কলকাতা, 25 অক্টোবর: কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের ডাউন প্লাটফর্ম ধরে হাঁটলেই দেখা মিলবে নতুন বেশকিছু গার্ডরেলের। তবে প্লাটফর্ম বরাবর আরও খানিকটা হেঁটে গেলে দেখা যাবে সেখানে গার্ডরেল নেই। এখানেই প্রশ্ন তাহলে কি অসম্পূর্ণভাবে গার্ডরেল গুলি আত্মহত্যা রুখতে বসানো হয়েছে?
মরণফাঁদ মেট্রো-
প্রদীপের নীচেই যেমন থাকে অন্ধকার, তেমনই শহর কলকাতার পরিবহণের লাইফলাইন মেট্রোরেল অনেকের জন্য পেতে রাখে মরণফাঁদ। অল্পসময় যানজট এড়িয়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যেতে কলকাতা মেট্রোই যাত্রীদের ভরসা । আবার এক লহমায় জীবনকে শেষ করে দিতেও অনেকে এই মেট্রোকেই বেছে নেন। তাই আত্মহত্যা রুখতে কয়েকদিন আগেই নর্থ-সাউথ করিডোরের কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের ডাউন প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণ অংশের কিছুটা জায়গায় বসানো হয়েছে 6টি ছোট এবং একটি বড় গার্ডরেল। এই গার্ডরেলগুলির উচ্চতা আনুমানিক 3 থেকে 4 ফুট।
প্রশাসনের পদক্ষেপে গার্ডরেল-
জানা গিয়েছে, আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা এড়াতেই পরীক্ষামূলকভাবে এহেন পদক্ষেপ। এই ব্যবস্থা শুরু করার ফলে কতটা এড়ানো যেতে পারে আত্মহত্যার মতো অপ্রীতিকর ঘটনা? কিংবা যাত্রীদের মধ্যে কেমন সাড়া ফেলছে এই নয়া ব্যবস্থা ? এসব দেখেই পরবর্তী কালে নর্থ-সাউথ করিডরের বাকি স্টেশনগুলিতেও বসানো হতে পারে এই ধরনের গার্ডরেল।
তবে প্রশ্ন উঠেছে যে, যদি গার্ডরেল বসানোই হল, তাহলে শুধুমাত্র ডাউন প্লাটফর্মের কিছু অংশজুড়ে কেন? কেন স্টেশনের আপ ও ডাউন প্লাটফর্মজুড়ে আগাগোড়া বসানো হল না গার্ডরেল? আর এর ফলে আত্মহত্যা কতটা এড়ানো যাবে? তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কারণ যে গার্ডরেলগুলি বসানো হয়েছে তার মাঝে মাঝে কিছুটা করে ফাঁক দেওয়া হয়েছে। যিনি আত্মহননের মানসিকতা নিয়ে প্লাটফর্মে প্রবেশ করবেন তিনি অতি সহজে গার্ডরেলের ফাঁকা জায়গা থেকে বা সেটি সরিয়ে দিয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিতেই পারেন। বরং এই গার্ডরেলগুল থাকলে অন্যান্য যাত্রীদের ট্রেন থেকে ওঠা নামা করায় সমস্যা হতে পারে কিংবা তাড়াহুড়োর মধ্যে গার্ডরেলের ফাঁক দিয়ে যেতে গিয়ে জখমও হতে পারেন।
এই ধারণা 'অপরিণতমনস্ক'
এই বিষয় নিয়ে কলকাতা মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মেট্রো রেলওয়ে প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়ন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত সহসভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, আসলে এটা একটা অপরিণতমনস্ক চিন্তার ফসল। এই পদক্ষেপ করার আগে একটু চিন্তাভাবনা করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিলে ভালো হত। কারণ, গার্ডরেলে আত্মহত্যা সংক্রান্ত সমস্যার কোনও সমাধান হবে না, উল্টে বিপত্তি বাড়বে।
তিনি আরও জানান, দিনের ব্যস্ত সময় এমনিতেই কালীঘাট স্টেশনে প্রবল ভিড় থাকে। তাই ট্রেনে ওঠানামা করার সময় গার্ডরেলের জন্য অন্যান্য দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও থেকে যাবে। এছাড়া নতুন যে গার্ডরেল বসানো হয়েছে এগুলি সরবরাহের ক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়নি বলেই আশঙ্কা। সুতরাং এটা খুব বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না।
সূত্রের খবর, কয়েকদিন আগে গার্ডরেলগুলো বসানো শুরু হলেও তা অসম্পূর্ণ রেখে মাঝপথেই থমকে গিয়েছে কাজ। কারণ দেখা যাচ্ছে, ঠিক গার্ডরেলের ফাঁক বরাবর রেকের দরজা খুলছে না। গার্ডরেলের ফাঁক ও কোচের গেটের মধ্যে বেশকিছুটা দূরত্ব থেকে যাচ্ছে। এরফলে যাত্রীদের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই আপাতত সরিয়েও নেওয়া হতে পারে গার্ডরেল। সূত্রের খবর এমনই ।
প্রসঙ্গত, নর্থ-সাউথ করিডোরে 8 কামরার মেট্রো চলাচল করে। সেক্ষেত্রে মাপ মতো গার্ডরেল বসালে সমস্যার সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে, আজ থেকে 40 বছর আগে পুরোনো পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছিল মেন লাইনের প্লাটফর্মগুলি । তাই সেখানে প্লাটফর্ম স্ক্রিন ডোর লাগানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে।