মালদা, 12 এপ্রিল: গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রামে হয়েছিল ঈদের জামাত ৷ একদিন পর সেই গ্রামেরই ছেলের জন্য জানাজায় (মৃতদেহের সামনে সমবেত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন) সামিল হলেন গ্রামবাসীরা ৷ এবারের ঈদ মালদার রতুয়া-1 ব্লকের কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের নরোত্তমপুর গ্রামে খুশি নয়, নিয়ে এসেছে দুঃখের বার্তা ৷ গ্রামে মা-ভাইদের পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ পালন করবেন বলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এনডিআরএফ জওয়ান 33 বছরের মহম্মদ এক্তিয়ার এলাহি ৷ চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর ৷ শুক্রবার জুম্মার নমাজের পর গ্রামে তাঁর মৃতদেহকে গান স্যালুট দিয়ে সম্মান দেখান কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তা ও কর্মীরা ৷ গ্রামেই এ দিন কবরস্থ করা হয়েছে তাঁর দেহ ৷
নরোত্তমপুর গ্রামের তরতাজা যুবক 2011 সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ৷ এক যুগের বেশি সময় বিএসএফে কাজ করার পর 2023 সালের অগস্ট মাসে যোগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রের আরেক নিরাপত্তা বাহিনী ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স বা এনডিআরএফ-এ ৷ কনস্টেবল এক্তিয়ারকে নিয়োগ করা হয়েছিল হরিণঘাটায় ৷ স্ত্রী আরমিনা ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কাঁচড়াপাড়ায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন তিনি ৷
প্রায় প্রতি ঈদেই পরিবার নিয়ে গ্রামে আসতেন এক্তিয়ার ৷ পরিবার ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে ইদ পালন করে ফিরে যেতেন কর্মস্থলে ৷ এবারও গ্রামের বাড়িতে ঈদ পালন করবেন বলে মঙ্গলবার রাতে কাঁচড়াপাড়া থেকে শিয়ালদার উদ্দেশে লোকাল ট্রেনে রওনা দেন ৷ রাতের ট্রেন ধরে তাঁদের মালদা আসার কথা ছিল ৷ কিন্তু বিধাননগর পেরিয়ে ট্রেন যখন কাঁকুড়গাছির কাছে আসে, ঠিক তখনই ভারসাম্য হারিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যান এক্তিয়ার ৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ গতকাল ঈদের দিনই মারা যান তিনি ৷
আরমিনা বলেন, “মঙ্গলবার ওর ডিউটি ছিল ৷ তাই রাতে সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম ৷ গ্রামের বাড়িতে বিধবা মায়ের সঙ্গে ঈদ পালন করার ইচ্ছে ছিল ওর ৷ শিয়ালদা থেকে রাত 11টায় মালদার ট্রেন ছিল ৷ তাই কাঁচড়াপাড়া থেকে ডাউন গেদে লোকাল ধরেছিলাম ৷ ট্রেন যখন বিধাননগর পার করে কাঁকুড়গাছির কাছে, তখন থুতু ফেলতে দরজার কাছে যায় ও ৷ তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনা ৷ ভারসাম্য না রাখতে পেরে ও ট্রেন থেকে পড়ে যায় ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সেখানকার জিআরপি কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে ওকে স্থানীয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ খবর পেয়ে ওর ডিপার্টমেন্ট থেকেও লোকজন হাসপাতালে চলে আসেন ৷ দেরি না করে ওকে দ্রুত কলকাতার একটি নামি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় ৷ সেখানে 36 ঘণ্টা লড়াইয়ের পর শেষপর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানে ও ৷ ও কলকাতা এনডিআরএফের সেকেন্ড ব্যাটেলিয়নে কর্মরত ছিল ৷’’
আরমিনার বক্তব্য, ‘‘ডিপার্টমেন্টের তরফে আমাকে সবরকম সহায়তা করা হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে আমার হাতে এক লাখ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন সিও ৷ অন্তিম সংস্কারের জন্য দেওয়া হয়েছে নগদ আট হাজার টাকা ৷ প্রথম থেকেই তাঁরা আমাকে সবরকম সহায়তা করেছেন ৷ ভবিষ্যতেও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ৷ আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ ৷”
আরও পড়ুন: