ETV Bharat / state

মালদায় ভিনরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিককে গণপিটুনি ! গ্রেফতার 1

পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রীকেও মারধরের অভিযোগ ৷ মাখনা ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর টাকা-পয়সা সংক্রান্ত সমস্যার জেরে হামলা বলে দাবি ৷

MIGRANT WORKER BEATEN
প্রতীকী ছবি ৷ (ইটিভি ভারত গ্রাফিক্স)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 29, 2024, 7:07 PM IST

মালদা, 29 অক্টোবর: এবার ভিনরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলায় গণপিটুনির অভিযোগ ৷ সোমবার রাতে মালদার হরিশচন্দ্রপুরের সিংপাড়া গ্রামে বিহারের দ্বারভাঙার বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় ৷ তাঁর স্ত্রীকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে ৷ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিক পূর্ণিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৷ পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে ৷

জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি বেশ কয়েকবছর ধরে হরিশচন্দ্রপুরের মাখনা ফরিতে (ফরি হল, যেখানে মাখনা ফল থেকে খই তৈরি করা হয়) কাজ করেন ৷ বছরের বেশিরভাগ সময় হরিশচন্দ্রপুরেই থাকেন ৷ তাঁর সহকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় কয়েকজন মাখনা ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর টাকা-পয়সা সংক্রান্ত সমস্যা চলছিল ৷ গতকাল রাতে বাঁটুল, রহমান, রবিউল, সাবির-সহ বেশ কয়েকজন ফরিতে আসেন ৷ তাঁরা ওই পরিযায়ী শ্রমিককে ভাড়া বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ৷ সেই সময় তাঁর স্ত্রী বাধা দিলে তাঁকেও অপহরণের চেষ্টা করেন অভিযুক্তরা ৷

অভিযোগ, পরিযায়ী শ্রমিককে ভাড়া বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় ৷ বাধা দিতে গেলে তাঁর স্ত্রীকেও মারা হয় বলে অভিযোগ ৷ পরে রক্তাক্ত অবস্থায় পরিযায়ী শ্রমিককে সেখানে ফেলে রেখে চলে যায় হামলাকারীরা ৷ খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যায় হরিশচন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷ তাঁরাই আহত পরিযায়ী শ্রমিককে প্রথমে স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ সেখান থেকে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ৷ পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে, চিকিৎসক তাঁকে পূর্ণিয়ায় রেফার করে দেন ৷ মঙ্গলবার ভোরে তাঁকে পূর্ণিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷

এই ঘটনা নিয়ে বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া বলেন, “গতকাল রাতে সিংপাড়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক ৷ এখানে ভিনরাজ্য থেকে বহু মানুষ কাজ করতে আসেন ৷ এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয় ৷ আসলে শাসকদলের নেতাদের উস্কানিমূলক কথাবার্তার জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে ৷ কিছুদিন আগে শাসকদলের জেলা সভাপতি এখানে বলেছিলেন, বিজেপি কর্মীদের পেটাবেন ৷ কিন্তু এরা কি বিজেপি কর্মী ? আসলে এরা বিহার থেকে কাজে আসায় এদের মারধর করা হয়েছে ৷ প্রশাসন যেন এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ৷ আর তৃণমূল নেতাদের বলব, কখনও উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলবেন না ৷”

আইএনটিটিইউসি-র ব্লক সভাপতি সাহেব দাসের বক্তব্য, “এমন ঘটনা সত্যিই অনভিপ্রেত ৷ খবর পেয়ে গতকাল আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম ৷ যা ঘটেছে, তা চোখে দেখা যায় না ৷ বাংলায় সবাই শান্তিতে বসবাস করে ৷ সেখানে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না ৷ পুলিশকে বলব, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ করা হোক ৷ তবে, হরিশচন্দ্রপুর থানার পুলিশ তৎপর রয়েছে ৷”

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, “এই ঘটনায় আপাতত এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ ধৃতের নাম বাঁটুল আলি ৷ বাকি অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন ৷ তাদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে ৷”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে বাংলা তথা মালদার পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে ৷ তারই মধ্যে কিছুদিন আগে হরিশচন্দ্রপুর থানার লক্ষ্মণপুর গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক মতি আলি রাজস্থানে কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন ৷ তাঁকে খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন পরিবারের সদস্যরা ৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ মালদা জেলার তৃণমূলের সভাপতি আবদুর রহিম বকসি হরিশচন্দ্রপুরে মিছিল করেছিলেন ৷

অভিযোগ, সেদিন তিনি বলেছিলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের খুঁজে খুঁজে মারা হচ্ছে ৷ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে যদি বাঙালিদের উপর অত্যাচার বন্ধ না-হয়, তবে এ-রাজ্যেও বিজেপি লোকজনদের মারা হবে ৷

(গণপিটুনি একটি সামাজিক ব্যাধি। আমরা জানি হিংসা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। কোনও গুজবে প্রভাবিত হবেন না। কোথাও কোনও সমস্যা হলে সরাসরি পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সুরক্ষিত থাকুন। সমাজকে সুরক্ষিত রাখার ভার আপনারও ৷)

মালদা, 29 অক্টোবর: এবার ভিনরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলায় গণপিটুনির অভিযোগ ৷ সোমবার রাতে মালদার হরিশচন্দ্রপুরের সিংপাড়া গ্রামে বিহারের দ্বারভাঙার বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় ৷ তাঁর স্ত্রীকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে ৷ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিক পূর্ণিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৷ পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে ৷

জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি বেশ কয়েকবছর ধরে হরিশচন্দ্রপুরের মাখনা ফরিতে (ফরি হল, যেখানে মাখনা ফল থেকে খই তৈরি করা হয়) কাজ করেন ৷ বছরের বেশিরভাগ সময় হরিশচন্দ্রপুরেই থাকেন ৷ তাঁর সহকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় কয়েকজন মাখনা ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর টাকা-পয়সা সংক্রান্ত সমস্যা চলছিল ৷ গতকাল রাতে বাঁটুল, রহমান, রবিউল, সাবির-সহ বেশ কয়েকজন ফরিতে আসেন ৷ তাঁরা ওই পরিযায়ী শ্রমিককে ভাড়া বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ৷ সেই সময় তাঁর স্ত্রী বাধা দিলে তাঁকেও অপহরণের চেষ্টা করেন অভিযুক্তরা ৷

অভিযোগ, পরিযায়ী শ্রমিককে ভাড়া বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় ৷ বাধা দিতে গেলে তাঁর স্ত্রীকেও মারা হয় বলে অভিযোগ ৷ পরে রক্তাক্ত অবস্থায় পরিযায়ী শ্রমিককে সেখানে ফেলে রেখে চলে যায় হামলাকারীরা ৷ খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যায় হরিশচন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷ তাঁরাই আহত পরিযায়ী শ্রমিককে প্রথমে স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ সেখান থেকে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ৷ পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে, চিকিৎসক তাঁকে পূর্ণিয়ায় রেফার করে দেন ৷ মঙ্গলবার ভোরে তাঁকে পূর্ণিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷

এই ঘটনা নিয়ে বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া বলেন, “গতকাল রাতে সিংপাড়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক ৷ এখানে ভিনরাজ্য থেকে বহু মানুষ কাজ করতে আসেন ৷ এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয় ৷ আসলে শাসকদলের নেতাদের উস্কানিমূলক কথাবার্তার জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে ৷ কিছুদিন আগে শাসকদলের জেলা সভাপতি এখানে বলেছিলেন, বিজেপি কর্মীদের পেটাবেন ৷ কিন্তু এরা কি বিজেপি কর্মী ? আসলে এরা বিহার থেকে কাজে আসায় এদের মারধর করা হয়েছে ৷ প্রশাসন যেন এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ৷ আর তৃণমূল নেতাদের বলব, কখনও উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলবেন না ৷”

আইএনটিটিইউসি-র ব্লক সভাপতি সাহেব দাসের বক্তব্য, “এমন ঘটনা সত্যিই অনভিপ্রেত ৷ খবর পেয়ে গতকাল আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম ৷ যা ঘটেছে, তা চোখে দেখা যায় না ৷ বাংলায় সবাই শান্তিতে বসবাস করে ৷ সেখানে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না ৷ পুলিশকে বলব, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ করা হোক ৷ তবে, হরিশচন্দ্রপুর থানার পুলিশ তৎপর রয়েছে ৷”

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, “এই ঘটনায় আপাতত এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ ধৃতের নাম বাঁটুল আলি ৷ বাকি অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন ৷ তাদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে ৷”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে বাংলা তথা মালদার পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে ৷ তারই মধ্যে কিছুদিন আগে হরিশচন্দ্রপুর থানার লক্ষ্মণপুর গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক মতি আলি রাজস্থানে কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন ৷ তাঁকে খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন পরিবারের সদস্যরা ৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ মালদা জেলার তৃণমূলের সভাপতি আবদুর রহিম বকসি হরিশচন্দ্রপুরে মিছিল করেছিলেন ৷

অভিযোগ, সেদিন তিনি বলেছিলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের খুঁজে খুঁজে মারা হচ্ছে ৷ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে যদি বাঙালিদের উপর অত্যাচার বন্ধ না-হয়, তবে এ-রাজ্যেও বিজেপি লোকজনদের মারা হবে ৷

(গণপিটুনি একটি সামাজিক ব্যাধি। আমরা জানি হিংসা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। কোনও গুজবে প্রভাবিত হবেন না। কোথাও কোনও সমস্যা হলে সরাসরি পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সুরক্ষিত থাকুন। সমাজকে সুরক্ষিত রাখার ভার আপনারও ৷)

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.