কলকাতা, 12 সেপ্টেম্বর: জামিন পেলন প্রাক্তন প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ৷ বৃহস্পতিবার তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ ৷ 2022 সালে 11 অক্টোবরে গ্রেফতার করা হয় তৎকালীন প্রাক্তন প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদের সভাপতিকে ৷ নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ককে গ্রেফতার করে ইডি ৷ প্রায় দু'বছর অর্থাৎ 23 মাস পর জামিন পেলেন তিনি ৷
শর্তস্বাপেক্ষে বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ আজ তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন ৷ জামিনের শর্ত হিসাবে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে ৷ তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা যাবে না ৷ তদন্তকারী অফিসারকে ফোন নম্বর দিতে হবে ৷ তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে ৷ নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে হবে ৷ নিম্ন আদালতের সীমানার বাইরে যেতে পারবেন না ৷ সিবিআইয়ের মামলায় আগেই তাঁকে রক্ষাকবচ দিয়ে রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ ফলে মানিক ভট্টাচার্যের জেল মুক্তি হতে চলেছে বলেই জানাচ্ছেন আইনজীবীরা । উল্লেখ্য, এর আগে মানিক ভট্টাচার্যের ছেলে শৌভিক ভট্টাচার্য ও স্ত্রী শতরুপা ভট্টাচার্য আগেই জামিন পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট থেকে।
2022 সালে পুজার সময় মানিক ভট্টাচার্যকে ওএমআর শিট দূর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল ইডি ৷ সেই মামলায় নিম্ন আদালতেও জামিনের আবেদন করার পাশাপাশি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মানিক ৷ কিন্তু জামিনের আবেদনে ত্রুটি থাকায় শীর্ষ আদালত তা সংশোধন করে হাইকোর্টে আবেদন করার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, কলকাতার নগর দায়রা আদালতে (বিশেষ সিবিআই আদালতে) একাধিক বার ইডি-র তদন্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মানিক ভট্টাচার্য। কিন্তু আগে তিনি ইডি-র তদন্তের নামে তাঁকে আটকে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন ৷ কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোন তথ্যপ্রমাণ পাচ্ছে না বলে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, "এ যেন ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির অঙ্কের মত প্রতিদিন দু'ফুট করে উঠছি আর এক ফুট করে নামছি।" আসলে তদন্তের নামে কিছুই হচ্ছে না। আর যখন নিম্ন আদালতে চার্জশিট দেওয়ার সময় আসছে, তখন ইডি বারবার করে তদন্তের নামে তাঁকে আটকে রাখছে বলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন।
প্রায় 10 বছর প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদের সভাপতি ছিলেন মানিক ভট্টাচার্য ৷ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির পাশাপাশি তদন্ত করেছে সিবিআইও। তবে সিবিআই মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করেনি। এই বিষয়ে আগেই সুপ্রিম কোর্টে রক্ষাকবচ পেয়েছেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন মানিক ৷ যদিও ইডি-র তরফে মানিক ভট্টাচার্যের জামিনের বিরোধিতা করে বলা হয় ওএময়ার শিট দূর্নীতিতে মানিক ভট্টাচার্য সরাসরি যুক্ত ৷ তিনি অন্যায়ভাবে বরাত পাইয়ে দিয়েছিলেন একটি সংস্থাকে ৷ পাশাপাশি, বিপুল আর্থিক দুর্নীতির ও সেই টাকায় বিদেশ ভ্রমণের যুক্তি উল্লেখ করেছিল ইডি ৷ বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর গত 29 অগাস্ট রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন।
তবে এদিন মানিক ভট্টাচার্যের জামিন পাওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চাকরি প্রার্থীদের আইনজীবীরা। তাঁদের মতে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডলদের জামিন পাওয়া এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা ৷ কারণ মুল অভিযুক্ত মানিক ভট্টাচার্যই জামিন পেয়ে গেলেন । ফলে তাঁদের পক্ষে জামিনের আবেদন জানানো অনেক সহজ হয়ে যাবে । ফলে সিবিআইয়ের তদন্তের আদৌ আক্রান্তরা ন্যায়বিচার পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলেও মনে করেন তাঁরা ৷
ইডি-র হেফাজত শেষ হওয়ার পর প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদের প্রাক্তন সভাপতি। বৃহস্পতিবার বিনা বন্ডেই তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। এর আগে শুনানি চলাকালীন আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক। শুনানিতে নিজেই সওয়াল করতে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখ করে কেঁদে ফেলেছিলেন মানিক। তিনি শীঘ্রই মারা যাবেন বলেও আদালতে উল্লেখ করে ছিলেন।