মালদা, 7 নভেম্বর: কালীপুজো পেরিয়ে যাওয়ার পরেও নিয়মিত জুয়ার আসর বসার অভিযোগ তৃণমূল নেতার ক্লাবে ৷ অভিযোগ, সেই আসরে উপস্থিত থাকতেন স্বয়ং ওই তৃণমূল নেতা ৷ সোমবার রাতে সেই ক্লাবে হঠাৎ হানা দেয় পুলিশ ৷ কেন নেতার ক্লাবে পুলিশ হানা দেবে, সেই প্রশ্ন তুলে বুধবার রাতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ৷ ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় ৷ গোটা ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে বিজেপি নেতৃত্বের গলায় ৷ এক্ষেত্রে অবশ্য পুলিশের ভূমিকাকেই সমর্থন করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ৷
হরিশ্চন্দ্রপুরের তেঁতুলবাড়িতে একটি ক্লাবের সর্বেসর্বা তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বাবলু কর্মকার ৷ অভিযোগ, সেই জগদ্ধাত্রী ক্লাবেই নিয়মিত বসছিল জুয়ার আসর ৷ এদিকে, এবার দুর্গাপুজোর আগেই এলাকার প্রতিটি ক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদককে ডেকে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ জানিয়ে দিয়েছিল, আগে যাই ঘটে থাকুক না কেন, এবার এই থানা এলাকার কোনও প্রান্তে জুয়াখেলা কিংবা চটুল নাচের আসর বসানো যাবে না ৷ তেমন ঘটনা ঘটলে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করবে ৷
পুলিশের সিদ্ধান্ত জগদ্ধাত্রী ক্লাব কর্তৃপক্ষকেও জানিয়ে দেওয়া হয় ৷ গোপন সূত্রে জুয়াখেলার আসর বসার খবর পেয়ে সোমবার রাতে সেই ক্লাবে পুলিশ বাহিনী নিয়ে হানা দেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার এএসআই বিকাশ শুক্লা ৷ অভিযোগ, তখন ক্লাবে শুধু জুয়াখেলাই নয়, বসেছিল মদের আসরও ৷ স্বয়ং বাবলুও উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ ৷ পুলিশ হানা দিতেই যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায় ৷ কিন্তু পুলিশি এই অভিযানের খবর চাউর হয়ে যায় এলাকায় ৷
বাবলু কর্মকার শুধুমাত্র হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যই নন, তিনি রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তজমুল হোসেনেরও ঘনিষ্ঠ ৷ এর আগে জমি দখলে নাম জড়িয়েছিল তাঁর ৷ এহেন নেতার ক্লাবে পুলিশি হানা মেনে নিতে পারেননি হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা স্বপন আলি ৷ তাঁর নেতৃত্বে গতকাল রাতে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁর অনুগামী তৃণমূল কর্মীরা ৷ যদিও এনিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি ৷
বিষয়টি নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লক তৃণমূলের নেতা তথা আইএনটিটিইউসির ব্লক সভাপতি সাহেব দাস গতকাল রাতে বলেন, "শুনেছি গত পরশু পুলিশ তেঁতুলতলা জগদ্ধাত্রী ক্লাবে হানা দিয়েছিল ৷ পুজোর আগে থেকেই পুলিশ প্রশাসন বার্তা দিয়ে রেখেছিল, হরিশ্চন্দ্রপুরে জুয়া কিংবা চটুল নাচ যেন বন্ধ থাকে ৷ তবে শুধু এই ক্লাবই নয়, সেই রাতে পুলিশ আরও কয়েকটি ক্লাবে হানা দেয় ৷ সেখানে কী হয়েছিল জানি না ৷ তবে দেখলাম, থানায় বিক্ষোভ হয়েছে ৷ ক্লাবটি আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বাবলু কর্মকারের ৷ তবে একে ঠিক বিক্ষোভ বলা যায় না ৷ সেখানে আমাদের নেতৃত্ব কেউ ছিল না ৷ এনিয়ে আমি ব্লক তৃণমূল সভাপতির সঙ্গেও কথা বলেছি ৷ সেখানে কিছু লোক জড়ো হয়েছিল ৷ পরে তারা চলেও গিয়েছে ৷ এক্ষেত্রে পুলিশ নিজেদের মতো চলবে ৷ এর সঙ্গে আমাদের কিছু নেই ৷ তবে পুলিশ যে পদক্ষেপ করেছে, সেটা ভালোর জন্যই ৷"
এ নিয়ে বিজেপি নেতা তথা দলের উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক কিষান কেডিয়ার প্রতিক্রিয়া, "তৃণমূল গোটা রাজ্যে পুলিশকে দলদাস করে রেখেছে ৷ পুলিশ কোনও ভালো কাজ করতে গেলে ওরা পুলিশকে আক্রমণ করে ৷ পুলিশও জেনে রাখুক, ভালো কাজ করলে তৃণমূল কী করে ৷ এখানে তৃণমূল নেতার ক্লাবে পুলিশ জুয়ার আসর বন্ধ করায় ওরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে ৷ এটা লজ্জার বিষয় ৷ জুয়াখেলা মানেই শাসকদলের পার্টি অফিসে মোটা টাকা যাওয়া ৷ প্রশাসনের হানাদারিতে পার্টি অফিসে টাকা যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ তাতেই তাদের গায়ে জ্বালা ধরেছে ৷"