বোলপুর, 6 জুলাই: "ভারতবর্ষকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে গড়ার প্রচেষ্টা কিছুটা আটকানো গিয়েছে", লোকসভা নির্বাচনে ফলাফল নিয়ে এমনই মন্তব্য অমর্ত্য সেনের ৷ ভারতীয় ন্যায় সংহিতা নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ ৷ পাশাপাশি নতুন ভারতীয় ন্যায় সংহিতা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি ।
এদিন তিনি বলেন, "সংবিধান বদল করতে যতটা আলোচনার প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি ৷ মণিপুরের যা সমস্যা, মধ্যপ্রদেশের সেই সমস্যা নিশ্চই নয় ৷" প্রতীচী ট্রাস্টের (ইন্ডিয়া) আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, "শিক্ষায় জোর না-দিলে বেকার সমস্যার সমাধান করা যাবে না ৷ আর আক্ষেপ এই যে সেটা দেওয়া হচ্ছে না ৷"
প্রায় প্রতি বছরের মতো এবারও বোলপুরের একটি বেসরকারি হোটেলের সভাকক্ষে প্রতীচী ট্রাস্ট (ইন্ডিয়া)-র পক্ষ থেকে 'কেন স্কুলে যাই: সহযোগিতার সহজ পাঠ' শীর্ষক আলোচনা আয়োজন করা হয় ৷ এই আলোচনায় অংশ নেন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এবং অধ্যাপক জঁ দ্রেজ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পড়ুয়ারা ৷
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা লাগু নিয়ে তিনি বলেন, "একটা সংবিধান বদলাতে গেলে যে আলোচনা দরকার, সেগুলো হয়নি । এটা আক্ষেপ ৷ আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল ৷ তার প্রমাণ তো দেখিনি ৷ মণিপুরে সমস্যা আর মধ্যপ্রদেশে সমস্যা নিশ্চই এক নয় ৷ এগুলো নিয়ে আমাদের অনেক আলোচনা করা উচিত ছিল। ক্ষমতার বলে চট করে পাশ করে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু এটাকে খুব শুভ পরিবর্তন বলে মনে করি না ৷" এভাবেই এদিনের আলোচনায় কেন্দ্রীয় সরকারকে বিভিন্ন ভাবে কটাক্ষ ও সমালোচনা করেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন ৷
ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "স্কুলে পর্যন্ত আলোচনা পৌঁছে গিয়েছিল যে কীভাবে ভারতবর্ষকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানো যায় ৷ কিন্তু, আমাদের জানা দরকার হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে পার্থক্য শিশুদের মধ্যে একেবারেই নেই ৷ তাই আমাদের দেশে লোকসভায় যে নির্বাচন হল, তাতে ভারতবর্ষকে হিন্দুরাষ্ট্র করার যে প্রচেষ্টা চলছিল তা খানিকটা হলেও আটকানো গেল ৷ পুরোটা আটকানো গিয়েছে তা অবশ্য বলা যাবে না। ওরা (বিজেপি) এটা মানতে পারল না যে যেখানে বড় মন্দির (অযোধ্যার রামমন্দির) তৈরি হল সেখানে একজন সেকুলার দলের প্রার্থী, হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে চায় এমন প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছে ! দেখুন, ভারতবর্ষ একেবারেই ধর্মনিরপেক্ষ দেশ নয়, তবে বহু ধর্মের দেশ তো বটেই ৷" এর পাশাপাশি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও আক্ষেপও শোনা যায় প্রবীণ অধ্যাপকের গলায়।