জলপাইগুড়ি, 28 সেপ্টেম্বর: সাজার মেয়াদ শেষের পরও জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি বহু বাংলাদেশের নাগরিক । আইনি জটিলতার কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না তাঁরা । ওইসব প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ । বন্দিরা দেশের নাগরিক তা বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রমাণ করানোটাই মূল সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন ।
রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই । তবে বড় সমস্যা হল বাংলাদেশের মহিলারা দেশে ফিরতে পারছেন না । বেশ কিছু মহিলা রয়েছেন, যাঁরা সাজা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আইনানুগ কারণে বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না । আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব । যাতে করে তাঁরা তাঁদের দেশের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে ।"
জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে 51 জন বাংলাদেশি বন্দি রয়েছেন যাদের সাজা শেষ হয়ে গিয়েছে । কিন্তু তাঁরা দেশে ফিরতে পারছেন না । বন্দিরের মধ্যে 42 জন পুরুষ, 7 জন মহিলা ও দুটি বাচ্চা রয়েছে । প্রতিবছর গড়ে 10 থেকে 20 জন বাংলাদেশের নাগরিক বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করতে গিয়ে বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে । সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে 80 জন বাংলাদেশের নাগরিক রয়েছে । যার মধ্যে ওই 51 জনের সাজা শেষ হয়ে গিয়েছে ।
সাজা শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে নিজেদের হেফাজতে রেখে স্পেশাল কেয়ার নিতে হয় সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে । যতক্ষণ না তাঁরা দেশে ফিরছেন, তাঁদের অতিথি হিসেবেই রাখতে হয় । যাঁদের সাজা শেষ হয়ে যায়, তাঁদের বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পাঠানো হয় ৷ তারপর দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় । কিন্তু বহরমপুর সংশোধনাগারে পাঠাতে পুলিশি পাহারা ও গাড়ির সমস্যার কারণেও ওইসব বন্দিদের সেখানে পাঠানো যায় না বলে অভিযোগ জেলের তরফে । এ দিকে জানা গিয়েছে, গত জুন মাসে জলপাইগুড়ি থেকে বহরমপুরে সাজা শেষ হয়ে যাওয়া বন্দিদের নিয়ে গাড়ি গিয়েছে । তারপর আর যায়নি ।
জলপাইগুড়ি জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনেকে সময় নাগরিকরা বেআইনিভাবে এ দেশে প্রবেশ করে ৷ তাদের গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয় । এরপর তাদের ঠাঁই হয় জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে । কিন্তু বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশের সাজা কয়েক বছরের মধ্যে শেষ হলেও তাদের দেশে ফেরানোটা কষ্টকর হয়ে পড়ে । তার কারণ প্রতিবেশী দেশের ওইসব নাগরিকদের কাছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের নাগরিকত্বের কোনও বৈধ নথি পাওয়া যায় না । ফলে তারা যে বাংলাদেশের নাগরিক, তা প্রমাণ করাটাই সমস্যার হয়ে পড়ে । অভিযোগ, বাংলাদেশের হাইকমিশনকে বিষয়টা জানালেও সেক্ষেত্রেও তারা গড়িমসি করে । ফলে তাদের দেশের নাগরিকদের ফেরাতে বছরের পর বছর লেগে যায় ।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিনের কথায়, "জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বেশ কিছু বাংলাদেশের নাগরিক সাজা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও দেশে ফিরতে পারেন না । অনেক সময় দেখা যায় তাঁদের নাগরিকত্বের প্রমাণ নেই । তাঁরা যে বাংলাদেশের নাগরিক সেটা প্রমাণ করার সমস্যার কারণেই অনেক সময় তাদের দেশে ফেরাতে সমস্যা হয় ।"
অন্যদিকে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপতের বক্তব্য ,"সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ চাইলেই পুলিশি পাহারা ও গাড়ি দেওয়া হয় । এটা নিয়মের মধ্যেই পড়ে । এমন কোনও বিষয় নেই পুলিশ দেওয়া হয় না । তারা যখন আমাদের জানান আমরা পাহারা দিয়ে থাকি । বিশেষ করে জলপাইগুড়ি থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের বহরমপুর পাঠানো হয়, সেখান থেকেই তাঁদের দেশে ফেরানো হয় ।’’