ভাটপাড়া, 14 জানুয়ারি: বিজেপির ডাকা বাংলা বনধের দিনে অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা প্রিয়াঙ্কু পাণ্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি-বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। চার মাস পর সেই গুলি-বোমা কাণ্ডে এনআইএ-র জালে শাসকদলের এক কর্মী। ধৃতের নাম মহম্মদ আমিন ওরফে সোনু।
মঙ্গলবার ভোরে জগদ্দলের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, ভাটপাড়ার এই ঘটনায় তৃণমূল কর্মী মহম্মদ আমিনকে আগেই নোটিশ দিয়েছিল এনআইএ। দু-তিন বার নোটিশ পাঠিয়ে তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হলেও তাতে সাড়া দেননি তিনি। এরপরই তাঁকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেন এনআইএ-র তদন্তকারীরা।
আরজি কর-কাণ্ডে গত 28 অগস্ট বিজেপির ডাকা বাংলা বনধের দিন অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা প্রিয়াঙ্কু পাণ্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি-বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। বুলেটপ্রুফ গাড়ি থাকায় সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কু। তবে, আহত হয়েছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ দু'জন। রবি সিং নামে এক বিজেপি নেতার কান ঘেঁষে গুলি ছুঁয়ে গিয়েছিল।
এই ঘটনাকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছিল ভাটপাড়া। এই ঘটনায় অর্জুন সিং সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের দিকে। তাঁর আশ্রিত দুষ্কৃতীরা প্রিয়াঙ্কুকে খুন করতেই সেদিন জগদ্দলের ঘোষপাড়া রোডে বোমা-গুলি নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ। যদিও অর্জুনের অভিযোগ সেই সময় উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা তাঁকে 'নাটকবাজ' বলে কটাক্ষ করেছিলেন সোমনাথও।
এই ঘটনায় জগদ্দল থানার পুলিশ প্রথমে তদন্ত শুরু করলেও সেই তদন্তে আস্থা ছিল না বিজেপি নেতা প্রিয়াঙ্কু পাণ্ডের। তিনি এনআইএ তদন্ত চেয়ে মামলা করেন হাইকোর্টে। হাইকোর্টের নির্দেশে অবশেষে সেই মামলার তদন্তভার যায় এনআইএ-র হাতে। ঘটনার দু'মাসের মাথায় ভাটপাড়ায় গিয়ে তদন্ত শুরু করে এনআইএ-র আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও বিজেপি নেতার গাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। এই ঘটনার তদন্ত শুরু হতেই এনআইএ-র গোয়েন্দারা জানতে পারেন, গুলি-বোমা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত মহম্মদ আমিনই। ঘটনার দিন সে-ই গুলি চালিয়েছিল প্রিয়াঙ্কু'র গাড়ি লক্ষ্য করে। ঘটনার পর থেকে আমিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।
এর আগেও আমিনকে ধরতে জগদ্দলে হানা দিয়েছিলেন এনআইএ আধিকারিকরা। তাঁর বাড়িও সেই সময় ঘিরে ফেলা হয়েছিল। যদিও গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে তখন তিনি পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছিলেন বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে। কিন্তু,এবার আর পালিয়ে যাওয়ার কোনও উপায় ছিল না তাঁর। আটঘাট বেঁধেই আমিনকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন এনআইএ আধিকারিকরা।
এদিকে, কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা মনে করছেন আমিনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করলেই এই ঘটনায় বড় কোনও মাথার হদিশ পাওয়া যেতে পারে। মিলতে পারে অর্জুন ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা প্রিয়াঙ্কু পাণ্ডেকে খুনের চেষ্টার সূত্রও। সেই কারণে ধৃত মহম্মদ আমিনকে নিজেদের হেফাজতে নিতে আইনজীবী মারফত মঙ্গলবার ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে আবেদন করতে চলেছে এনআইএ।