকফুটে লালবাজার (নিজস্ব চিত্র)

কলকাতা, 27 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে নবান্ন অভিযানকে ঘিরে আরও একবার প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল কলকাতা তথা রাজ্য পুলিশের ভূমিকা ৷ বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে গিয়ে দিনভর নাকানি চোবানি খেতে হল পুলিশকে ৷

অগ্নিসংযোগে আক্রান্ত পুলিশ (ইটিভি ভারত)

'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ'-এর ডাকে নবান্ন অভিযান কর্মসূচি রুখতে দুর্গে পরিণত করা হয়েছিল রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবনকে ৷ হাওড়ার পাশাপাশি গোটা মহানগরী মুড়ে ফেলা হয় নিরাপত্তার চাদরে ৷ তবে এতকিছু সত্ত্বেও বিক্ষোভ পৌঁছে গেল নবান্নের একেবারে দোরগোড়ায় ৷ অবাধ লাঠিচার্জ, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভাঙল একের পর এক ব্যারিকেড ৷ রক্তাক্ত হলেন পুলিশকর্মীরা ৷ ঘটল পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৷ ফিরে এল 14 অগস্টের রাতে পুলিশের নাকের ডগায় আরজি করে তাণ্ডবের স্মৃতি ৷

গত 14 অগস্ট চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে মহিলাদের রাত দখলের সময়ই আরজি করের দখল নেয় একদল দুষ্কৃতী ৷ হাসপাতালে প্রায় 7 হাজার লোকের তাণ্ডবের ঘটনায় পুলিশের রণকৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ সুপ্রিম কোর্ট । সেদিন মিনিটের মধ্যে আরজি কর হাসপাতালের বেশ কয়েকটি বিভাগ ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয় । ধর্ষণ ও খুনের প্রমাণ লোপাটে সুপরিকল্পিত এই ধ্বংসলীলার কোনও আঁচ পুলিশ কীভাবে পেল না, সেই প্রশ্ন উঠেছে আদালতে ৷ সেদিনের পর আজ নবান্ন অভিযানের দিনেও ফের বড়সড় প্রশ্ন উঠল পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ৷

নবান্ন অভিযানের আগে আজ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় একপ্রকার দুর্গের চেহারা নেয় নবান্ন ৷ লাঠিধারী পুলিশের সঙ্গে মোতায়েন ছিল র‍্যাফ, কমব্যাট ফোর্স ৷ তৈরি ছিল ড্রোন, জলকামান । এই প্রথমবার বিক্ষোভ ঠেকাতে কন্টেনার ব্যবহার করে কলকাতা পুলিশ ৷ তবে যত বেলা গড়িয়েছে ততই আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়িয়েছেন বিক্ষোভকারীরা ৷ হাওড়া থেকে সাঁতরাগাছি, ধর্মতলা থেকে হেস্টিংস - একের পর এক ভেঙেছে ব্যারিকেড ৷ লাঠিচার্জ, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসকে পরোয়া না-করে নবান্নের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা ৷ তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি চালান ৷ এদিন গুরুতর আহত হয়েছেন 15 জন পুলিশকর্মী ৷ হেলমেট পরেও মাথা ফাটে ৷ রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীকে ৷ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় ৷ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের বাইক ৷

একটা সময়ে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের সামনে অসহায় দেখিয়েছে পুলিশকে ৷ এদিন বুড়ি ছোঁয়ার মতো বিক্ষোভকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল নবান্নে পৌঁছনো । তাই অলিগলি যেখান থেকে সম্ভব নবান্নে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা ৷ বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশের বাধা পেরিয়ে বিকেলের আগেই নবান্ন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পৌঁছে যায় বিক্ষোভকারীদের একটি দল । নবান্নের মূল ফটক থেকে শরৎ চ্যাটার্জী রোড বা হরদেব ভট্টাচার্য রোডের দূরত্ব 100 মিটারও নয় । এদিন দফায় দফায় এই দুই রাস্তায় দেখা মিলেছে বিক্ষোভকারীদের । পুলিশ, ব়্যাফ, কমব্যাট ফোর্সের উপস্থিতি থাকলেও বিক্ষোভ আটকাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে । নবান্ন থেকে 50 মিটার দূরত্বে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আন্দোলনকারীরা ৷

আজ মিছিল শুরু হওয়ার পরই সাঁতরাগাছিতে ধুন্ধুমার বাঁধে ৷ সাঁতরাগাছির পাশাপাশি ব্যারিকেড ভাঙা হয় হাওড়ার মল্লিক ফটকে । আন্দোলনকারীরা জনসমুদ্রের আকার ধারণ করে রামকৃষ্ণপুর ঘাটের কাছে । মহানগরীও সেই সময় ক্রমে তপ্ত হতে শুরু করে ৷ আটক আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে বিকেলের দিকে নতুন করে ছড়ায় বিক্ষোভ ৷ বিকেল সাড়ে তিনটের পর পার্টি অফিস থেকে বিজেপি নেতারা সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে লালবাজার অভিযান করেন । বিকেল সাড়ে চারটের পর ফের ব্যারিকেড ভাঙতে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি । সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টার পর ডোরিনা ক্রসিংয়ের কাছে লাঠি চালাতে শুরু করে পুলিশ । এভাবেই দিনভর কড়া পুলিশি পাহারার মধ্যেই বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে ৷ তবে সারাদিনে 126 জনকে আটক করেছে পুলিশ ৷ তাঁদের মধ্যে 103 জন পুরুষ ও 23 জন মহিলা ৷

কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল ? কেন ঢাল, তরোয়াল নিয়ে এত তৎপরতা সত্ত্বেও আজ নাকানি চোবানি খেতে হল পুলিশকে ৷ এবিষয়ে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এডিজি আইপিএস নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি ইটিভি ভারতকে বলেন, আজ এত মানুষের ভিড় হয়ে যাবে আর এইভাবে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে, এটা আন্দাজ করতে পারেনি পুলিশ । তবে 14 অগস্ট আরজি করে তাণ্ডবের ঘটনা পুলিশ আঁচ করতে পারেনি, এটা মানতে নারাজ তিনি ৷ তাঁর কথায়, "গত 14 অগস্ট রাতে আরজি করের সামনে যেটা ঘটল, পুলিশ সেটা জানতে পারল না, তা অবিশ্বাস্যকর । আসলে সেদিন পুলিশ তাণ্ডব থামাতেই চায়নি ।"

কলকাতা, 27 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে নবান্ন অভিযানকে ঘিরে আরও একবার প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল কলকাতা তথা রাজ্য পুলিশের ভূমিকা ৷ বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে গিয়ে দিনভর নাকানি চোবানি খেতে হল পুলিশকে ৷

অগ্নিসংযোগে আক্রান্ত পুলিশ (ইটিভি ভারত)

'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ'-এর ডাকে নবান্ন অভিযান কর্মসূচি রুখতে দুর্গে পরিণত করা হয়েছিল রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবনকে ৷ হাওড়ার পাশাপাশি গোটা মহানগরী মুড়ে ফেলা হয় নিরাপত্তার চাদরে ৷ তবে এতকিছু সত্ত্বেও বিক্ষোভ পৌঁছে গেল নবান্নের একেবারে দোরগোড়ায় ৷ অবাধ লাঠিচার্জ, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভাঙল একের পর এক ব্যারিকেড ৷ রক্তাক্ত হলেন পুলিশকর্মীরা ৷ ঘটল পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৷ ফিরে এল 14 অগস্টের রাতে পুলিশের নাকের ডগায় আরজি করে তাণ্ডবের স্মৃতি ৷

গত 14 অগস্ট চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে মহিলাদের রাত দখলের সময়ই আরজি করের দখল নেয় একদল দুষ্কৃতী ৷ হাসপাতালে প্রায় 7 হাজার লোকের তাণ্ডবের ঘটনায় পুলিশের রণকৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ সুপ্রিম কোর্ট । সেদিন মিনিটের মধ্যে আরজি কর হাসপাতালের বেশ কয়েকটি বিভাগ ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয় । ধর্ষণ ও খুনের প্রমাণ লোপাটে সুপরিকল্পিত এই ধ্বংসলীলার কোনও আঁচ পুলিশ কীভাবে পেল না, সেই প্রশ্ন উঠেছে আদালতে ৷ সেদিনের পর আজ নবান্ন অভিযানের দিনেও ফের বড়সড় প্রশ্ন উঠল পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ৷

নবান্ন অভিযানের আগে আজ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় একপ্রকার দুর্গের চেহারা নেয় নবান্ন ৷ লাঠিধারী পুলিশের সঙ্গে মোতায়েন ছিল র‍্যাফ, কমব্যাট ফোর্স ৷ তৈরি ছিল ড্রোন, জলকামান । এই প্রথমবার বিক্ষোভ ঠেকাতে কন্টেনার ব্যবহার করে কলকাতা পুলিশ ৷ তবে যত বেলা গড়িয়েছে ততই আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়িয়েছেন বিক্ষোভকারীরা ৷ হাওড়া থেকে সাঁতরাগাছি, ধর্মতলা থেকে হেস্টিংস - একের পর এক ভেঙেছে ব্যারিকেড ৷ লাঠিচার্জ, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসকে পরোয়া না-করে নবান্নের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা ৷ তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি চালান ৷ এদিন গুরুতর আহত হয়েছেন 15 জন পুলিশকর্মী ৷ হেলমেট পরেও মাথা ফাটে ৷ রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীকে ৷ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় ৷ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের বাইক ৷

একটা সময়ে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের সামনে অসহায় দেখিয়েছে পুলিশকে ৷ এদিন বুড়ি ছোঁয়ার মতো বিক্ষোভকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল নবান্নে পৌঁছনো । তাই অলিগলি যেখান থেকে সম্ভব নবান্নে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা ৷ বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশের বাধা পেরিয়ে বিকেলের আগেই নবান্ন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পৌঁছে যায় বিক্ষোভকারীদের একটি দল । নবান্নের মূল ফটক থেকে শরৎ চ্যাটার্জী রোড বা হরদেব ভট্টাচার্য রোডের দূরত্ব 100 মিটারও নয় । এদিন দফায় দফায় এই দুই রাস্তায় দেখা মিলেছে বিক্ষোভকারীদের । পুলিশ, ব়্যাফ, কমব্যাট ফোর্সের উপস্থিতি থাকলেও বিক্ষোভ আটকাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে । নবান্ন থেকে 50 মিটার দূরত্বে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আন্দোলনকারীরা ৷

আজ মিছিল শুরু হওয়ার পরই সাঁতরাগাছিতে ধুন্ধুমার বাঁধে ৷ সাঁতরাগাছির পাশাপাশি ব্যারিকেড ভাঙা হয় হাওড়ার মল্লিক ফটকে । আন্দোলনকারীরা জনসমুদ্রের আকার ধারণ করে রামকৃষ্ণপুর ঘাটের কাছে । মহানগরীও সেই সময় ক্রমে তপ্ত হতে শুরু করে ৷ আটক আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে বিকেলের দিকে নতুন করে ছড়ায় বিক্ষোভ ৷ বিকেল সাড়ে তিনটের পর পার্টি অফিস থেকে বিজেপি নেতারা সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে লালবাজার অভিযান করেন । বিকেল সাড়ে চারটের পর ফের ব্যারিকেড ভাঙতে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি । সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টার পর ডোরিনা ক্রসিংয়ের কাছে লাঠি চালাতে শুরু করে পুলিশ । এভাবেই দিনভর কড়া পুলিশি পাহারার মধ্যেই বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে ৷ তবে সারাদিনে 126 জনকে আটক করেছে পুলিশ ৷ তাঁদের মধ্যে 103 জন পুরুষ ও 23 জন মহিলা ৷

কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল ? কেন ঢাল, তরোয়াল নিয়ে এত তৎপরতা সত্ত্বেও আজ নাকানি চোবানি খেতে হল পুলিশকে ৷ এবিষয়ে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এডিজি আইপিএস নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি ইটিভি ভারতকে বলেন, আজ এত মানুষের ভিড় হয়ে যাবে আর এইভাবে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে, এটা আন্দাজ করতে পারেনি পুলিশ । তবে 14 অগস্ট আরজি করে তাণ্ডবের ঘটনা পুলিশ আঁচ করতে পারেনি, এটা মানতে নারাজ তিনি ৷ তাঁর কথায়, "গত 14 অগস্ট রাতে আরজি করের সামনে যেটা ঘটল, পুলিশ সেটা জানতে পারল না, তা অবিশ্বাস্যকর । আসলে সেদিন পুলিশ তাণ্ডব থামাতেই চায়নি ।"

Last Updated : Aug 27, 2024, 10:28 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.