মধ্যমগ্রাম, 20 অক্টোবর: ফের স্বমহিমায় সাংসদ পার্থ ভৌমিক। তবে,এবার নিজের দলের নেতা,কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে নয়!বিরোধী সিপিএমকে তিনি আক্রমণ করেছেন 'কালকেউটে'-র জাত বলে। শুধু তাই নয়, সুযোগ পেলেই মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তাঁর 'জাত' চিনিয়ে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক।
স্বভাবতই শাসকদলের একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধির এই মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বিশেষ করে যেখানে রাজ্যে ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন রয়েছে। সেখানে এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য নির্বাচনী বিধিভঙ্গের সামিল বলেই মনে করছেন লাল শিবিরের নেতারা। এ নিয়ে পাল্টা পার্থ ভৌমিককে জবাব দিতেও দেরি করেননি তাঁরা। আরজি কর-কাণ্ডে লাগাতার আন্দোলনের জেরে ভয় পেয়েই পার্থ ভৌমিকের মতো নেতারা এই ধরনের মন্তব্য করে বাঁচার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন সিপিএমের জেলা নেতা আহমেদ আলি খান।
আগামী 13 নভেম্বর উত্তর 24 পরগনার যে দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন রয়েছে, তার মধ্যে একটি আসন হল হাড়োয়া। সেই হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কেমিয়া খামারপাড়া অঞ্চলে শনিবার সন্ধ্যায় বিজয়া সম্মেলনীর আয়োজন করা হয়েছিল তৃণমূলের তরফে। নামে বিজয়া সম্মেলনী হলেও কার্যত তা হয়ে উঠেছিল শাসক শিবিরের নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ! তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিক, রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ-সহ শাসকদলের প্রথম সারির প্রায় সমস্ত নেতাই এদিন যোগ দিয়েছিলেন বিজয়া সম্মেলনীর এই অনুষ্ঠানে। আরজি কর-কাণ্ডের আবহে এই উপনির্বাচন হতে চলেছে।ফলে, প্রাক্তন সেচমন্ত্রী তথা সাংসদ পার্থ ভৌমিকের বক্তব্যে ঘুরেফিরে উঠে এসেছে আরজি কর প্রসঙ্গ।
আরজি কর-কাণ্ডে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের আন্দোলনের প্রতি সিপিএমের সহমর্মিতা জানানো অথবা নাগরিক সমাজের মিছিলে সিপিএমের সক্রিয়তা। কোনওটাই এদিন ভালোভাবে নেননি ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ। বরং, এনিয়ে লাল ঝান্ডা শিবিরকে কটাক্ষ করেছেন পার্থ ভৌমিক। আর তা করতে গিয়ে 'কালকেউটে'-র সঙ্গে তুলনা করেছেন সিপিএমকে। তৃণমূল সাংসদ বলেন, "আরজি করে নির্যাতিতা মেয়েটির জন্য এখন চোখের জল ফেলছে সিপিএম। আহা আমার বোনটার কী হল! তাই, প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে বলতে চাই, এই অঞ্চলে এখনও মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির অনেক হার্মাদ বসবাস করছেন। উপায় না দেখে তাঁরা হয়তো ভদ্র ব্যবহার করছে। কিন্তু, সময় এলেই সিপিএম তার নিজের জায়গায় ফিরে যাবে। সিপিএম একটা কালকেউটের জাত। ওঁদের একদম বিশ্বাস করবেন না । সময় এলেই ওঁদের আসল চেহারা দেখতে পাবেন ।"
এদিকে, আরজি কর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা যখন সমালোচিত হচ্ছে বিভিন্ন মহলে, তখন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন তারই দলের এই সাংসদ। পার্থ'র কথায়, "ভারতবর্ষের কোনও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের রাজ্যে ঘটে যাওয়া নির্যাতিতার সুবিচার চেয়ে পথে নেমেছেন ? কেউ দেখাতে পারবেন না। অথচ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিছিল করে অপরাধীর ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছেন। আমরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গলা ফাটিয়ে বলতে চাই, দোষীদের ফাঁসি হোক। নির্যাতিতার জন্য আজকে আমাদের যেমন চোখের জল পড়ছে, ঠিক তেমনই চোখের জল পড়েছিল যেদিন অনিতা দেওয়ানকে ধর্ষণ করে খুন করেছিল সিপিএমের গুন্ডারা। সেদিন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, 'এরকম ঘটনা তো ঘটেই থাকে।' এরকম আরও কত ঘটনা ঘটেছিল বাম আমলে। সেই সময় কিন্তু অপরাধীরা শাস্তি পায়নি। সে সব কথা ভুলে গিয়েছে সিপিএম।"
বিরোধী সিপিএমকে নিশানা করার পাশাপাশি এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিক। এই ইস্যুতে রীতিমতো জুনিয়র ডাক্তারদের আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, সিপিএমকে আক্রমণের 24 ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিককে পাল্টা জবাব দিয়েছেন লাল শিবিরের জেলা নেতা আহমেদ আলি খান। তিনি বলেন, "এই ধরনের কথাবার্তা একসময় মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছ থেকে শোনা যেত। তিনি দলীয় নেতা, কর্মীদের নিদান দিয়ে বলতেন কেউটে সাপ সিপিএমের কেউ ঘরে ঢুকলে তাঁদের লাঠিপেটা করে মেরে ফেলবেন। সাংসদ পার্থ ভৌমিকও এখন একই কথা বলছেন। তৃণমূল দলে ভদ্রলোকের চেয়ে অভদ্র লোকের সংখ্যাই বেশি। তাই এঁদের নিয়ে যত কম কথা বলা যায়, ততই ভালো। তবে,এটুকু বলব আরজি কর-কাণ্ড থেকে রেহাই পাবেন না পার্থ বাবুরা ।"