আলিপুরদুয়ার, 15 মে: পাহাড় ও সবুজের সমারোহ বললেই সবার প্রথম মাথায় আসে উত্তরবঙ্গের কথা ৷ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সবুজে ঘেরা উত্তরবঙ্গের নৈসর্গিক শোভার হাতছানি উপেক্ষা করা বড়ই কঠিন ৷ যেমন উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের গভীর অরণ্য চিলাপাতা। এই এলাকাতেই আছে বহুল পরিচিত নল রাজার গড় । যা পর্যটনপ্রিয় বাঙালির কাছে ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় ৷ শহরের কলকারখানার ধোঁয়া থেকে দূরে, প্রকৃতির কোলে কিছু দিনের জন্য হারিয়ে যেতে চাইলে অনায়াসেই ঘুরে আসা যেতে পারে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের চিলাপাতায় ৷
কীভাবে যাবেন চিলাপাতা:
শিয়ালদা বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে সোজা আলিপুরদুয়ার জংশন বা হাসিমারা স্টেশন। সেখান থেকে মাত্র 20 কিলোমিটার দূরত্ব ডুয়ার্সের এই ভার্জিন ফরেস্টের । ঘন গাছ-পালা থাকায় এটিকে ভার্জিন ফরেস্ট বলা হয় ৷
চিলাপাতার ইতিহাস:
কোচ রাজবংশের আদিপুরুষ বিশ্ব সিংহের তৃতীয় পুত্রের নাম ছিল চিলা রায় । ডুয়ার্সের সীমানায় আলিপুরদুয়ারের কাছে গভীর অরণ্যে চিলারায় এক দুর্গ নির্মাণ করেন । সেই দুর্গ রাজা নরনারায়ণের নামে পরবর্তীকালে নল রাজার গড় হিসেবে পরিচিত হয় । আর যে অরণ্যে এই দুর্গ নির্মিত হয়েছিল সেটি আজ চিলাপাতা অরণ্য নামে খ্যাত । কোচবিহারের রাজা জঙ্গলে এসে গন্ডার শিকার করতেন । জঙ্গলের ভিতরে ধ্বংসস্তূপ বুকে নিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে গুপ্তযুগের নল রাজার গড় ।
চিলাপাতার ভ্রমণকাহিনী:
নিস্তব্ধতার বুক চিরে ঘন সবুজ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে আঁকাবাঁকা আলপথ ৷ সেই পথ দিয়ে গেলে শোনা যাবে নাম না-জানা অজস্র পাখির কুহুতান ৷ আলিপুরদুয়ার থেকে চিলাপাতার দূরত্ব প্রায় 20 কিলোমিটার । জঙ্গলপ্রেমী ও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের কাছে চিলাপাতা অত্যন্ত আকর্ষণীয় ৷ অরণ্যে একাকী রাত্রিযাপনের ইচ্ছা থাকেল সেরা ঠিকানা হতে পারে ডুয়ার্সের এই চিলাপাতা ফরেস্ট । আর ফটোগ্রাফার হলে তো কথাই নেই, জঙ্গলে কাটানোর প্রত্যেক মুহূর্ত আপনার ক্যামেরার লেন্সে নতুন কিছু দেবে ।
জঙ্গল সাফারি:
জঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে সাফারি না করলে ঘোরাটাই অপূর্ণ থেকে যায় ৷ সেই সুযোগ আছে চিলাপাতা ফরেস্টেও ৷ ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা পাওয়া যেতে পারে বন্য হাতি, বাইসন, গন্ডারেরও । এক সময় এই জঙ্গলে প্রচুর গন্ডার ছিল । এখন অবশ্য গন্ডারের সংখ্যা খুব কমে গিয়েছে । তবে প্রচুর লেপার্ড আছে ভার্জিন ফরেস্ট চিলাপাতায় । চিলাপাতা অরণ্য জলদাপাড়া এবং বক্সা টাইগার রিজার্ভের মধ্যবর্তী হাতি চলাচলের পথ । নদীর চরে ঘাস খেতে আসে হরিণের দল । সব মিলিয়ে অরণ্যের পরিবেশ অসাধারণ, একেবারে নিবিড় অরণ্য । সে জন্যই পর্যটকরা ভিড় করেন এখানে ।
দূরবীনে চোখ রাখতেই হবে:
জঙ্গল সাফারিতে গেলে শুধুই কি লেন্সে চোখ ? সাফারির কোনও মুহূর্ত যাতে হাতছাড়া না হয়, অনেকেই সাফারিতে গিয়ে দূরবীনে চোখ রাখেন ৷ জঙ্গলের গভীরে হারিয়ে যেতে দূরবীনে চোখ রাখতেই হবে ৷ দূরবীন হাতে সাফারি যে শুধু বন্যপ্রাণী নয় বেশ ফ্যাশনেবলও ৷
কোথায় থাকবেন :
চিলাপাতায় রয়েছে বেশ কিছু হোম স্টে । স্বল্প খরচের মধ্যেই আপনি থাকা ও খাওয়ার সুবিধা পাবেন । জনপ্রতি মাত্র 1100 টাকা থেকে 1500 টাকা খরচ করলেই থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে ৷
তবে আর কী ভাবছেন ৷ সুবিধা মতো দিন দেখে বেরিয়ে পডুন জঙ্গল সাফারিতে ৷ ঘুরতে গেলে বেশি জামা-কাপড় না নেওয়াও ভালো ৷ তবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে সঙ্গে রাখা দরকার ৷ প্রয়োজনীয় ফোন নম্বরগুলি রেখে দিতে পরেন ৷ জঙ্গল সাফারি জন্য কিছু শুকনো খাবার ও ড্রাই ফ্রুটসও রাখতে পারেন ৷
আরও পড়ুন: