কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর: আরজি কর মামলায় মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে আবারও একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হলে রাজ্য সরকারকে । হাসপাতালের নিরাপত্তা থেকে অস্থায়ী নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়োগ নিয়ে উঠল প্রশ্ন ৷ আর এই ইস্যুতেই তৃণমূল এবং কলকাতা পুলিশকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করল রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ৷
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে একাধিক বিষয়ে মুখ খুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য । হাসপাতালের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে রাজ্যের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, "বিভিন্ন হাসপাতালের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে আরও 15 দিন রাজ্য সরকার সময় চেয়েছে । এতদিন পরেও আরও 15 দিন । এটা দীর্ঘ সময় । এর মধ্যে নতুন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় কি রাজ্য সরকার নেবে ? আজকের পর্যবেক্ষণে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রতিটি পদক্ষেপে কলকাতা পুলিশ এবং তার একাধিক পদাধিকারীরা তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছেন । যা যথেষ্ট দুঃখজনক এবং ভয়ংকর । এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে আজকের পর্যবেক্ষণে ।"
প্রদীপ ভট্টাচার্য আরও বলেন, "সিবিআই যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, বিচলিত হওয়ার মতো । এ কারণেই তদন্তে প্রকৃত দোষী এবং আরও অন্যান্য যারা জড়িত তাদের খুঁজে বার করতে সিবিআইকে আরও বেশি সময় দিতে উৎসাহী সুপ্রিম কোর্ট । অর্থাৎ গোটা ঘটনা এবং তথ্য প্রমাণ লোপাটের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভূমিকা আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ছে । সার্বিকভাবে রাজ্যের যে ভূমিকা এই ঘটনা নিয়ে, তা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় যথেষ্ট ভয়ঙ্কর এবং নিন্দাজনক । সার্বিকভাবে দেশের কাছে বাংলার সম্মান কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছচ্ছে তা রাজ্যের বর্তমান শাসকের ভাবা উচিত ।"
সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য চিকিৎসক নেতা রামচন্দ্র ডোম বলেন, "প্রথম থেকেই রাজ্য সরকার, কলকাতা পুলিশ গোটা ঘটনাকে গুরুত্বহীন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । যাতে সহজে ধামাচাপা দেওয়া যায় । কিন্তু লাখো লাখো মানুষের প্রতিবাদ এবং দাবি তা করতে দেয়নি । আজকে আদালতের পর্যবেক্ষণেও স্পষ্ট সাধারণ মানুষের যে দাবি তা নিছক নয় । সকলেই বুঝতে পারছিল প্রথম থেকেই তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে ।"
তাঁর বক্তব্য, "কলকাতা পুলিশ কমিশনার ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছেন । তাই সুপ্রিম কোর্টের প্রতি ভরসা রেখে আমাদের আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে হবে যতক্ষণ না দোষীরা শাস্তি পায় । তথ্য প্রমাণ লোপাট থেকে শুরু করে ঘটনার মাস্টারমাইন্ড এবং আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে । আদালত সিবিআইকে সময় দিতে চাইছে । সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই ৷ কিন্তু সিবিআইয়ের পূর্বের ইতিহাসের দিকে খেয়াল রেখে লক্ষ লক্ষ মানুষকে রাস্তায় নেমে এসে যে প্রতিবাদ আন্দোলন চালাচ্ছে, তা বজায় রাখতে হবে যতক্ষণ না সঠিক বিচার হচ্ছে ।"
আজ শুনানি শুরু হওয়ার আগেই সুপ্রিম কোর্টের শুনানি পর্ব যাতে লাইভ স্ট্রিমিং করা না-হয়, সেই জন্য আবেদন করেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবাল ৷ যদিও তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় । এই বিষয়ে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, "সুপ্রিম কোর্টে লাইভ স্ট্রিমিং হবে কি না সেটা তো আর কপিল সিবাল ঠিক করতে পারেন না । সেটা বিচারপতি ঠিক করবেন । এখন সমস্ত শুনানিতেই লাইভ স্ট্রিমিং হয়ে থাকে । আজকের সুপ্রিম কোর্টের শুনানি ইতিবাচক ছিল ৷ তদন্তও ঠিক পথেই এগোচ্ছে ।"
অন্যদিকে, এই বিষয়ে বিজেপির আইনি সেলের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি জানান, "সিবিআইয়ের জমা দেওয়া স্টেটাস রিপোর্ট দেখে আজ প্রধান বিচারপতি হতবাক হয়ে যান । যদিও আজকের পুরো রিপোর্টটা সর্বসম্মুখে পড়া হয়নি ৷ কারণ এখানে অনেকের নাম রয়েছে, যেগুলো প্রকাশ হয়ে গেলে তদন্তে সমস্যা হতে পারে । আগের বারের মতো এবারেও সিসিটিভি ফুটেজ জমা দেওয়া নিয়ে বিতর্কের উপশম হল না । রাজ্য সরকারের রাত্তিরের সাথী বিজ্ঞপ্তি নিয়েও ভর্ৎসনা করা হয় রাজ্য সরকারকে ।"
বিজেপি নেতা তথা কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেন, "লাইভ স্ট্রিমিংয়ের যে অসুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রান্ত, সেই একই অসুখে আক্রান্ত কপিল সিবালও । বিভিন্ন মানুষও এই লাইভ স্ট্রিমিং বিভিন্ন মাধ্যমে দিচ্ছে এবং এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে কীভাবে একটা সরকার আপাদমস্ত উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে ।"