ETV Bharat / state

বাংলা মাধ্যম হয়ে গেল উর্দু স্কুল ! সামান্য ভুলে স্কুল এখন পোড়োবাড়ি - Urdu school

School Controversy in Asansol: আসানসোলের কুলটির মিঠানী গ্রাম। প্রায় 34 বছর আগে বাম আমলে এই গ্রামে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে তৈরি হয় বালিকা বিদ্যালয়। গ্রামের শিক্ষাবিদরা পরিচালন কমিটি তৈরি করে, গ্রামেরই শিক্ষিত মহিলারা স্বল্পমূল্যে শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত একটি বালিকা বিদ্যালয় শুরু হয়। প্রথমে মিঠানী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনেই সকাল বেলা এই স্কুল চালানো হত।

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 17, 2024, 9:21 PM IST

সামান্য ভুলে স্কুল এখন পোড়োবাড়ি

আসানসোল, 17 ফেব্রুয়ারি: গ্রামের মানুষরা স্বপ্ন দেখেছিলেন গ্রামে একটি পৃথক বালিকা বিদ্যালয়ের। সেই মত গ্রামের মানুষেরাই জমি দান করেছিলেন। বাম আমলে সাংসদ কোটার টাকায় ভবনও তৈরি হয়। কিন্তু স্কুলের সরকারি অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রেই হয়ে গেল গেরো। বাংলা মাধ্যম স্কুলের জায়গায় অনুমোদনে এল উর্দু মাধ্যম। আর এই জটিলতায় স্কুল আর সরকারি স্কুল হিসেবে বাস্তবায়িত হল না। সেই ভবন এখন স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পোড়োবাড়ির মত।

আসানসোলের কুলটির মিঠানী গ্রাম। প্রায় 34 বছর আগে বাম আমলে এই গ্রামে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে তৈরি হয় বালিকা বিদ্যালয়। গ্রামের শিক্ষাবিদরা পরিচালন কমিটি তৈরি করে, গ্রামেরই শিক্ষিত মহিলারা স্বল্পমূল্যে শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত একটি বালিকা বিদ্যালয় শুরু হয়। প্রথমে মিঠানী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনেই সকাল বেলা এই স্কুল চালানো হত। শিক্ষা দফতরের অনুমতি সাপেক্ষে এই স্কুল চলত। অষ্টম শ্রেণীর পর নবম শ্রেণীতে ছাত্রীরা মিঠানী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হত এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিত।

মেয়েদের এই স্কুল কয়েকবছরে আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের কাছেও খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাই দাবি ওঠে পৃথক স্কুল ভবন তৈরি করে এই স্কুল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হোক। গ্রামের প্রবীণ মহিলা বিনোদিনী চট্টরাজ দুই বিঘার বেশি জমি দান করেন নতুন স্কুল ভবনের জন্য। সাংসদ, বিধায়ক ও স্থানীয় ইসিএলের-সিএসআরের ফান্ড নিয়ে নতুন বিল্ডিং তৈরি হয়ে নয়ের দশকে পঠন-পাঠন শুরু হয়। সেই সময় এসএসসি ছিল না। ফলে বামঘেঁষা শিক্ষাবিদরাই পরিচালন কমিটি তৈরি করে আপার প্রাইমারি স্কুল চালাতে থাকে। ছাত্রীদের দেওয়া অনুদানেই শিক্ষিকাদের স্বল্প বেতন দেওয়া হত। প্রথম জটিলতা তৈরি হয় রাজ্যে 97 সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন আসার পর।

ওই স্কুলের সরকারি অনুমোদনের চেষ্টা শুরু হলে বেঁকে বসেন তৎকালীন স্কুলে স্বল্প বেতনে চাকরি করা শিক্ষিকারা। কারণ এসএসসি হওয়ায় স্কুলে সরকারি ভাবে নিয়োগ হবে। ফলে চাকরি হারাবেন দীর্ঘদিন ধরে স্কুল চালিয়ে আসা এই শিক্ষিকারা। শুরু হয় রাজনীতি। শিক্ষিকারা তৃণমূল শিবিরে যান। বাম পরিচালন কমিটির সঙ্গে তীব্র দ্বন্দ্বে বন্ধ হয়ে যায় পঠন-পাঠন। ছাত্রীরা মিঠানী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। চাপ বাড়ে ওই স্কুলের উপর। সবাই চান পৃথক আপার প্রাইমারী বালিকা বিদ্যালয়টি চালু হোক। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েনে তা হয়নি। রাজ্যে পরিবর্তন হয়। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক চেষ্টা করতে থাকেন স্কুলের অনুমোদনের জন্য।

2019 সালে জেলায় 15টি নতুন স্কুলের অনুমোদন দেওয়া হয় রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে। তাতে মিঠানীর ওই গার্লস আপার প্রাইমারি স্কুলও ছিল। কিন্তু অনুমোদন পত্রে এল উর্দু মাধ্যম। তৃণমূলের দাবি সেটা 'প্রিন্টিং মিস্টেক'। এলাকায় কোনও উর্দুভাষী ছাত্রী না-থাকায় অনুমোদনটি পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু আর ঠিক হয়ে আসেনি। এরপর অথৈ জলে সেই স্কুল। ভবন হয়েছে পোড়োবাড়ি। মিঠানী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংশুক মুখোপাধ্যায় বলেন, "গার্লস স্কুলটি হলে আমাদের স্কুলের উপর চাপ কমত। ছাত্র-শিক্ষকের সঠিক অনুপাত থাকত। ফলে পঠন পাঠন ভালো হত।"
গার্লস স্কুলের তৎকালীন পরিচালন কমিটির সম্পাদক মানবেন্দ্র চট্টরাজ স্কুল চালু না-হওয়ার পিছনে তৃণমূলকেই অবশ্য দায়ী করেছেন।

যদিও তৃণমূল নেতা মোহন ধীবর বলেন, "আমরা লেগে আছি। সব দফতরে গিয়েছি। কেন এই সামান্য ভুল সংশোধন করে চালু হচ্ছে না, তা বুঝতে পারছি না।" যারা জমি দান করেছিলেন সেই পরিবারের সদস্য সুখেন্দু চট্টরাজ বলেন, "আমার মা মৃত্যুকাল পর্যন্ত চেয়েছেন স্কুলটি চালু হোক। আমি সরকারী দফতরে প্রায় যাচ্ছি। স্কুল চালু করবই।" বর্তমান জেলা স্কুল পরিদর্শক সুনীতি সাপুই বলেন, "ক্যামেরার সামনে কিছু বলব না। তবে আমি সমস্ত কাগজপত্র ফের বিবেচনার জন্য রাজ্য শিক্ষা দফতর অর্থাৎ বিকাশ ভবনে পাঠিয়েছি। এখনও পর্যন্ত কোনও আপডেট মেলেনি।" অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলাশাসক এস পোন্নামবালাম জানান, তিনি নতুন এসেছেন সুতরাং বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করবেন।

আরও পড়ুন:

  1. সিংহীর নাম 'সীতা' কেন, আপত্তি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ
  2. কোষাগারে টান, কলকাতা পৌরনিগমের বাজেটে কাটছাঁটের আশঙ্কা

সামান্য ভুলে স্কুল এখন পোড়োবাড়ি

আসানসোল, 17 ফেব্রুয়ারি: গ্রামের মানুষরা স্বপ্ন দেখেছিলেন গ্রামে একটি পৃথক বালিকা বিদ্যালয়ের। সেই মত গ্রামের মানুষেরাই জমি দান করেছিলেন। বাম আমলে সাংসদ কোটার টাকায় ভবনও তৈরি হয়। কিন্তু স্কুলের সরকারি অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রেই হয়ে গেল গেরো। বাংলা মাধ্যম স্কুলের জায়গায় অনুমোদনে এল উর্দু মাধ্যম। আর এই জটিলতায় স্কুল আর সরকারি স্কুল হিসেবে বাস্তবায়িত হল না। সেই ভবন এখন স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পোড়োবাড়ির মত।

আসানসোলের কুলটির মিঠানী গ্রাম। প্রায় 34 বছর আগে বাম আমলে এই গ্রামে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে তৈরি হয় বালিকা বিদ্যালয়। গ্রামের শিক্ষাবিদরা পরিচালন কমিটি তৈরি করে, গ্রামেরই শিক্ষিত মহিলারা স্বল্পমূল্যে শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত একটি বালিকা বিদ্যালয় শুরু হয়। প্রথমে মিঠানী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনেই সকাল বেলা এই স্কুল চালানো হত। শিক্ষা দফতরের অনুমতি সাপেক্ষে এই স্কুল চলত। অষ্টম শ্রেণীর পর নবম শ্রেণীতে ছাত্রীরা মিঠানী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হত এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিত।

মেয়েদের এই স্কুল কয়েকবছরে আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের কাছেও খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাই দাবি ওঠে পৃথক স্কুল ভবন তৈরি করে এই স্কুল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হোক। গ্রামের প্রবীণ মহিলা বিনোদিনী চট্টরাজ দুই বিঘার বেশি জমি দান করেন নতুন স্কুল ভবনের জন্য। সাংসদ, বিধায়ক ও স্থানীয় ইসিএলের-সিএসআরের ফান্ড নিয়ে নতুন বিল্ডিং তৈরি হয়ে নয়ের দশকে পঠন-পাঠন শুরু হয়। সেই সময় এসএসসি ছিল না। ফলে বামঘেঁষা শিক্ষাবিদরাই পরিচালন কমিটি তৈরি করে আপার প্রাইমারি স্কুল চালাতে থাকে। ছাত্রীদের দেওয়া অনুদানেই শিক্ষিকাদের স্বল্প বেতন দেওয়া হত। প্রথম জটিলতা তৈরি হয় রাজ্যে 97 সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন আসার পর।

ওই স্কুলের সরকারি অনুমোদনের চেষ্টা শুরু হলে বেঁকে বসেন তৎকালীন স্কুলে স্বল্প বেতনে চাকরি করা শিক্ষিকারা। কারণ এসএসসি হওয়ায় স্কুলে সরকারি ভাবে নিয়োগ হবে। ফলে চাকরি হারাবেন দীর্ঘদিন ধরে স্কুল চালিয়ে আসা এই শিক্ষিকারা। শুরু হয় রাজনীতি। শিক্ষিকারা তৃণমূল শিবিরে যান। বাম পরিচালন কমিটির সঙ্গে তীব্র দ্বন্দ্বে বন্ধ হয়ে যায় পঠন-পাঠন। ছাত্রীরা মিঠানী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। চাপ বাড়ে ওই স্কুলের উপর। সবাই চান পৃথক আপার প্রাইমারী বালিকা বিদ্যালয়টি চালু হোক। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েনে তা হয়নি। রাজ্যে পরিবর্তন হয়। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক চেষ্টা করতে থাকেন স্কুলের অনুমোদনের জন্য।

2019 সালে জেলায় 15টি নতুন স্কুলের অনুমোদন দেওয়া হয় রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে। তাতে মিঠানীর ওই গার্লস আপার প্রাইমারি স্কুলও ছিল। কিন্তু অনুমোদন পত্রে এল উর্দু মাধ্যম। তৃণমূলের দাবি সেটা 'প্রিন্টিং মিস্টেক'। এলাকায় কোনও উর্দুভাষী ছাত্রী না-থাকায় অনুমোদনটি পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু আর ঠিক হয়ে আসেনি। এরপর অথৈ জলে সেই স্কুল। ভবন হয়েছে পোড়োবাড়ি। মিঠানী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংশুক মুখোপাধ্যায় বলেন, "গার্লস স্কুলটি হলে আমাদের স্কুলের উপর চাপ কমত। ছাত্র-শিক্ষকের সঠিক অনুপাত থাকত। ফলে পঠন পাঠন ভালো হত।"
গার্লস স্কুলের তৎকালীন পরিচালন কমিটির সম্পাদক মানবেন্দ্র চট্টরাজ স্কুল চালু না-হওয়ার পিছনে তৃণমূলকেই অবশ্য দায়ী করেছেন।

যদিও তৃণমূল নেতা মোহন ধীবর বলেন, "আমরা লেগে আছি। সব দফতরে গিয়েছি। কেন এই সামান্য ভুল সংশোধন করে চালু হচ্ছে না, তা বুঝতে পারছি না।" যারা জমি দান করেছিলেন সেই পরিবারের সদস্য সুখেন্দু চট্টরাজ বলেন, "আমার মা মৃত্যুকাল পর্যন্ত চেয়েছেন স্কুলটি চালু হোক। আমি সরকারী দফতরে প্রায় যাচ্ছি। স্কুল চালু করবই।" বর্তমান জেলা স্কুল পরিদর্শক সুনীতি সাপুই বলেন, "ক্যামেরার সামনে কিছু বলব না। তবে আমি সমস্ত কাগজপত্র ফের বিবেচনার জন্য রাজ্য শিক্ষা দফতর অর্থাৎ বিকাশ ভবনে পাঠিয়েছি। এখনও পর্যন্ত কোনও আপডেট মেলেনি।" অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলাশাসক এস পোন্নামবালাম জানান, তিনি নতুন এসেছেন সুতরাং বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করবেন।

আরও পড়ুন:

  1. সিংহীর নাম 'সীতা' কেন, আপত্তি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ
  2. কোষাগারে টান, কলকাতা পৌরনিগমের বাজেটে কাটছাঁটের আশঙ্কা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.