কলকাতা, 14 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যের অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে ৷ আজ সেই কর্মবিরতির চতুর্থদিন ৷ আবার আজ থেকে অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজের আউটডোর বা ওপিডি-র পরিষেবাও বন্ধ রাখা হয়েছে ৷ যার জেরে চরম বিপাকে পড়েছেন আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগী এবং রোগীর আত্মীয়রা ৷ তেমনই ছবি উঠে এল মালদা মেডিক্যাল কলেজ, ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যাল কলেজ, এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল-সহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ৷
মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করছেন ৷ কিন্তু, এখানে ওপিডি খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা ৷ তাঁরা জানান, সিনিয়র চিকিৎসকরা ওপিডি সামলাচ্ছেন ৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও রোগীরা পরিষেবা ঠিকঠাকভাবে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ জানা গিয়েছে, হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ পড়ুয়াদের সঙ্গে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন ৷ ফলে অল্পসংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে আউটডোর পরিষেবা ঠিকঠাকভাবে রোগীরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ৷
ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
একই পরিস্থিতি ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যাল কলেজে ৷ সেখানে ওপিডি পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ ৷ দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন এসে ফিরে যাচ্ছেন ৷ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে, সিনিয়র ডাক্তাররাও এদিন আউটডোরে রোগী দেখতে যাননি ৷ যার ফলে বিপাকে পড়েছেন বহু মানুষ ৷ আউটডোরের বাইরে এদিন বিশাল লাইন দেখা যায় ৷ কিন্তু, বেলা গড়ালেও আউটডোরে নাম লেখানোর কাউন্টার খোলা হয়নি ৷ শেষে বাধ্য হয়ে ফিরে যান তাঁরা ৷
তবে, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় চিকিৎসকমহলের এই আন্দোলনকে সমর্থন করলেন অনেকেই ৷ জানালেন, ডাক্তারি পড়ুয়ার সঙ্গে যে নির্মম ঘটনা ঘটেছে, তা যাতে অন্য কারও সঙ্গে না ঘটে, তা সরকার ও প্রশাসনকে সুনিশ্চিত করতে হবে ৷ আর তার জন্য চিকিৎসকদের এই আন্দোলন অনেকাংশেই সমর্থনযোগ্য ৷ তবে, রোগীদের পরিষেবার বিষয়টিও যাতে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়, সেই আবেদন করা হয়েছে ৷
কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
কোচবিহারের এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আউটডোরেও এদিন কোনও চিকিৎসক বসেননি ৷ যার জেরে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে, রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের ৷ বিশেষ করে ইএনটি, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও শিশু বিভাগে শতাধিক রোগীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ৷ দীর্ঘক্ষণ আউটডোর না-খোলায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রোগীর পরিজনরা ৷ এমনকি আউটডোরে চিকিৎসক আসবেন কি না, তা নিয়ে কিছুই জানানো হয়নি ৷
এদিকে শয়ে শয়ে রোগী আউটডোরে চলে আসায় হাসপাতালে পৌঁছন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পার্থপ্রতীম রায় ৷ এদিন তিনি বলেন, "কিছু কিছু ওয়ার্ডে সমস্যা ছিল, মেটানো হচ্ছে ৷" সমস্যা মিটে গিয়েছে বলে চেয়ারম্যান দাবি করলেও, এদিন কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের একাধিক বিভাগে চিকিৎসক আসেননি বলে অভিযোগ করেছেন রোগী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ৷ ফলে তাঁদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে ৷
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল
আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সামিল হয়েছে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালও ৷ বুধবার দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের আউটডোর খোলেনি ৷ তবে, বেলার দিকে আউটডোরের টিকিট কাউন্টার খোলা হয় ৷ কিন্তু, আউটডোরে ডাক্তারদের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ ৷ চিকিৎসা করাতে আসা এক মহিলা প্রতিমা রায় বলেন, "গলায় সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছিলাম ৷ কিন্তু, দেখলাম আউটডোর বন্ধ ৷ চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের ৷ এখন কী করব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না ৷" দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডা. ধীমান মণ্ডল বলেন, "রোগীদের পরিষেবা দিয়েই আমাদের প্রতিবাদ চলছে ৷ আউটডোর বন্ধ থাকলেও, জরুরি বিভাগ চালু থাকছে এবং জরুরি বিভাগেই আউটডোরের রোগীদের চিকিৎসা করা হবে ৷"