জলপাইগুড়ি, 13 অগস্ট: জরুরি বিভাগ ও আউটডোর সচল রেখে বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের সঙ্গে আন্দোলনে সামিল হলেন জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি ও চিকিৎসকরা ৷ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখালেন চিকিৎসক পড়ুয়ারা ৷ এদিন চিকিৎসক-পড়ুয়ারা আউটডোর বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে তা করতে দেয়নি ৷
মঙ্গলবার সকাল থেকে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ও আউটডোরের চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিকই ছিল ৷ কিন্তু হঠাৎ করে আউটডোরের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চিকিৎসক পড়ুয়ারা আন্দোলন শুরু করতে চাইলে ছুটে আসেন সহকারী মেডিকেল সুপার চিকিৎসক সুরজিৎ সেন ও চিকিৎসক রাহুল ভৌমিক ৷ তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, কোনও ভাবে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করে আন্দোলন করা যাবে না ৷ আন্দোলন তাঁরা করতেই পারেন, তবে রোগীদের কোনও সমস্যা ফেলা যাবে না ৷ এরপর চিকিৎসক পড়ুয়া গেটের সামনে বসে পড়েন ৷
জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি বা এমএসভিপি চিকিৎসক কল্যাণ খাঁঁ বলেন, "আমরা ছাত্রছাত্রীদের পাশেই আছি ৷ তবে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা যাতে কোনও ভাবেই সমস্যায় না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে ৷ তাঁদের দাবি যুক্তিসঙ্গত ৷ তাঁদের পাশে আমরাও আছি ৷" এদিকে ডাক্তার সুদীপন মিত্র বলেন, "আমরা আউটডোরের পরিষেবা স্বাভাবিক রেখেছি ৷ কোনও ভাবে আউটডোর অচল করা যাবে না ৷"
এদিকে চিকিৎসক স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, "আমরা কড়া শাস্তি চাই। কোনও ভাবেই এটা কাম্য নয় ৷ যাঁরা আত্মহত্যার কথা বলে চালাতে চেয়েছিল, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক ৷ আমরা চাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত ৷"
এদিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল গোটা হাসপাতাল চত্বর ও হাসপাতালের বাইরেও এলাকা পরিক্রমা করে ৷ মিছিলে পা মেলান হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক, অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা, ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত-সহ সব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহ হাউজ স্টাফ, ইনটার্ন, জুনিয়র ডাক্তাররা ৷
এদিনের মিছিল থেকে দোষীদের দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো, মেডিকেল ফাঁড়িকে পুর্ণাঙ্গ থানায় উন্নিত করা সহ একাধিক দাবি জানানো হয়। যদিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগ সহ জরুরি বিভাগে সিনিয়র ডাক্তাররা এদিন পরিষেবা সামলান। তবে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিষেবায় খানিকটা ব্যাঘাত ঘটে।
এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ডক্টর সঞ্জয় মল্লিক বলেন, "আমরা বাধ্য হলাম প্রতিবাদ করতে ৷ নিরাপত্তা বাড়ানো ৷ চিকিৎসক-সহ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ৷" ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, "জরুরি বিভাগ চলছে ৷ সিনিয়র ডাক্তাররা বহির্বিভাগ চালাচ্ছেন ৷ জুনিয়র ডাক্তাররা এখনও কাজে যোগ দেননি ৷ এভাবে যতটুকু পরিষেবা দেওয়া যায়, আমরা দিচ্ছি ৷ ব্যাঘাত ঘটছে পরিষেবায় ৷"
আরজিকর কান্ডে এবার সরব হল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ ৷ এদিন আইএমএ-র শিলিগুড়ি শাখার তরফে শহরের রাজপথে ওই ঘটনার প্রতিবাদ মিছিল আয়োজিত হয় ৷ এদিন মিছিলটি শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে হিলকার্ট রোড, মহাত্মা গান্ধি চক হয়ে সেভক রোড হয়ে, বিধানরোড হয়ে বাঘাযতীন পার্কে গিয়ে শেষ হয় ৷ মিছিলে পা মেলান সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরা ৷
এদিন মিছিল থেকে আরজিকর ঘটনায় তদন্তভার দ্রুত সিবিআইকে হস্তান্তর করা, ঘটনায় যদি আরও কেউ জড়িত থাকে, তাঁদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় ৷ পাশাপাশি সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক ও কর্মীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মহিলা কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকার দাবি জানানো হয় ৷
আইএমএ-র শিলিগুড়ি শাখার সম্পাদক চিকিৎসক শঙখ সেন বলেন, "মহিলা চিকিৎসক ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে ৷ এভাবে এক মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁরই কর্মক্ষেত্রে এই ঘৃণ্য ঘটনা ঘটবে, তা ভাবা যায় না ৷ সেজন্য আগামীতে আইএমএ শিলিগুড়ি শাখা, আইএমএ গোটা রাজ্য ও দেশের সঙ্গে মিলে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করবে ৷"