রায়গঞ্জ, 1 ডিসেম্বর: অশান্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতি ৷ তাঁর আচ পড়ল এপার বাংলায় ৷ উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদের চৈনগর সীমান্তে এ বছর বন্ধ রইল মিলন মেলা । ইতিমধ্যে বিএসএফ এবং ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে তা প্রচার করা হচ্ছে ৷ মেলা না হওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত এলাকাবাসীদের জানানো শুরু হয়েছে ।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদের চৈনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মালন এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মিলন মেলা আয়োজিত হয় । মূলত, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন এবং বিএসএফের তত্ত্বাবধানে এই মেলা হয়ে থাকে । তবে এ বছর বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতির কারণে এই মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসএফ ও ব্লক প্রশাসন ।
এমনকি বিএসএফ থেকে ওই এলাকায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 176 ধারা জারির অনুমতি চাওয়া হয়েছিল জেলা প্রশাসনের কাছে । সেটি মঞ্জুর করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ।
রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক কিংশুক মাইতি বলেন, "বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক নেই । তাই বিএসএফের তরফে মেলার জমায়েত রুখতে আবেদন জানানো হয়েছিল । তাই 176 ধারা জারি করা হয়েছে । কাঁটাতার সংলগ্ন এলাকায় যাতে কোনও জমায়েত না হয় তা দেখতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে ।"
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় এপার-ওপার এক ছিল । এই স্মৃতি আঁকড়ে ধরে প্রতি বছর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হেমতাবাদের চৈনগর পঞ্চায়েতের মালন এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বসে মিলন মেলা । বাংলাদেশের শতাব্দী প্রাচীন কালীপুজোকে কেন্দ্র করে কাঁটাতার মাঝে রেখে দু'দেশের মানুষ মিলিত হন । এবছর সেই মেলা হওয়ার কথা ছিল 6 ডিসেম্বর । কিন্তু বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতির কারণে এই বছর মেলা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন ।
হেমতাবাদের চৈনগর-সহ আশপাশের এলাকায় মাইকিং করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত জানানো হচ্ছে । প্রতি বছর ডিসেম্বরে দুই দেশের মানুষ কিছু সময়ের জন্য কাঁটাতারের দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে মিলন মেলায় শামিল হন । দুই প্রান্ত থেকে উপহার ছুড়ে দেওয়া হয় । কিন্তু এ বছর পুরোপুরি বন্ধ রাখা হচ্ছে মিলন মেলা । সীমান্তে বিএসএফের নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি কাঁটাতার সংলগ্ন এলাকায় টহল দেবে হেমতাবাদ থানার পুলিশ । মেলা বন্ধের খবরে মন খারাপ গ্রামবাসীদের ৷
স্থানীয় বাসিন্দা তপনকুমার দাস বলেন, "একসময় এখানে কাঁটাতারের বেড়া ছিল না, তখন দুই বাংলার মানুষ একসঙ্গে মিলিত হতে পারতাম । কাঁটাতার হওয়ার পর আমরা বছরে একটা দিন একে অপরের সঙ্গে দেখা করতাম এই মেলার মধ্যে দিয়ে । নিজেদের আত্মার সন্তুষ্টি হত । কিন্তু বাংলাদেশে যে অরাজকতা চলছে, সে কারণে প্রশাসন থেকে মাইকিং করে এই মেলা বন্ধ রাখার কথা বলেছে । মন খারাপ হলেও প্রশাসনের নির্দেশ মানতে হবে, কারণ বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতি ।"
অপর এক গ্রামবাসী মুজিবুর রহমান বলেন, "বাংলাদেশে আমার এক পিসি আছে । বছরের একটা দিন এই মেলায় আমাদের দেখা হত । তবে এ বছর বাংলাদেশের অশান্তির কারণে এই মেলা বন্ধ রয়েছে । বাংলাদেশ যেন শান্ত হয় এটাই চাই ।" গ্রামবাসী উত্তম বর্মনের কথায়, "এ বছর মেলা বন্ধ থাকায় মনটা খারাপ লাগছে ঠিকই, তবে প্রশাসন যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তেই নিয়েছে ৷ বাংলাদেশের যা অশান্তির খবর পাচ্ছি সেটা সত্যিই চিন্তার ।"
এই ঘটনায় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ঊষারানি বর্মন জানিয়েছেন, "এবছর মেলা হচ্ছে না । বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে প্রশাসনের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে । এ বছর এই মেলা বন্ধ থাকায় মন ভারাক্রান্ত সকলেরই ।"