কলকাতা, 9 নভেম্বর: বর্ষা গেলেই অক্টোবর, নভেম্বর মাস কার্যত শহরবাসীর ঘুম ছুটত মশাবাহিত রোগের আতঙ্কে ৷ তবে, এবছর ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার ভরা মরশুমে আক্রান্তের সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে অনেকটাই কমেছে ৷ রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত যে ছবি উঠে এসেছে মশাবাহিত রোগের, তা বিস্ময়কর ঘটনা ৷
কলকাতা পুরনিগমের তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা গতবছরের তুলনায় 93 শতাংশ কম ৷ ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা 44 শতাংশ কম ৷ এই আশ্চর্যজনক পতনের পিছনে একাধিক কারণ দেখছেন পতঙ্গ বিষেশজ্ঞ এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীরা ৷
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত 30 অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা 17 হাজার 63 জন ৷ যেখানে মুর্শিদাবাদ আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে ৷ ওই জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা 4,321 জন ৷ সেখানে কলকাতা সপ্তম স্থানে ৷ কলকাতায় 1 জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা 865 ৷
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, 2023 সালে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত মহানগরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 12 হাজার 334 জন ৷ এ বছর সেই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা 93 শতাংশ কমে হয়েছে 865 জন ৷ গত বছর ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত এই সময় পর্যন্ত ছিল 9 হাজার 309 জন ৷ চলতি বছর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ম্যালেরিয়া 44 শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে 5 হাজার 187 জন ৷ এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট চোখে পড়ার মতো ৷
কীভাবে এতটা কমে গেল ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ?
পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ড. দেবাশিস বিশ্বাস বলছেন, "শুধু কলকাতায় নয় ৷ একাধিক রাজ্যে এই ছবি দেখা গিয়েছে ৷ ভিন রাজ্যেও কমেছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৷" তাঁর কথায়, "কোনও নির্দিষ্ট একটি বা দু’টি কারণ বলা যাবে না ৷ এটা নিয়ে এখনও বিস্তর নাড়াঘাটা চলছে ৷ আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে পারে, হতে পারে সচেতনতা বৃদ্ধি ৷ এমনকি পুরনিগমের তৎপর মনোভাব ৷"
পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, "আবহাওয়ার পরিবর্তন বড় কারণ হতে পারে ৷ কারণ, যে সময়ে বর্ষা শেষে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত হওয়ার কথা, সেই সময়ে বর্ষার দেখা মেলেনি ৷ কর্পোরেশনকে বেশ খানিকটা তৎপরতা দেখাচ্ছে ৷ তাদের নিকাশি উন্নত, ফলে একদিনে জল নেমে যাচ্ছে, বা কিছু পকেটে দুই দিনের বেশি জল থাকছে না ৷ দীর্ঘ 7 দিন জল জমছে না ৷ ফলে দীর্ঘ দিন ধরে থাকা জমা জলে মশা যে ডিম পারবে, সবসময় সেই আদর্শ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না ৷"
তিনি আরও বলেন, "এখনই সন্তুষ্ট, বা একেবারে প্রকোপ কমে গেল বলে খুশি হওয়ার কারণ নেই ৷ মানুষের সচেতনতা দরকার ৷ যেখানে প্লাস্টিক, টায়ার, আবর্জনা, ভাঙা জিনিসপত্র এসব যথেচ্ছ ফেলা চলে, সেখানেই জমা জলে মশা ডিম পাড়ে ৷ ফলে সচেতনতা অনেক বেশি দরকার এক্ষেত্রে ৷ তাহলে হয়তো যে সূচক নিম্নমুখী রয়েছে, তা উঠতে পারবে না ৷"
ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে 30 জুন পর্যন্ত অধিকাংশ রাজ্যে কমেছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৷ অরুণাচল প্রদেশ, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশিরভাগ রাজ্যেই 2023 সালের তুলনায় ডেঙ্গি আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম ৷
পশ্চিমবঙ্গ 2023 সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যে তথ্য দিয়েছে, তাতে 30 হাজার 683 জন আক্রান্ত হয়েছিলেন ৷ মৃত্যু হয়েছিল 4 জনের ৷ 2024 সালে পশ্চিমবঙ্গ ফেব্রুয়ারি মাসের 21 তারিখ পর্যন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছে ৷ তাতে বলা হয়েছে 441 জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছে ৷