বসিরহাট, 4 জানুয়ারি: আল-আমিন মিশন থেকে নিখোঁজ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আব্বাসউদ্দিন মণ্ডল! এই ঘটনায় দুই শিক্ষকের অত্যাচারকেই দায়ী করেছে পরিবার ৷ পাশাপাশি নিখোঁজ হওয়ার আগে ছাত্রটির লিখে যাওয়া চারটি চিঠি ঘিরেও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পরিবারের দাবি চারটি চিঠিতে নিজের উপর হওয়া অত্যাচারের কথা সবিস্তারে জানিয়েছে সে। অন্যদিকে, আল-আমিন মিশন কর্তৃপক্ষের দাবি, চিঠি পাওয়া গিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেখানে অত্যাচারের কথা কিছু বলা নেই ৷
জানা গিয়েছে, গত 6 ডিসেম্বর ভোরে হাওড়ার আল আমিন মিশন থেকে বেরিয় যায় আব্বাসউদ্দিন ৷ সিসিটিভিতে সেই ছবি ধরাও পড়েছে ৷ এরপর প্রায় এক মাস কেটে গেলেও তাঁর খোঁজ পায়নি পরিবার ৷ এই পরিস্থিতিতে তার পরিবার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলে হাওড়ার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছে ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, আব্বাসউদ্দিনের বাড়ি উত্তর 24 পরগনার মাটিয়া থানার নলডি গ্রামে ৷ হাওড়ার আল আমিন মিশন থেকে চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার ৷ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে আব্বাসউদ্দিন হাওড়ার আল আমিন মিশনের হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করছিল ৷
গত 6 ডিসেম্বর ভোরে সে নিখোঁজ হয়ে যায় ৷ তারপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ ছেলের সন্ধান পেতে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন আব্বাসউদ্দিনের বাবা-মা ৷ তারপরও কোনও সন্ধান মেলেনি আব্বাসউদ্দিনের ৷ এই ঘটনার পর 21 ডিসেম্বর ওই আল আমিন মিশনের হস্টেল থেকে আরও দুই ছাত্র নিখোঁজ হয়ে যায় ৷ যদিও পর দিন কলকাতার এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশন থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ৷ কিন্তু আব্বাসের খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ ঘটনার তদন্ত নেমে পুলিশ হস্টেলে আব্বাসের হাতে লেখা চারটি চিঠি উদ্ধার করেছে ৷ তাতে ওই ছাত্রের উপর দুই শিক্ষকের নির্যাতন চালানোর কথা লেখা রয়েছে বলে দাবি পরিবারের ৷
এই বিষয়ে আব্বাসের বাবা কুতুবউদ্দিন মণ্ডল বলেন, "আমরা জানতে পেয়েছি, মিশনের দুই শিক্ষক ছেলের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন ৷ শুধু তাই নয়, দিনের পর দিন আমার ছেলের উপর র্যাগিং করা হয়েছে ৷ ছেলের খোঁজে হাওড়া জেলার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছি আমরা ৷ ছেলের খোঁজ না পেলে আমরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হব ৷"
তিনি আরও বলেন, "নিখোঁজ হওয়ার আগে আমার ছেলে চারটি চিঠি লিখেছিল ৷ সেখানে পরিষ্কার সে ওই দুই শিক্ষকের নামে অভিযোগ করেছে ৷ সিসি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে আমার ছেলে 6 ডিসেম্বর ভোরে মিশন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ৷ পুলিশ ও মিশন কর্তৃপক্ষ কী করছে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না আমরা ৷"
নিখোঁজ ছাত্রের মা আমিনা বিবি বলেন, "ছেলেকে খুঁজে দিক কর্তৃপক্ষ ৷ ছেলেকে না পেলে আমরা বাঁচব না ৷ আমরা নিশ্চিত, হস্টেলে আমার ছেলের উপর নির্যাতন চালানো হত ৷" অন্যদিকে, ছাত্রের উপর শিক্ষকদের নির্যাতনের কথা মানতে চায়নি আল আমিন মিশন কর্তৃপক্ষ ৷ তাঁদের বক্তব্য, নিখোঁজ ছাত্রের চিঠি উদ্ধার হয়েছে ঠিকই ৷ কিন্তু সেখানে আব্বাসের উপর শিক্ষকের নির্যাতনের কথা উল্লেখ নেই ৷ এই ধরনের অভিযোগ মিথ্যা ৷ ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তারাও চিন্তিত ৷ তারাও চায়, ওই ছাত্র দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরে আসুক ৷