বসিরহাট, 9 জুলাই: মাটিয়া গণপিটুনিকাণ্ডে দু'জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের নাম তরিকুল মণ্ডল এবং নাজমুল গাজি। ভাইরাল ভিডিয়োর সূত্র ধরে মঙ্গলবার মোমিনপুর উত্তরপাড়া এলাকা থেকে দুই গ্রামবাসীকে পাকড়াও করা হয়। গণপিটুনির ঘটনায় বাকিদেরও চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, গণপিটুনির ঘটনায় ধৃত দুই গ্রামবাসীর প্রত্যক্ষ মদতের অভিযোগ রয়েছে। এদিনই ধৃত দু'জনকে নিজেদের হেফাজতে নিতে বসিরহাট মহকুমা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। ছেলেধরা সন্দেহে সোমবার মাটিয়ার রাজেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের মোমিনপুর উত্তরপাড়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে শিশুচোর সন্দেহে আটক করেন গ্রামবাসীরা ৷ এরপর তাঁর অসংলগ্ন কথা শুনে সন্দেহের বশে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে রেখে গণপিটুনির অভিযোগ ওঠে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন। এলাকায় তিনি ইতস্তত ঘোরাফেরা করছিলেন। তাঁর কথাবার্তাও অসংলগ্ন ছিল বলে দাবি গ্রামবাসীদের। ব্যক্তির চালচলনে সন্দেহ হওয়ায় বাচ্চা চুরির চেষ্টার অভিযোগ তুলে সরব হন গ্রামের লোকজন। এরপরই কোনও কথা না-শুনে তাঁকে ঘিরে শুরু হয় গণপ্রহার। খবর পেয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে এসে রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশকে। ঘটনাস্থল থেকে কোনওরকমে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে জনতার হাত থেকে রক্ষা করে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয় ৷
গণপিটুনির এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়। পরে, অবশ্য খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওই ব্যক্তির বাড়ি শাসন থানা এলাকায় ৷ মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তিনি ঘুরতে ঘুরতে পাশের মোমিনপুর উত্তর পাড়ায় চলে এসেছিলেন ৷
এদিকে, ঘটনার পরেই পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হয় ৷ তারপর তাঁদের হাতে ওই ব্যক্তিকে তুলে দেওয়া হয় ৷ এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়। প্রসঙ্গত, ছেলেধরা কিংবা বাচ্চা চুরির গুজব যেন সংক্রমণের আকার নিয়েছে রাজ্যজুড়ে। গণপিটুনির জেরে একাধিক জায়গায় মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। গুজব রুখতে প্রশাসন সর্তকতামূলক প্রচার চালালেও হুঁশ ফিরছে না সাধারণ মানুষের।
বি:দ্র: গণপিটুনি একটি সামাজিক ব্যাধি। আমরা জানি হিংসা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। কোনও গুজবে প্রভাবিত হবেন না। কোথাও কোনও সমস্যা হলে সরাসরি পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সুরক্ষিত থাকুন। সমাজকে সুরক্ষিত রাখার ভার আপনারও।