মেদিনীপুর, 13 এপ্রিল: 2011 সালে রাজ্যে পালাবদলের পর মেদিনীপুর লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায় বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন । কিন্তু 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে সেই সন্ধ্যা রায়কে সরিয়ে মেদিনীপুর লোকসভার জন্য তৃণমূল প্রার্থী করে সবংয়ের ভূমিপুত্র মানসরঞ্জন ভুইয়াঁকে । তাঁর বিপরীতে বিজেপির প্রার্থী হয়ে দাঁড়ান দিলীপ ঘোষ । প্রায় লাখ খানেক ভোটে লিড দিয়ে মেদিনীপুরের লোকসভা আসন দখল করে বিজেপি । গত পাঁচ বছরে এলাকায় কী কী কাজ করেছেন দিলীপ ঘোষ ? কোন কাজ বাকি থেকে গিয়েছে ? একনজরে দেখে নেব মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদের রিপোর্ট কার্ড ৷
মেদিনীপুরের সাতটি বিধানসভা হল মেদিনীপুর, খড়গপুর গ্রামীণ, খড়গপুর টাউন, কেশিয়াড়ি, দাঁতন, নারায়ণগড় এবং এগরা । এগুলির মধ্যে এগরা বিধানসভা পড়ছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় । যদিও 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে সব ক'টি বিধানসভায় বিজেপি 10 থেকে 12 হাজার ভোটের লিড দিয়েছে । এই কেন্দ্রের মানুষ দু'হাত ভরে দিলীপ ঘোষকে আশীর্বাদ করলেও 2024-এর লোকসভা নির্বাচনে জেতা সিট থেকে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে এখানে আসানসোলের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে প্রার্থী করেছে বিজেপি । তাঁর ভাগ্য যদিও নির্ভর করছে তাঁর পূর্বসূরীর উপর ৷ গত পাঁচ বছরে দিলীপ ঘোষের কাজের খতিয়ানই ঠিক করে দেবে আসন্ন লোকসভা ভোটে প্রার্থীর ভাগ্য ৷ গত পাঁচ বছরে এলাকায় উন্নয়নের জন্য সাংসদ তহবিলের প্রায় 17 কোটি টাকা পেয়েছেন দিলীপ ঘোষ ৷ দেখে নেব তাঁর কাজের হিসেব-নিকেশ ৷
এলাকায় কী কী কাজ হয়েছে ?
1. সাবমারসিবল বসানোর কাজে খরচ প্রায় দেড় কোটি টাকা
2. এলাকায় এলাকায় লাইট লাগানোর কাজে খরচ প্রায় এক কোটি 2 লক্ষ 75 হাজার টাকা
3. রাস্তার কাজে খরচ প্রায় 7 কোটি 77 লক্ষ টাকা
4. নর্দমার কাজে খরচ প্রায় 1 কোটি 45 লক্ষ 59 হাজার টাকা
5. পুকুরে সীমানা প্রাচীর দেওয়া ক্ষেত্রে প্রায় 34 লক্ষ টাকা
6. এলাকায় পাকাপোক্ত সেতুর জন্য 1, 22, 34, 604 টাকা
7. কালভার্টের জন্য প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা
8. বিদ্যালয় নির্মাণে খরচ 2 কোটি 77 লক্ষ টাকা
9. এলাকায় এলাকায় স্নানঘাটের জন্য খরচ 5 লক্ষ টাকা
10. গোশালার জন্য খরচ 18 লক্ষ টাকা
11. যাত্রী বিশ্রামাগারের খরচ জন্য 36 লক্ষ টাকা
12. শৌচালয়ের জন্য খরচ প্রায় 10 লক্ষ 65 হাজার টাকা
13. সংসদ এলাকায় মাছ বাজারের জন্য খরচ 4 লক্ষ টাকা
14. বিভিন্ন জায়গায় শ্মশান ঘাটের জন্য খরচ 2.5 লক্ষ টাকা
15. সয়েল টেস্ট ল্যাবরেটরির জন্য 29 লক্ষ টাকা
16. সাংসদের তত্ত্বাবধানে ফুট ওভারব্রিজ, কাঁসায় ব্রিজ, বেলদা শহরে রেলের দুটো ফ্লাইওভার, খড়গপুরের আন্ডারপাস-সহ একাধিক ব্রিজ তৈরি মতো রেলের কাজও হয়েছে ৷
দিলীপ ঘোষ খড়গপুরে রেলের বিভিন্ন উন্নয়নকল্পে আবেদন করেছেন, চিঠি লিখেছেন । তবে দিলীপ ঘোষকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে তাঁর এলাকার মানুষের মধ্যে ৷ অনেকে বলছেন, শুধু মর্নিং ওয়ার্ক ও চা চক্র ছাড়া কাজের কাজ কিছুই করেননি তিনি । আবার কারও কথায়, তিনি অনেক কাজ করেছেন এবং তিনি বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী যাঁর বিরুদ্ধে দলের কোনও অভিযোগ নেই ।
যে কাজ করা হয়নি
1. 100 গ্রামের মধ্যে জলের ব্যবস্থা করে দেওয়া
2. 500 সোলার লাইট প্রতিস্থাপন করে আদিবাসী, অনগ্রসর গ্রামগুলিকে আলো দেওয়া
3. জঙ্গলমহল অধ্যুষিত 20 স্কুলে স্মার্ট ক্লাসরুম
4. জঙ্গলমহলের অনগ্রসর স্কুলগুলিতে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা
5. হেলথ এটিএম হাসপাতালে প্রতিস্থাপন করা
যদিও এই নিয়ে মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমাকে তো প্রথমে দু-আড়াই বছর ওরা কাজ করতে দেয়নি । তবে বাকি কয়েক বছরে অনেক কাজ করে দিয়েছি । প্রায় 17 কোটি টাকার হিসেব দিয়েছি আমি । তবে অনেক কাজ অর্ধেক রয়ে গিয়েছে । 100 গ্রামকে জল দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করেছিলাম সাবমারসিবলের মাধ্যমে ট্যাপ লাগিয়ে । এর সঙ্গে প্রায় 500 সোলার লাইট গ্রামে গ্রামে লাগানোর ব্যবস্থা করেছি ৷ সেগুলোর মধ্যে প্রায় আড়াইশো হয়ে গিয়েছে । তবে দিলীপ ঘোষ এও বলেন, বাকি কাজগুলিও হয়ে যাবে । যে কাজগুলি করা সম্ভব হয়নি, তার জন্য আড়াই বছরের কোভিডকালকেই দায়ী করেছেন সাংসদ ৷
মেদিনীপুরে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী জুন মালিয়া ৷ দিলীপের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তাঁকে ভালো মানুষ বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি ৷ তবে এলাকায় কাজ কী হয়েছে, তা মানুষই জানে বলে কটাক্ষ করেছেন জুন ৷
আর বামেদের দাবি, কাজ কিছুই হয়নি । সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলেন, "না রাজ্য, না কেন্দ্র, কেউই কাজ করেনি । আমাদের সাংসদ থাকাকালীন তাঁরা তাঁদের সাংসদ কোটা থেকে স্কুল, জলের ব্যবস্থা এসব করতেন ৷ এখনকার সাংসদরা তার কিছুই করেন না । শিক্ষার উন্নতির জন্য তাঁরা কোনও কাজই করেননি ।" তাঁর আরও অভিযোগ, পুলিশ সমাজ বিরোধীদের সঙ্গে শাসকদলের যৌথ প্রচেষ্টায় যে পদ্ধতিতে জেতা দরকার সেই পদ্ধতিতে জিতেছে । গণতন্ত্র বলে রাজ্যে কিছু নেই ।
আরও পড়ুন: