ভাটপাড়া, 16 নভেম্বর: ভাটপাড়ায় তৃণমূল নেতা অশোক সাউ খুনের ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম সুজল পাসোয়ান। শনিবার ভোররাতে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। শিবদাসপুর থানার পুলিশ সুজলকে ধরে তুলে দেয় জগদ্দল থানার পুলিশের হাতে। ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিতে শনিবার দুপুরে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তাকে পেশ করেছে পুলিশ।
তৃণমূল নেতা খুনে গত বৃহস্পতিবার কাউসার আলি নামে এক দুষ্কৃতীকে প্রথমে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাকে জেরা করে ওই খুনে সুজলের জড়িত থাকার কথা পুলিশ জানতে পারে। এরপরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও আদালতে ঢোকার মুখে ধৃত সুজল দাবি করেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে ৷
গত বুধবার সকালে ভাটপাড়ার 4 নম্বর বাসস্ট্যান্ড চত্বরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন তৃণমূল নেতা অশোক সাউ। তিনি 12 নম্বর ওয়ার্ডের দলের প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন। অশোকবাবু ওই দোকানে চা খাওয়ার জন্য বসেছিলেন। সেই সময় দুষ্কৃতীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় আততায়ীরা। দুষ্কৃতীদের গুলি পেটে লাগে তৃণমূল নেতা অশোক সাউয়ের। রক্তাক্ত অবস্থায় দোকানের মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন তিনি।
তারপর দুষ্কৃতীরা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এলোপাথাড়ি বোমাবাজি করতে করতে হেঁটে চম্পট দেয় ঘটনাস্থল থেকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তড়িঘড়ি অশোককে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া। ঘটনার তদন্তে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট সিট গঠন করে। সিটের দায়িত্বে রয়েছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাস।
সিটের আধিকারিকরা ঘটনার তদন্ত নেমে জানতে পারেন, 2020 সালে ভাটপাড়ার পালঘাট রোডে আকাশ সাউ নামে এক সমাজবিরোধীকে পিটিয়ে মারা হয়। সে ছিল মাদক পাচারের চাঁই। তার বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি ও রাহাজানি-সহ আরও বেশকিছু অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন তৃণমূল নেতা অশোক সাউও। অভিযোগ, দাদার খুনের বদলা নিতে নিহত আকাশের ভাই সুজল সাউ 2023 সালে অশোককে একবার খুনের চেষ্টাও করেন।
যদিও বরাত জোরে সেবার বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুজল অশোকের পিছু ছাড়েনি। বুধবার অশোক চায়ের দোকানে বসেছিলেন। দুষ্কৃতীরা সেখানে গিয়ে তাঁকে গুলি করে খুন করে। নিহত অশোকের পরিবারের পক্ষ থেকে জগদ্দল থানায় সুজল-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। ঘটনার তদন্ত নেমে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ কাউসার আলি নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
ধৃতকে দশ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় ব্যারাকপুর মহকুমা আদালত। কাউসারকে জেরা করে পুলিশ সন্ধান পায় খুনের ঘটনায় জড়িত সুজল পাসোয়ানের নামে এক ব্যক্তির। তবে, তিনদিন কেটে যাওয়ার পরও তৃণমূল নেতা খুনে মূল অভিযুক্ত সুজল সাউ এখনও অধরা। আর তা নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ নিহত তৃণমূল নেতার পরিবার।