পুরশুড়া, 8 এপ্রিল: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে অন্যতম চর্চিত বিষয় ৷ নিয়োগে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে লাগাতার আন্দোলনও চলছে ৷ এই নিয়ে সরগরম ভোটের ময়দানও ৷ ঠিক সেই পরিস্থিতিতে হুগলির পুরশুড়ার চিলাডাঙ্গী রবীন্দ্র বিদ্যাবীথি স্কুলের একটি বিজ্ঞপ্তি বিতর্কের ঝড় তুলেছে ৷ যা নিয়ে সোশাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সর্বত্র সমালোচনা শুরু হয়েছে ৷ এই অবস্থার জন্য বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আরও একবার সরব হয়েছে বিরোধীরা ৷
উল্লেখ্য, চিলাডাঙ্গী রবীন্দ্র বিদ্যাবীথি স্কুলে পদার্থবিদ্যার একজন অতিথি শিক্ষক নেওয়া হবে ৷ গত 28 মার্চ 2024 ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় ৷ সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে চলতি মাসের 5 তারিখ এক ওয়াক-ইন ইন্টারভিউ নেওয়া হবে ৷ সেখানে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ও বিএড ডিগ্রি প্রাপ্তরা হাজির হয়ে ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পাবেন ৷ এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল ৷ কিন্তু পড়ানোর বদলে যে টাকা দেওয়া হবে বলা হয়েছে, তা নিয়েই যাবতীয় বিতর্ক তৈরি হয়েছে ৷
ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যিনি অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হবেন, তাঁকে এক বছরের চুক্তিতে নেওয়া হবে ৷ মাসে দেওয়া হবে তিন হাজার টাকা ৷ অর্থাৎ দৈনিক একশো টাকা ৷ আর এই অর্থ যে সরকারি নিয়ম মেনেই নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটাও স্পষ্ট করে দেওয়া রয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে ৷
প্রশ্ন উঠেছে, পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পাশ করে এবং বিএড ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও কেন স্থায়ী শিক্ষকের চাকরি মিলবে না ? কেন মাত্র তিনহাজার টাকায় চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করতে হবে ? রাজ্যে একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরিও এর থেকে বেশি ৷ তাহলে এত কম টাকা কেন দেওয়া হবে ?
তবে এই নিয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি দিলীপ জানা বলেন, ‘‘যে বিজ্ঞপ্তি ভাইরাল হয়েছে । যারা মন্তব্য করছেন একজন শিক্ষকের 3 হাজার টাকা মাইনে নিয়ে । মানুষ ভুল বুঝছেন । এই শিক্ষকদের চুক্তির ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে ৷ যাঁরা মাসে 8 থেকে 10 দিন পড়াবেন ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘স্কুলের স্বার্থে পার্শ্ব শিক্ষক পদে নিয়োগের আবেদন জানানো হয়েছে । জোর জবরদস্তি করা হয়নি । ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে জন্য এই চিন্তাভাবনা । এমনিতেই শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ । তার উপর স্কুলের কথা ভেবে যদি এই ব্যবস্থা চালু না হয়, তাহলে ক্লাস ও স্কুল বন্ধ করে দিতে হবে ।’’
স্কুল সূত্রে খবর, নির্ধারিত দিনে ইন্টারভিউ হয়েছে ৷ অতিথি শিক্ষকের কাজ করার জন্য স্কুলেরই পাশের গ্রামের দু’জন এসেছিলেন ৷ তাঁদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে কে এই চাকরি পাবেন, সেটা এখনও স্কুল কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত করেনি ৷ এই মুহূর্তে ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা 1150 ৷ মোট 18 জন শিক্ষক । তাঁদের মধ্যে তিনজন শর্তসাপেক্ষে রয়েছেন ৷ পদার্থবিদ্যার কোনও শিক্ষক নেই ৷ সেই কারণেই এই বিজ্ঞপ্তি ৷
দিলীপ জানা বলেন, ‘‘শর্তসাপেক্ষে আরও তিনজন শিক্ষক রয়েছেন স্কুলে । মূলত উৎসশ্রী চালু হওয়ার পর থেকে এই শিক্ষক সমস্যা বেড়েছে । আগামিদিনে যদি শিক্ষক নিয়োগ হয়, তাহলে এই টাকায় আমদের শিক্ষক নিয়োগ করার প্রয়োজন হবে না । এটা শুধু আমাদের স্কুল নয়, অন্যান্য স্কুলেও 2 হাজার থেকে 3 হাজার শিক্ষক রয়েছেন ।’’
সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারের উৎসশ্রী প্রকল্পকে দায়ী করেছেন বাম শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র সম্পাদক প্রিয়রঞ্জন ঘটক ৷ তিনি বলেন, ‘‘উৎসশ্ৰীর মাধ্যমে শিক্ষকরা বাড়ির কাছে বদলি হয়েছে । এরপর থেকেই শিক্ষকরা গ্রাম থেকে শহর চলে এসেছেন । এতে গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাব দেখা দিয়েছে । তার উপর শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাজ্যে । তাতে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে স্কুল চালানো শক্ত হয়ে গিয়েছে । অন্য বিকল্প না থাকার কারণে বাধ্য হয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলেমেয়েদের সাহায্য নিচ্ছে স্কুলগুলি ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘স্কুল যখন একজন শিক্ষকের বেতন 3000 হাজার টাকা বলে, তাতে শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যতাকেই প্রকাশ করে । কারণ, ওই একই যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক রয়েছেন, যাঁরা সরকারি স্কুলে চাকরি করেন । যাঁদের নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো আছে । আমাদের দেশের ও রাজ্যের সরকার এইরকমই পরিস্থিতি চাইছেন । যেমনভাবেই হোক ছেলেমেয়েদের অল্প বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করা । এটা এক ধরনের প্রহসন চাকরিপ্রার্থীদের কাছে । আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করে এসেছি এবং এখনও করছি ।’’
আরও পড়ুন: