সন্দেশখালি, 23 ফেব্রুয়ারি: জাতীয় তফসিলি কমিশন, জাতীয় মহিলা কমিশন ও জাতীয় উপজাতি কমিশনের পর এবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ৷ সন্দেশখালির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার সেখানে পৌঁছে গেল কেন্দ্রীয় এই সংস্থার 6 সদস্যের প্রতিনিধি দল ৷ এই মুহূর্তে সন্দেশখালির গ্রামে গ্রামে ঘুরে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন কমিশনের সদস্যরা ৷ নারী নির্যাতনের পাশাপাশি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কেও খোঁজখবর নিচ্ছেন কমিশনের সদস্যরা ৷ পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে সন্দেশখালিতে প্রবেশ করেছেন তাঁরা ৷ আজই দিল্লি ফিরে সন্দেশখালি নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট পেশ করতে পারেন কমিশন ৷
শুক্রবার সকাল সাড়ে ন'টা নাগাদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদল ধামাখালি বাজারে এসে পৌঁছয় ৷ সেখান থেকে ফেরিঘাটে পুলিশের একটি লঞ্চে নদী পেরিয়ে ওপারে যান তাঁরা ৷ এরপর টোটোয় কমিশনের সদস্যরা প্রথমেই সন্দেশখালি থানায় গিয়ে জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন ৷ সন্দেশখালি-কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত নারী নির্যাতনের কতগুলি অভিযোগ জমা পড়েছে ? তার মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ক’টি ? অভিযোগ পেয়ে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে ? কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ? যাবতীয় তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর ৷
পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে কমিশনের সদস্যরা ফের টোটোয় চেপে গ্রামে ঢোকেন ৷ এরপর সর্দারপাড়া-সহ একাধিক গ্রামে নিয়ে মহিলা-পুরুষ সকলের সঙ্গে কথা বললেন কমিশনের সদস্যরা ৷ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখেন কমিশনের সদস্যরা ৷ অভিযোগগুলি নথিভুক্ত করা হয়েছে ৷
এর আগে গত 15 ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালিতে এসে গ্রামের নির্যাতিতা মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন জাতীয় তফসিলি কমিশনের সদস্যরা ৷ কমিশনের চেয়ারম্যান অরুণ হালদারের সামনে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ করেছিলেন গ্রামের মহিলারা ৷ হাড়হিম করা সেই সমস্ত অভিযোগ শুনে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন কমিশনের সদস্যরা ৷ এরপর দিল্লি ফিরে রাইসিনা হিলসে সন্দেশখালির ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দেন কমিশনের সদস্যরা ৷ এরপর জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের নেতৃত্বে একটি দল সন্দেশখালি পৌঁছায় ৷ সন্দেশখালি থেকেই রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা ৷
গতকাল ফের সন্দেশখালির বাস্তব পরিস্থিতি চাক্ষুস করেন জাতীয় তফসিলি উপজাতি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অনন্ত নায়েক-সহ তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল ৷ সেখানকার আদিবাসী সমাজ সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা ৷ পরে অনন্ত নায়েক জানান, জমি দখল, নারী নির্যাতন-সহ তাঁদের কাছে 23টির বেশি অভিযোগ এসেছে ৷ আর সেই অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা ৷ ফলে স্বশাসিত এই তিন জাতীয় সংস্থার পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও সেই পথে হাঁটে কিনা, এখন সেটাই দেখার বিষয় ৷
প্রসঙ্গত, এর আগে সন্দেশখালি-কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ৷ সন্দেশখালিতে যে সব অভিযোগ উঠেছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের মুখ্যসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা এবং ডিজি রাজীব কুমারকে নোটিশও পাঠানো হয়েছিল ৷ সেই নোটিশে রাজ্য প্রশাসনের দুই শীর্ষকর্তার থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব তলব করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ৷ তবে, তার আগেই সন্দেশখালি পৌঁছে গেলেন কমিশনের সদস্যরা ৷
আরও পড়ুন: