দুর্গাপুর, 30 জুলাই: রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গণপিটুনির নামে যেন সিরিজ চলছে ! ছেলেধরা সন্দেহে এবার গণপিটুনির অভিযোগ দুর্গাপুরে ৷ ফরিদপুর থানা এলাকার নবঘনপুর গ্রামে ছেলেধরা সন্দেহে এক যুবককে বেঁধে রেখে চলল বেত্রাঘাত ৷ সঙ্গে চড়, কিল, ঘুসি কিছুই বাদ গেল না ৷ আর উদ্ধার করে আনার সময়, পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে ৷ যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার উত্তাল হয়ে ওঠে দুর্গাপুরের ফরিদপুর থানার নবঘনপুর গ্রাম ৷
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে এক যুবক এলাকায় ঘুরছিলেন ৷ এলাকাবাসীর একাংশের সন্দেহ হয়, ওই যুবক ছেলেধরা ৷ তাই নিজেরাই প্রথমে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন ৷ অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তা বলায়, প্রথমে চড়-থাপ্পর মারা হয় বলে অভিযোগ ৷ যা ধীরে ধীরে কিল, ঘুসিতে পরিণত হয় ৷ এখানেই শেষ নয় ৷ অভিযোগ ওই যুবককে দড়ি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শুরু হয় গণপিটুনি ৷ বাঁশ, লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারধর চলতে থাকে ৷ প্রাণ বাঁচাতে সকলের কাছে কাকুতি-মিনতি করেন তিনি ৷ কিন্তু, উন্মত্ত জনতার তখন যেন নীতি পুলিশের ভূমিকায় !
এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দুর্গাপুর-ফরিদপুর পুলিশের বাহিনী ৷ কিন্তু, পুলিশের সামনেই ওই যুবককে বেধড়ক মারধর করতে দেখা যায় ৷ পুলিশ বাধা দিলে, তাদের সঙ্গেও ধস্তাধ্বস্তি শুরু করে দেয় একদল লোকজন ৷ উন্মত্ত জনতাকে বাগে আনতে সেখানে আরও বাহিনী আনা হয় ৷ এরপর পুলিশি নিরাপত্তায় রক্তাক্ত যুবককে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করা হয় ৷
কিন্তু, সেখানেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷ পুলিশের থেকে ওই যুবককে ছিনিয়ে নিয়ে লাথি, ঘুসি চালাতে শুরু করে কয়েকজন ৷ পুলিশ বাধা দিতে গেলে, তাদের সঙ্গেও হাতাহাতি শুরু করে দেয় কিছু লোকজন ৷ এরপর বলপ্রয়োগ করে সেখান থেকে আহত ওই যুবককে উদ্ধার করা হয় ৷ ওই যুবককে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ৷ অণ্ডালের এসিপি পিন্টু সাহা বলেন, "আমাদের প্রাথমিক অনুমান ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ অণ্ডালের উখড়ার বাসিন্দা ৷ আমরা স্থানীয়দের হাত থেকে উদ্ধার করে ওই যুবককে ভর্তি করেছি দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতলে ৷ দু’জনকে আটক করা হয়েছে ৷ কেন এভাবে মারধর করা হল, সেই নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷"
রাজ্য সরকার এবং রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে বারংবার গণপিটুনি বন্ধের জন্য সচেতনতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে ৷ রাজ্যের প্রায় সর্বত্র বিভিন্ন উপায়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে ৷ কিন্তু, মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা ফেরেনি, ফের তার প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার দুপুরে ৷ পুলিশের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, ছবি দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷
(গণপিটুনি একটি সামাজিক ব্যাধি। আমরা জানি হিংসা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। কোনও গুজবে প্রভাবিত হবেন না। কোথাও কোনও সমস্যা হলে সরাসরি পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সুরক্ষিত থাকুন। সমাজকে সুরক্ষিত রাখার ভার আপনারও ৷)